চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা।
এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে সরকার নিট ঋণ নিয়েছিল ৪ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা।
সেই হিসেবে আলোচ্য তিন মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক, ডাকঘর ও অন্যান্য সঞ্চয় অফিস থেকে মোট ২৭ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। এই সময়ে আগে বিক্রি করা সঞ্চয়পত্রের মূল ও মুনাফা বাবদ সরকার পরিশোধ করেছে ১৬ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। নিট ঋণ হয়েছে ১১ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা।
একটি নির্দিষ্ট সময়ে মোট বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্র থেকে আগে বিক্রি হওয়ার সঞ্চয়পত্রের মূল ও মুনাফা পরিশোধের পর সরকারের নিট ঋণ পাওয়া যায়।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংকের পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ঋণ নিয়ে থাকে। এই ঋণের সুদহার একটু বেশি বলে এ খাতে বিনিয়োগ গত কয়েক বছর ধরে বেশি। তবে গত বছর থেকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ পদ্ধতির ব্যবস্থাপনা অনলাইনে নিয়ে আসার পাশাপাশি উৎসে করা বাড়ানোর কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কিছুটা কমে গিয়েছিলো।
তবে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ব্যাংকের ঋণের সুদ এক অঙ্কে নামানেরা লক্ষ্যে আমানতের সুদের হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এর ফলে অনেকেই ব্যাংকে আমানত রাখতে উৎসাহ বোধ করছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের গবেষণা পরিচালক ড. জায়েদ বখত নিউজবাংলাকে বলেন, এ বছর এপ্রিলের পরে মেয়াদপূর্তি হয়েছে এমন অনেক আমানত হয়তো গ্রাহকরা তুলে নিয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন। যে কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়ছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়ায় ৪ হাজার ২০৭ কোটি টাকা। ওই মাসে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি ছিলো ১০ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা, যার থেকে ৬ হাজার ১৮০ কোটি টাকা ব্যয় হয় আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মূল ও মুনাফা বাবদ।
এর আগের মাস আগস্টে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ ছিলো ৩ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা এবং জুলাইয়ে নিট ঋণ ছিলো ৩ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বেশি করে ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া আগের ঋণ পরিশোধ করায় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ খুব একটা বাড়েনি। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।
এ দিকে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ বাড়তে থাকায় এ খাত থেকে সরকারের নিট ঋণের স্থিতি (স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত) দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের মহাপরিচালক শামছুন্নাহার বেগম জানান, বর্তমানে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়। যৌথ নামে বিনিয়োগ করা যায় ১ কোটি টাকা। পেনশনার সঞ্চয়পত্রকে এই বিনিয়োগসীমার বাইরে রাখা হয়েছে। সঞ্চয়পত্রের বিভিন্ন স্কিমে এখনো ১০ শতাংশের বেশি হারে মুনাফা দিচ্ছে সরকার। এ কারণে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে অনেকেই এ খাতে বিনিয়োগ করছেন।