কটেজ, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে (সিএমএসএমই) প্রণোদনার ঋণের প্রবাহ বাড়াতে পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ খাতের প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণের বরাদ্দ ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ফলে এখন থেকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই প্যাকেজের মোট বিতরণ করা ঋণের সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ সিএমএসএমই খাতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিতে পারবে। বাকি ৭০ শতাংশ ঋণ যাবে উৎপাদন ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানে।
আগে উৎপাদন খাতে ৫০ শতাংশ এবং সেবা খাতে ৩০ শতাংশ (মোট ৮০ শতাংশ) ঋণ দেওয়ার সুযোগ ছিল। এখন থেকে উৎপাদন ও সেবা খাতের বরাদ্দ আনুপাতিক হারে কমে আসবে বলে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
সিএমএসএমই খাতের সহায়তার জন্য গঠিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণে অগ্রগতি নেই– এমন অনুযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঋণ নীতিমালায় এই পরিবর্তন এনে বুধবার সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সিএমএসএমই খাতের মধ্যে অন্য দুটি উপখাত উৎপাদন ও সেবা উপখাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ঋণের বেশিরভাগ অংশ বরাদ্দ রাখা হলেও এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো তা নিতে সক্ষম হচ্ছিল না।
তবে ব্যবসা উপ-খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর সুযোগ আছে ঋণ নেওয়ার। মোট ঋণের মধ্যে এ উপ-খাতে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ ঋণ দেওয়ার নির্দেশনা থাকায় অনেক ব্যাংক এ উপ-খাতে ঋণ বাড়াতে পারছিল না। এ কারণে সিএমএসএমই খাতের প্রণোদনার ঋণ বিতরণও বাড়ছিল না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সিএমএসএমই-এর প্যাকেজ থেকে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। ব্যবসা খাতের প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ বরাদ্দের সীমা বাড়ানোর ফলে খুব দ্রুতই এ খাতের মোট ঋণ বিতরণ ৫ হাজার কোটি টাকা বাড়বে বলে আশা করছি।’
করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্রশিল্পকে বাঁচাতে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার জন্য গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক ২০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ গঠন করে।
এছাড়া বড় শিল্পের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ গঠন করা হয়। পরে ওই প্যাকেজে যোগ হয় আরো ৩ হাজার কোটি টাকা। তবে বড়শিল্পের ঋণের প্যাকেজ প্রায় শেষ। এ কারণে কিছুদিন ধরে দেশের ব্যবসায়ী নেতাদের ছোট শিল্পের ঋণ বিতরণে গতি আনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের তাগাদা দিতে দেখা যায়।
সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) বাংলাদেশের ক্ষুদ্র শিল্পের ক্ষয়ক্ষতির একটি জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরে। সেখানে বলা হয়, করোনায় ৬৪ শতাংশ ক্ষদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান আংশিক বন্ধ হয়েছে বা সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হয়েছে।
প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে আইএফসির কর্মকর্তারা ক্ষুদ্রশিল্পের ঋণ বাড়ানোর পরামর্শ দেন। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নির্বাহী পরিচালক আবু ফরাহ মো. নাসের জানান পরবর্তী সপ্তাহেই তারা ঋণের গতি বাড়াতে উদ্যোগ নেবেন। এর ফলে ঋণ বিতরণে বড় ধরনের অগ্রগতিও দেখা যাবে।