রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বন্ধ পাটকলগুলো দ্রুত চালুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দশেনা থাকা স্বত্বেও এখন পর্যন্ত কাজের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রক্রিয়া চলছে। তবে কবে নাগাদ এসব মিল পুনরায় চালু হবে তা নিশ্চিত নয়।
সরকারের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগ, অর্থাৎ পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) এসব পাটকল চালুর কথা থাকলেও আগের অবস্থান থেকে সরে আসছে সরকার।
এর কারণ, ব্যক্তি মালিকানায় যারা পাটকল কলগুলো কিনতে চান, তারা পিপিতে চালাতে আগ্রহী নন। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের আগ্রহ ইজারায়। যে কারণে আগের অবস্থান পরিবর্তন করে নতুন পদ্ধতির কথা ভাবছে সরকার।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পিপিতে পাটকল চালানোর অভিজ্ঞতা কারো নেই। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিয়েও সংশয় আছে। তাই তারা ৯৯ বছরের জন্য ইজারা চান।
বন্ধ পাটকল খুলে দেয়ার দাবিতে খুলনায় নিয়মিত বিক্ষোভ হচ্ছে। ছবি: সোহেল মাহমুদ
ব্যবসায়ীদের যুক্তি দীর্ঘমেয়াদে ইজারা হলে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মিলগুলো পুনরায় চালু করা যাবে। কম সময়ে ইজারা দেয়া হলে ব্যাংকের ঋণ পাওয়া কঠিন হবে।
বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশন (বিজেএমসি) বলেছে, কোন পদ্ধতিতে চালু করলে বন্ধ পাটকলগুলো টেকসই হবে, উদ্যোক্তাদের জন্য কোনটা ভালো হবে, এসব বিষয় কাজ করার জন্য পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীকে আহ্বায়ক করে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি যেসব সুপারিশ দেবে, তার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে এর আগে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতির জন্য সারসংক্ষেপ পাঠানো হবে।
পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী পর্যবেক্ষণ করেছন। তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।
কমিটির কাজ প্রায় শেষ। শিগগিরই প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
বিজেএমসির চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্ধ পাটকলগুলো কীভাবে চালু করা যায়, ভবিষৎ পরিকল্পনা কী হবে, এসব বিষয়ে কাজ করছে কমিটি।’
বিজেএমসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘উদ্যোক্তা যদি না পাওয়া যায়, কোনো কিছুই হবে না। সেজন্য এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে বন্ধ পাটকলগুলো চালু করতে উৎসাহিত হন।’
অতীতে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার পর সরকারি কলকারখানার জমি হাতছাড়া হয়ে গেছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে এবার পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান বিজেএমসি চেয়ারম্যান।
- আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে পাটকল শ্রমিকদের সমাবেশ
বেসরকারি পাটকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুট মিল অ্যাসোসিয়েশন- বিজেএমএর সভাপতি মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘পিপিপি জটিল প্রক্রিয়া। এতে অনেক সময় লাগবে। সেজন্য আমরা এটা চাই না। ইজারায় অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছেন। তবে তা হতে হবে দীর্ঘমেয়াদে।’
বিজেএমসির আওতায় পরিচালিত ২৫টি পাটকল চার দশকের বেশি সময় ধরে ধারাবাহিক লোকসান দিচ্ছে। অদক্ষ ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তির অভাব, দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাবসহ আরও নানা কারণ জড়িত।
বর্তমানে সংস্থাটির পুঞ্জীভূত লোকসান ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
বিশ্বব্যাংক এসব প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার জন্য সরকারকে দীর্ঘ সময় ধরে তাগাদা দিয়ে আসছে। কিন্তু রাজনৈতিক চাপের কারণে এতদিন মিলগুলো বন্ধ করা যায়নি।
অবশেষে সমঝোতার মাধ্যমে প্রায় ২৪ হাজার শ্রমিক-কর্মচারীকে গোল্ডেন হ্যান্ডসেক (স্বেচ্ছায় অবসর) দিয়ে গত ২ জুলাই পাটকলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
গত সপ্তাহে পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, নভেম্বরের মধ্যে শ্রমিকদের সমুদয় পাওনা পরিশোধ করা হবে।
১৯৭২ সালে ব্যক্তিমালিকানাধীন, পরিত্যক্ত ও সাবেক ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভলপমেন্ট করপোরেশনের ৭৬টি পাটকল নিয়ে গঠিত হয় বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি)।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের আমলে ৩৫টি পাটকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হয়। আটটি পাটকলের পুঁজি প্রত্যাহার করা হয়।
পরে বিশ্বব্যাংকের পাটখাত সংস্কার কর্মসূচির আওতায় ১১টি পাটকল বন্ধ ও একীভূত করা হয়। ২০০২ সালে বিএনপি সরকারের আমলে বন্ধ হয় দেশের সবচেয়ে বড় পাটকল আদমজী জুট মিল।