করোনা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কৃষিখাতের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭৮ হাজার ৫২৬ জন গ্রাহক ঋণ পেয়েছেন। দেশের ৪১টি ব্যাংক এই গ্রাহকদের ১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।
গত এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পরপরই কৃষিখাতের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এই তহবিলের আওতায় ব্যাংকগুলো কৃষিখাতে যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করবে সেই পরিমাণ টাকা ঋণ হিসেবে ব্যাংককে দিয়ে দেওয়া হয়।
এ ক্ষেত্রে ব্যাংক গ্রাহকের কাছ থেকে ঋণের সুদ হিসেবে সর্বোচ্চ চার শতাংশ অর্থ আদায় করতে পারবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছ থেকে সুদ নেবে এক শতাংশ হারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বরাদ্দের বিপরীতে গত ছয় মাসে এ প্যাকেজের আওতায় কৃষিঋণ বিতরণের হার ৪২ শতাংশ।
বিপরীতে রফতানিমুখি শিল্পের শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য গঠিত ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের দেড় মাসের মাথায় পুরো তহবিল বিতরণ হয়ে যায়। পরে ওই তহবিলে যোগ হয় আরো ৫ হাজার কোটি টাকা।
কৃষিঋণের প্যাকেজের আওতায় ঋণ নেওয়ার পর প্রথম ছয় মাসে গ্রাহকদের কোনো কিস্তি দিতে হবে না। তবে পরের এক বছরে এই টাকা পুরোটাই পরিশোধ করতে হবে।
বাংলাদেশ বাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে বলেন, এ পর্যন্ত ৪৩টি ব্যাংক এই ঋণ বিতরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অংশগ্রহণ চুক্তি করেছে।
এই তহবিল থেকে শস্য ও ফসল খাত ছাড়া অন্যান্য চলতি মূলধননির্ভর খাত যেমন, মৌসুমভিত্তিক ফুল ও ফল চাষ, মাছ চাষ, পোলট্রি, ডেইরি ও প্রাণিসম্পদ খাতে সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা ঋণ দিতে পারে ব্যাংক।
জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ তহবিল থেকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সর্বোচ্চ ৪৮ হাজার ৪৯৭ গ্রাহককে ৯৫৬ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।
কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া জানান, তারা করোনার মধ্যে একদিনও ব্যাংক বন্ধ রাখেননি।
তিনি আরো বলেন,‘কৃষিঋণের প্যাকেজ ঘোষণা করার পর থেকে আমরা প্রতিদিন এর অগ্রগতি তদারকি করেছি। আশা করছি, আমাদের জন্য বরাদ্দ রাখা বাকি অর্থও চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যেই বিতরণ করতে পারব। এটা করতে পারলে আমরা আরও এক হাজার কোটি টাকা নতুন করে বরাদ্দের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করবো।‘
ঋণ বিতরণের দিক দিয়ে এর পরেই রয়েছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। এ ব্যাংকটি সাত হাজার ২৯ জন গ্রাহককে ৩২১ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।
এছাড়া এক্সিম ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ৫৬ কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংক ৫১ কোটি টাকা, ব্র্যাক ব্যাংক ৪৯ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংক ৪৫ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ৩১ কোটি টাকা, পূবালী ব্যাংক ২৯ কোটি টাকা, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ২৫ কোটি টাকা, ডাচ-বাংলা ২৫ কোটি টাকা, উত্তরা ব্যাংক ২২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে এই প্যাকেজের আওতায়।
অন্যান্য অংশগ্রহণকারী ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ২০ কোটি টাকার নিচে। এর মধ্যে ওয়ান ব্যাংক ও মধুমতি ব্যাংক এই প্যাকেজের আওতায় এক টাকাও কৃষিঋণ বিতরণ করেনি বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য থেকে জানা যায়।