সরকার মিলগেটে চালের দাম বেঁধে দেয়ার পরও সুফল পাচ্ছে না ক্রেতারা। বাজারে চালের দাম ক্রমাগত উর্ধ্বমুখী। তাছাড়া পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দামে বড় ধরনের তারতম্য দেখা যাচ্ছে।
চালকল থেকে পাইকারি দরে কেনা চালের দাম সরকার বেঁধে দেয়া হলেও সেই চাল খুচরা বাজারে কী দামে বিক্রি হবে, তা বেঁধে দেওয়া নেই। ফলে মিলগেটে পাইকারি দাম একই থাকলেও খুচরা বাজারে গত তিন দিনে সব ধরনের চাল কেজিতে গড়ে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে।
সরু বা চিকন চালের বেঁধে দেওয়া পাইকারি দাম কেজি প্রতি ৫১ টাকা ৫০ পয়সা হলেও সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, এ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬২ টাকায়। আর মোটা চালের নির্ধারিত পাইকারি দাম ৪৫ টাকা কেজি হলেও খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এ চাল ৪৪ টাকা থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হতো।
দাম বাড়ার পেছনে পাইকারি বিক্রেতা বা আড়তদাররা দায়ী করছেন চালকল মালিকদের। অভিযোগ করছেন, চালকল মালিকেরা বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দাম রাখছেন অনেক ক্ষেত্রে। আর চালকল মালিকেরা বলছেন, তারা বেঁধে দেওয়া দামেই চাল বিক্রি করছেন।
বৈঠকে সিদ্ধান্তের ফল নেই
গত ২৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চালকল মালিকদের বৈঠকে মোটা ও চিকন চালের পাইকারি মূল্য নির্ধারণ করে দেয় সরকার।
বৈঠকে মিলগেটে প্রতি কেজি চিকন চাল ৫১ টাকা ৫০ পয়সায় (৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার ৫৭৫ টাকা) বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া মোটা চাল প্রতি কেজি ৪৫ টাকা (৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার ২৫০ টাকা) নির্ধারণ করা হয়।
পরদিন বুধবার থেকে দেশের সব চালকল মালিককে নতুন দামে চাল বিক্রি করতে বলা হয়। কেউ এর বেশি দামে বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। সেইসঙ্গে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বুধবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে চালকলগুলোতে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্তও হয়। তবে সোমবারও কোনো অভিযানের খবর পাওয়া যায় নি।
ভোক্তা অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, কিছু চালকল মালিক মিলগেটে বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে চাল বিক্রি করছেন। তারা বলছেন, দাম নির্ধারণের আগে বেশি দামে তারা ধান কিনেছেন।
দাম বাড়ার কারণ
রাজধানীর কারওয়ানবাজার, রামপুরা, মালিবাগ বাজার, শান্তিনগর, মেরুল বাড্ডা, খিলক্ষেতসহ একাধিক বাজারে দেখা গেছে, চালের দাম নিয়ে নানা রকম নৈরাজ্য। সরবরাহ সন্তোষজনক থাকলেও দাম ঊর্ধ্বমুখী।
কারওয়ান বাজারের পাইকার বা আড়তদার জনতা রাইস এজেন্সির মালিক আবু ওসমান নিউজবাংলাকে বলেন, দাম বাড়ার জন্য চালকল মালিকেরা দায়ী। সরকার দাম ঠিক করে দিলেও চালকল মালিকেরা তা মানছেন না।
এই অভিযোগের ব্যাপারে ব্যাখ্যা চাওয়া হলে চালকল মালিকেরা বলেন, তারা বেশি দামে ধান কিনেছেন। এ কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের বেশি দাম রাখতে হচ্ছে।
কুষ্টিয়া চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও দাদা রাইস মিলের মালিক জয়নাল আবেদিন বলেন, আগে বেশি দামে কেনা ধানের মজুদ শেষ হলে আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে তারা সরকার নির্ধারিত দামে চাল বিক্রি করতে পারবেন।
তিনি আরও দাবি করেন, দাম নির্ধারিত হওয়ার পর গত দুই দিনে চাল কেনার জন্য কোনো অর্ডার করেননি পাইকাররা। কারণ এই দামে কিনলে কম দামে বিক্রি করতে হবে। বেশি মুনাফার আশায় তারা যে শত শত টন চাল মজুদ করেছেন, সেই চালই বিক্রি করছেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম্ নিউজ বাংলাকে বলেন, সরকারের যে মুল্য বেঁধে দেয়, বাজারে সেটার ফল পাওয়া যাচ্ছে কিনা তা দেখবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ হচ্ছে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে কিনা, তা শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া।
তিনি বলেন, যেহেতু মিল মালিকেরা আগে বেশি দামে ধান কিনেছেন, তাই শুরুতে তারা বেশি দামে চাল বিক্রি করেছেন। এখন দাম নির্ধারিত হওয়ার পর তাদের আর বেশি দামে বিক্রি করার সুযোগ নেই। যারা সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম না মেনে বেশি দামে বিক্রি করে অতি মুনাফা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে এবং এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপসচিব মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার নিউজবাংলাকে বলেন, চালের বাজারের অস্থিরতা তদারকি করার জন্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ইতিমধ্যে সকল জেলায় নির্দেশনা দিয়েছেন, সেই নির্দেশনা অনুযায়ী বাজার তদারকি করা হচ্ছে। কেউ অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।