সব ব্যাংকের হিসাব থেকে যে কোনো মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে টাকা আনা যাবে, আবার পাঠানোও যাবে- এমন সার্বজনীন ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এতে করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় যেমন প্রসার ঘটবে, তেমনি ব্যাংকের সেবায়ও বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, অনেক দিন ধরেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আন্তঃলেনদেন চালুর একটা আলোচনা চলে আসছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি আলোচনায় সব ব্যাংক হিসাবের সঙ্গে সব মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়।
এতে ছোট ব্যবসায়ীদের বেশি উপকার হবে উল্লেখ করে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকেই এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে পণ্যের মূল্য সংগ্রহ করছেন। নতুন সেবায় ওইসব ব্যবসায়ীরা মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবের টাকা নিজেদের ব্যাংক হিসাবে সরাসরি জমা করতে পারবেন। এ প্রক্রিয়া চালু করার জন্য কাজ করছে পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগ।
ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশের করপোরেট কমিউনিকেশন্স বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, ‘শুধু নিজেদের ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা নয়, ভবিষ্যতে হয়তো ব্যাংকগুলো সরাসরি মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে ঋণের টাকা ছাড় করতে শুরু করবে। তখন ঋণের কিস্তি পরিশোধও করার সুযোগ থাকবে।’
বর্তমানে বিকাশ নিজ উদ্যোগে অগ্রণী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে এ ধরনের সুবিধা চালু করেছে।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এই সুযোগ সব ব্যাংকের জন্য উন্মুক্ত করা হলে এ ধরনের চুক্তির আর দরকার হবে না বলে জানান মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম।
সম্প্রতি বিকাশের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘ছোট ছোট আমানত ও ঋণের কিস্তি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করা গেলে অনেক গ্রাহককে আর ব্যাংকের শাখায় আসতে হবে না।
‘এতে একদিকে যেমন নগদ টাকার লেনদেন কমে আসবে, তেমনি করোনার মতো সংক্রামক রোগ থেকে কিছুটা হলেও দূরে থাকা যাবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত দেশে বর্তমানে ৫৯টি ব্যাংকে ১১ কোটি ১৬ লাখ আমানতি হিসাব রয়েছে। এছাড়া গত আগস্ট পর্যন্ত ১৫টি মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধিত গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ২০ লাখ। এর মধ্যে চার কোটি হিসাব সক্রিয় ছিল।
বাংলাদেশ বাংকের মুখপাত্র আরো বলেন, ‘মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব থেকে সরাসরি ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা করা গেলে ক্যাশ আউটের খরচও কমে আসবে। এতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উপকার হবে এবং তারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে পণ্যের মূল্য সংগ্রহে আগ্রহী হবে।
‘এতে ভবিষ্যতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের তথ্যের ভিত্তিতে তাদেরকে ঋণ দিতে সহজ হবে ব্যাংকগুলোর জন্য।’
বিকাশের করপোরেট কমিউনিকেশন্স প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম জানান, বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং থেকে টাকা তুলতে এক হাজার টাকায় প্রায় ১৮ টাকা ৫০ পয়সা খরচ পড়ে। তবে মোবাইল ব্যাংকিং থেকে সরাসরি ব্যাংকে টাকা জমা করতে খরচ হবে এক হাজারে বড়জোর ১০ টাকা।