রফতানিকারক দেশ হিসাবে বিদেশে ঘুষ লেনদেনের সাথে জড়িত দেশি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি ৩৪টি দেশ। এসব দেশের মধ্যে আছে চীন, ভারত, জাপান, হংক, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, নেদারল্যান্ড, কানাডা ও মেক্সিকো, যাদের বেশিরভাগের সাথেই বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক গভীর।
মঙ্গলবার ‘দুর্নীতি রফতানি’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দুনীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)। দেশে উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকা অর্থপাচারসহ নানা ধরনের ঝুঁকি এড়াতে সরকারকে সতর্ক থাকার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি বৈদেশিক বাণিজ্য সহযোগি রাষ্ট্রগুলোকেও তাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার, নিজস্ব আইন প্রয়োগ শক্তিশালী করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বার্লিনে অবিস্থিত টিআই সচিবালয় পরিচালিত দ্বিবার্ষিক ‘দুর্নীতি রফতানি ২০২০: ওইসিডি ঘুষবিরোধী কনভেনশন প্রয়োগের মূল্যায়ন’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৮ সালের পর থেকে বৈদেশিক ঘুষ লেনদেনের বিরুদ্ধে সক্রিয় আইন প্রয়োগের উদহারণ আশংকাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এ সময়কালে বৈদেশিক ঘুষ এবং এর সাথে সম্পৃক্ত অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া শীর্ষ রফতানিকারক দেশের সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি কমেছে।
গবেষণায় অন্তর্ভূক্ত ৪৭টি দেশের মধ্যে বিশ্বের রফতানি বাণিজ্যের ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করা মাত্র চারটি দেশ বৈদেশিক ঘুষ লেনদেনের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে আইন প্রয়োগ করেছে।
২০১৮ সালে এমন দেশের সংখ্যা ছিলো সাতটি, যারা মোট বৈশ্বিক রফতানি বাণিজ্যের ২৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করতো। ৪৭টি দেশের মধ্যে ৩৪টি দেশ কার্যত এ সংক্রান্ত আইনের কোনো প্রয়োগই ঘটায় নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় রফতানিকারক দেশ চীন ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বৈদেশিক ঘুষ লেনদেনের বিরুদ্ধে একটি তদন্তও শুরু করতে পারেনি। অথচ চীনা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে বেশ কিছু কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে এবং অনেক দেশই তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে।
২০১৬ থেকে ২০১৯ সময়কালে ওইসিডি বহির্ভূত কিন্তু রপ্তানি বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ আরো দুটি দেশ ভারত ও হংকংও বৈদেশিক ঘুষ লেনদেনের বিরুদ্ধে একটিও তদন্ত করে নি। গত চার বছরে সিঙ্গাপুর মাত্র একটি ঘটনায় তদন্ত করেছে এবং একটি মামলায় শাস্তি নিশ্চিত করতে পেরেছে- উল্লেখ করা হয় প্রতিবদনে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে বলেন, ‘এটি খুবই হতাশাজনক একটি বিষয়। বিশ্বের শীর্ষ রফতানিকারক দেশগুলো বিদেশে ঘুষ লেনদেন বন্ধের বিষয়ে তাদের প্রদত্ত আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি পালনে আশংকাজনকভাবে ব্যর্থ হয়েছে।’
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈদেশিক ঘুষ লেনদেনের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের বিষয়ে জি-২০ এর অন্তর্ভূক্ত দেশসগুলোর অর্ধেকই আশংকাজনকভাবে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, বিশ্বের শীর্ষ রফতানিতকারক দেশগুলোর মধ্যে স্বল্পসংখ্যকই বিদেশে ঘুষ লেনদেনকারী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর তদন্ত এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আমরা এমনিতেই সর্বব্যাপী দুর্নীতির চক্রে আষ্টেপৃষ্ঠে আবদ্ধ। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতিপ্রবণ চর্চা পরিস্থিতিকে আরো প্রকট করে তুলবে। বিশেষ করে যখন বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আকর্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সরকার ও অন্যান্য অংশীজনের জন্য যে কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সঙ্গে সব ধরনের ব্যবসা ও বিনিয়োগ কার্যক্রমে দুর্নীতিবিরোধী চর্চাগুলোকে জোরালোভাবে মূলধারাভূক্ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।‘