বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পূজায় ডেকোরেটর ব্যবসার দুর্দিন

  •    
  • ২৫ অক্টোবর, ২০২০ ০৯:২৪

মণ্ডপে এবার তোরণ নেই। আলোকসজ্জা নেই। মাইকে আরাধনার গান বাজছে না। বড় হাড়িতে নেই প্রসাদ রান্নার ঘ্রাণ। অনুষ্ঠানসজ্জা ব্যবসায়ীরা হতাশ।

করোনায় দুর্গোৎসবের কলেবর এবার ছোট করে এনেছেন আয়োজকরা। ভারী আলোকসজ্জা নেই। নেই তোরণ নির্মাণ বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। ছোট-বড় সব পূজামণ্ডপের ব্যয় এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। ফলে ব্যবসা কমে গেছে ডেকোরেটর ও সাউন্ড সিস্টেমসহ এই উৎসবের সঙ্গে জড়িত অনেকেরই।

সারা বছর এ রকম বড় উৎসবের দিকেই তাকিয়ে থাকেন অনুষ্ঠানসজ্জা বা ডেকোরেটর ব্যবসায়ীরা।

তারা বলছেন, মার্চ থেকে এ খাতের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। প্রথম দুই-তিন মাস বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় এই খাতের প্রায় ১৫০টি প্রতিষ্ঠান লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো রকমে টিকে থাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এবারের পূজায় কিছুটা আয়ের মুখ দেখবে বলে আশা করলেও উৎসব বাদ দেয়ায় তারা আশাহত।

এবার সারা দেশের পূজার মণ্ডপও কমেছে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে এবার ৩০ হাজার ২২৫টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। গত বছর হয়েছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি মণ্ডপে। ঢাকায় গত বছর পূজা হয় ২৩৯টি মণ্ডপে, এবার হচ্ছে ২৩১টিতে।

বনানী ও কলাবাগানের মতো ঢাকার বড় পূজা মণ্ডপগুলোতে এবার বড় ধরনের তোরণ নেই। প্রতি বছর বেশ ঘটা করে পূজা হয় এই মণ্ডপগুলোতে।

রমনা মন্দিরের আয়োজনও তেমনটাই হতো। এবার আলোকসজ্জা নেই। মাইকে মায়ের আরাধনার গান বাজছে না। বড় বড় হাড়িতে প্রসাদ রান্নার ঘ্রাণও মো মো করছে না মণ্ডপগুলোতে। নেই কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এতে ডেকোরেটর ও সাউন্ড সিস্টেম ব্যবসীদের যেমন ব্যবসা কমেছে, তেমনি বাবুর্চি ও তাদের সহকারীরা কাজ হারিয়েছে। চাল ও মুগডালসহ প্রসাদ রান্নার যাবতীয় উপকরণের পেছনে ব্যয় কমায় চাল-ডালের ব্যবসায়ীদেরও আয় কমল। শিল্পী-কলাকুশলীদেরও আয় কমেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিল্টন কান্তি দত্ত নিউজবাংলাকে বলেন, ঠিক কত টাকার ব্যবসা কমে গেল এ খাত সংশ্লিষ্টদের, তার সঠিক হিসাব পাওয়া কঠিন। তবে গড়ে সব মণ্ডপের পূজার ব্যয় তিন ভাগের এক ভাগে নেমেছে।

তিনি জানান, বনানী বা কলাবাগানের মতো বড় বড় পূজা মণ্ডপে প্রতি বছর পূজার আয়োজনে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা খরচ হয়। এবার সেটা কমে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকায় নেমে এসেছে। কেবল প্রসাদ রান্নার কথা হিসাব করলে দেখা যায়, প্রতিদিন কোনো কোনো মণ্ডপে গড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার দর্শনার্থীকে প্রসাদ দেয়া হয়।

