বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনায় বিপন্ন জীবিকা

  • সাহেলি রায় চৌধুরী    
  • ২১ অক্টোবর, ২০২০ ০৯:৩৩

বিজিএমইএর হিসাব অনুযায়ী,  করোনা মহামারি ১ হাজার ১৫০টি কারখানায় তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাব ফেলেছে। এসব কারখানা ৩১৮ কোটি ডলারের অর্ডার বাতিলের কথা জানিয়েছে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশের পোশাক খাতকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। জীবিকা হারিয়ে পোশাক কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নে পোশাকশিল্প দীর্ঘকাল ধরে একটি ভূমিকা রেখে এসেছে। কিন্তু করোনা মহামারি আঘাত হানার পর বিশ্বব্যাপী খুচরা বিক্রেতারা তাদের হাত গুটিয়ে নেয়। ফলে শত শত কোটি ডলারের ক্রয় আদেশ বাতিল হয়ে যায়।

২২ বছর বয়সী মৌসুমী বাংলাদেশে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে করোনা মহামারি আঘাত হানার আগে আগে চাকরি নেন একটি পোশাক কারখানায়। এর আগে প্রায় ২ বছর তিনি বেকার ছিলেন।

জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিনি প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে বেতন পেয়েছেন। মার্চের শেষে করোনাভাইরাসের বিস্তার কমাতে দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এপ্রিল মাসে সীমিত পরিসরে যখন কারখানাগুলো খুলে দেওয়া হয় তখন তাকে অপেক্ষায় রাখা হয়। এরপর আগস্টের ১ তারিখে তাকে বরখাস্ত করা হয়।

মৌসুমী জানান, তাকে কারখানা থেকে বলা হয়েছিল, করোনাভাইরাসের কারণে তারা কর্মী ছাঁটাই করছেন।

এই করোনাকালে মৌসুমীর মতো চাকরি হারিয়েছেন দুলালিও। এবিএ ফ্যাশন লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানায় মাসিক ১১ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন তিনি।

এপ্রিল মাসে চাকরি যাওয়ার পর থেকে তিনি আরেকটি চাকরি পাওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মৌসুমীর মতো দুলালিকেও বলা হয়েছিল, করোনা মহামারির কারণেই তাকে ছাঁটাই করা হয়েছে।

দুলালী বলেন, ‘কারখানা কর্তৃপক্ষ বলেছিল, করোনাভাইরাসের কারণে কোনো নতুন অর্ডার আসেনি। তাই কারখানার মালিক শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছেন না।’

তিনি জানান, অনেক খুঁজেও তিনি কোনো চাকরি পাননি এবং তার মতো আরও অনেকে কাজ খুঁজছেন।

দুলালী এখন তার আট বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে থাকেন। তিনি সিএনবিসিকে জানান, এখন খুবই কষ্টে তাদের দিন কাটছে। বাড়ি ভাড়া ১৬ হাজার টাকা বাকি পড়েছে। এ জন্য তাকে বাড়িওয়ালার বাসায় রান্না করে দিতে হচ্ছে। তাতে মাসে পাচ্ছেন ৫০০ টাকা।

সিএনবিসি বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন ফেডারেশনের মাধ্যমে মৌসুমী ও দুলালীসহ ছয় পোশাক শ্রমিকের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তাদের কয়েকজন এখনো কর্মরত।

অন্যরা জানিয়েছেন, তারা এপ্রিল বা মে থেকে কাজ খুঁজছেন। তারা সবাই করোনা মহামারির কারণে আর্থিক সংকটসৃষ্ট দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন।

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক শীর্ষ ব্র্যান্ড বাংলাদেশে তাদের ক্রয়াদেশ বাতিল করেছে।

পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) হিসাব অনুযায়ী,  করোনা মহামারি ১ হাজার ১৫০টি কারখানায় তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলেছে। এসব কারখানা ৩১৮ কোটি  ডলারের অর্ডার বাতিলের কথা জানিয়েছে।

বিজিএমইএ জানিয়েছে, চলতি বছরের মার্চ থেকে জুনের মধ্যে বাংলাদেশ ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় ৪৯০ কোটি ডলার কম অর্ডার পেয়েছে।

রেটিং এজেন্সি মুডির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক দেশ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শুধু চীনের পেছনে রয়েছে।

পোশাক শিল্প দেশের রফতানি আয়ের প্রধান উৎস। বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের ৩৩ হাজার কোটি ডলারের রফতানির ৮৩ শতাংশই তৈরি পোশাক।

