পেঁয়াজের দাম সহনীয় রাখতে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো যাতে বাজারে সক্রিয় ভূমিকা রাখে সে লক্ষ্যে গত সপ্তাহে চিঠি দেয়া হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে।
এসব চিঠিতে বাজারে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে অনুরোধ করা হয়েছে। সংস্থাগুলো হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, নৌ পরিবহণ ও কৃষি মন্ত্রণালয়, উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ অধিদফতর এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এলসি খোলা আমদানি পেঁয়াজ এরইমধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে শুরু করেছে। পাশাপাশি দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা ও মোকামগুলোতেও পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মনে করছে, এখন আমদানি পেঁয়াজ দ্রুত খালাসের মাধ্যমে বাজারে আনা গেলে এবং দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক রাখা গেলে দেশে পণ্যটির সংকট থাকবে না। সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে। আর এ জন্যে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে দরকার সমন্বয়।
দেশে চাহিদার সিংহভাগ পেঁয়াজ দেশেই উৎপাদন হয়। তবে উৎপাদিত পেঁয়াজের এক-চতুর্থাংশ পঁচে নষ্ট হওয়ার কারণে প্রতি বছর ১০ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। এই পেঁয়াজের ৯৫ শতাংশই আমদানি হয় ভারত থেকে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দিলে দেশে অত্যাবশ্যকীয় এ পণ্যটির অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। ফলে আমদানিকারকেরা বিকল্প বাজার থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে মনোযোগ বাড়িয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন নিউজবাংলাকে জানান, ১৩ দেশ থেকে প্রায় সাত লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি করা পেঁয়াজ পুরোপুরি বাজারে এলে দাম কমে আসবে। ভারতীয় পেঁয়াজ না এলেও দেশের বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে না।
পেঁয়াজ আমদানিকারকদের অভিযোগ
গত দেড় মাসে মিয়ানমার, পাকিস্তান, চীন, তুরস্ক ও মিশরসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় সাত হাজার আমদানিকারক পেঁয়াজের এলসি খুলেছেন। ইতিমধ্যে পাকিস্তান ও মায়ানমারের পেঁয়াজ দেশে পৌঁছাতে শুরু করেছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এই পেঁয়াজ আসা শুরু হলেও দেশে পৌঁছানোর পরিমাণ এখনও খুব কম।
তবে আমদানি করা পেঁয়াজ খালাসে বন্দরে দীর্ঘসূত্রিতা আছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। আছে কোয়ারেন্টাইন ও অরিজিনাল ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেটের সমস্যাও। এর প্রতিকার চেয়ে আমদানিকারকেরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন।
মেসার্স হাফিজ করপোরেশনের মালিক মো. হাফিজুর রহমান অভিযোগে বলেছেন, কোয়ারেনটাইন অফিস থেকে সার্টিফিকেট নিতে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ হয়। অরিজিনাল ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট না থাকলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় গিয়ে খামারবাড়ি থেকে এসআরও করিয়ে আনতে হয়। এ প্রক্রিয়ায় বন্দর অফিস থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে আগ্রাবাদ অফিসেও স্বাক্ষর করাতে হয়। এটা চরম বিড়ম্বনার।
অভিযোগে বলা হয়, এসব কারণে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বন্দরে পৌঁছানোর পরও খালাস করাতে চার থেকে সাত দিন অতিরিক্ত সময় লাগে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে পেঁয়াজ ইস্যুতে ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। একই রকম চিঠি দেয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছেও।
দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের সিংহভাগ ফরিদপুর, পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোর জেলা থেকে সংগ্রহ করা হয়। এসব জেলার পেঁয়াজের সরবরাহ শেকল যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সে জন্য মাঠপ্রশাসনকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।
জেলা প্রশাসকদেরও আধাসরকারি পত্র বা ডিও পাঠিয়েছেন বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন। নিজ নিজ জেলায় পেঁয়াজ উৎপাদনকারী, আমদানিকারক ও বাজারসংশ্লিষ্টদের সাথে সমন্বয় করতে বলেছেন তিনি।
নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া চিঠিতে ব্যবাসায়ীদের অভিযোগ অবহিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আমদানি পেঁয়াজ দ্রুত খালাস করতে হবে।
এছাড়া ১৩ অক্টোবর কৃষি মন্ত্রণালয় ও উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ বিভাগে চিঠি দিয়ে এ সংক্রান্ত সার্টিফিকেট ইস্যুতে কালবিলম্ব না করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গত বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতা এবার কাজে লাগানো হচ্ছে। তাই এ বছর আগে থেকেই সরকার আমদানির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকার পেঁয়াজ আমদানির উপর শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। আমদানিকারকদের চাহিদা মোতাবেক সবধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ দেশব্যাপী স্থানীয় প্রশাসনের নেতৃত্বে বাজার অভিযান জোরদার করা হয়েছে।