শেষের তিন দিনে তাহলে ৩০ থেকে ৫০ হাজার লোকের প্রসাদ রান্নার খরচ এবার হবে না। এ রকম সারা দেশের পূজা মণ্ডপের খরচ কমলে মুদি ব্যবসায়ীদেরও ব্যবসা কমে যাবে।

রমনা শ্রী শ্রী কালী মন্দিরের পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি উৎপল সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতবারের গেট মেরামত করে চালিয়ে নিচ্ছি। মাইক নেই, কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নেই। বাড়তি আলোকসজ্জা নেই।’

এ তো গেল বড় মণ্ডপের খরচাপাতি। ছোট মণ্ডপগুলোও প্রতি বছর পূজায় তিন থেকে চার লাখ টাকা খরচ করে। এ রকম একটি মণ্ডপ আছে নারিন্দায়।

সেখানকার পশ্চিম প্রভাতি সংঘের সভাপতি স্বপন রাম কানু বলেন, ‘উৎসব না করলেও মণ্ডপের চাকচিক্য কমাইনি। গেট ও সাউন্ড সিস্টেম এবার নেই ঠিকই। হালকা আলোকসজ্জা করেছি; খরচ মাত্র ৮ হাজার টাকা। গত বছর আলোকসজ্জায় খরচ ছিল ২২ হাজার টাকা। মোট খরচ কমে এক লাখ ৬০ হাজার টাকায় নেমে এসেছে।’

ঢাকার তেঁজগাওয়ের রংধনু ডেকোরেটরের স্বত্বাধিকারী কাজী মজিবুর রহমান বলেন, এমন মন্দা তিনি জীবনে দেখেননি। এবার পূজায় একটা বায়নাও পাননি তিনি।

ডেকোরেটর্স মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মো. শওকত আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ঢাকার বড় পূজা মণ্ডপগুলো থেকে ডেকোরেটর ব্যবসায়ীরা ভালো ব্যবসা করত। এবার পূজায় সেটা হলো না। তা ছাড়া ডেকোরেটরদের সঙ্গে কাজ করে এমন অনেক লোক (যেমন: ভ্যানচালক, প্রসাদ রান্নার কাজে বাবুর্চির সহকারী) কাজ পাননি। তারা খুব খারাপ অবস্থায় আছে।

ঢাকার বাইরেও একই রকম লোকসানের কথা জানালেন ব্যবসায়ীরা। পিরোজপুরের রয়েল ডেকোরেটরের মালিক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর নিউজবাংলাকে বলেন, গত বছরের মতো এবারও দুটি মণ্ডপের কাজ পেয়েছেন তিনি। কিন্তু আয়োজন খুবই সীমিত। ঘরোয়া পরিবেশে পূজা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, চেয়ার-টেবিল লাগছে না; ফ্যান লাগছে না। গত বছর গড়ে একেকেটি মণ্ডপে ৬০ হাজার টাকার কাজ করেছেন তিনি। এবার সেখানে কাজ হয়েছে মাত্র ২০ হাজার টাকার।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিল্টন কান্তি দত্ত জানান, পালরা আগের মতো বড় আকারের বিগ্রহ (প্রতিমা) বানানোর কাজ পাননি। ঢুলিরা কাজ পাননি। অনেক মণ্ডপে ব্যান্ড পার্টি রাখা হতো; এবার নেই। বিসর্জনের শোভাযাত্রা হবে না। আগে বড় মন্ডপগুলোর পাঁচ-ছয়টা ট্রাক লাগত। এবার প্রতিমা বিসর্জনে হয়তো একটা ট্রাকেই হবে। তবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা মাস্কসহ সংক্রমণ রোধের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী রাখা হয়েছে মণ্ডপে।

তিনি আরও জানান, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে মণ্ডপে ঢুকতে বলা হয়েছে। অনেক মণ্ডপে অঞ্জলি দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বিবেচনায় উৎসবের কলেবর না কমিয়েও কোনো উপায় ছিল না।

এ বিভাগের আরো খবর