বাংলাদেশের ৪ হাজার ছয়শর বেশি পোশাক কারখানা শার্ট, টি-শার্ট, জ্যাকেট, সোয়েটার ও ট্রাউজার তৈরি করে। এই পোশাকগুলোর বেশিরভাগই ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় রফতানি করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পেন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রম ও কর্মসংস্থান সম্পর্কবিষয়ক বিভাগের অধ্যাপক মার্ক অ্যানার সিএনবিসিকে বলেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ শ্রমিকের চাকরি সুরক্ষিত নয়। তরুণ ও নারী শ্রমিকেরা প্রায়ই চাকরি হারান। তাই অনেকে কাজের সন্ধানে গ্রামাঞ্চল থেকে শহরে চলে আসেন।

বিলকিস বেগম (৩০) গত ৪ এপ্রিল একটি পোশাক কারখানা থেকে ছাঁটাই হন এবং এরপর আর কোনো কাজ পাননি। তখন তিনি একজন অসুস্থ প্রতিবেশীর বাড়িতে গৃহকর্মী হিসাবে কাজ করেন।

তিনি এখন অস্থায়ী ভিত্তিতে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ করছেন। তবে বেতন হিসেবে তিনি এখন যা পান, তা যথেষ্ট নয়।

বিলকিস বেগম জানান, তার ভাইয়েরা মাঝে মাঝে তাকে সাহায্য করেন। তবে তাদেরও নিজের পরিবার রয়েছে।

তিনি সিএনবিসিকে বলেন, ‘তাও আমি এ-বাড়ি ও-বাড়ি কাজ করি। কিছু টাকা তো রোজগার করতে পারছি।’

মার্ক অ্যানার বলেন, বাংলাদেশের পোশাকশ্রমিকদের অনেকেরই কোনো সঞ্চয় থাকে না এবং দিন এনে দিন খায়। কাজেই যখন তারা চাকরি হারান, তখন এর প্রভাব হয় তাৎক্ষণিক।

অ্যানার গত মার্চ মাসে বাংলাদেশের পোশাক খাতে করোনা মহামারির তাৎক্ষণিক প্রভাব নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।

ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, অনেক কোম্পানি প্রাথমিকভাবে কেনা কাঁচামালের দাম সরবরাহকারীদের দিতে অনিচ্ছুক ছিল। এ কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যায় এবং প্রচুর শ্রমিক ছাঁটাই হয়।

মৌসুমী সিএনবিসিকে বলেন, তিনি এক মাস আগে একটি নতুন কারখানায় যোগ দিয়েছেন। এই কারখানায় টি-শার্ট ও মাস্ক তৈরি করা হয়।

তিনি জানান, কর্মঘণ্টা সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত হলেও মাঝে মাঝে তাকে এর চেয়ে বেশি সময় কাজ করতে হয়। অনেক সময় মাঝরাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়।

মৌসুমী বলেন, ‘আসলে কাজের কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। কাজের অনেক চাপ, তাই আমরা বাধ্য হই কাজ করতে। তবে বিকেল ৫টার পর কাজের জন্য ওভারটাইম দেয়া হয়।’

তিনি জানান, আগের কারখানায় তিনি যা বেতন পেতেন তার চেয়ে এখানে বেতন কম। এখান মাসে সাড়ে আট হাজার টাকা বেতন পান। আর পাঁচটার পর কাজ করলে ওভারটাইম পান।

করোনা মহামারি দরিদ্র শ্রমিকদের আরও দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে; তাদের ঋণগ্রস্ত করেছে।

মৌসুমী জানান, তিনি তার মায়ের দেখাশোনা করেন। পাশাপাশি শ্বশুরবাড়িতে তাকে প্রতি মাসে টাকা পাঠাতে হয়।

তিনি বলেন, ‘২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বেকার থাকাকালীন তার অনেক ঋণ হয়। আগস্টে সর্বশেষ চাকরি হারানোর পর বাড়ি ভাড়াও বাকি পড়ে।’

তিনি বলেন, ‘আর্থিকভাবে আমি অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলাম। তাই আমার এখনকার কাজটি নিতে হয়েছে।’

সাহেলি রায় চৌধুরী আমেরিকার সিএনবিসি ডটকমের রিপোর্টার। তিনি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রযুক্তি বিষয়ে রিপোর্ট করেন। তার আগ্রহের বিষয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অগমেন্টেড রিয়েলিটি ও সাইবার নিরাপত্তা।

এ বিভাগের আরো খবর