করোনার মধ্যেও দেশের রফতানি আয়ে তেজিভাব অব্যাহত রয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পে যেসব ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিল হয়ে গিয়েছিল, সেগুলো ফিরে এসেছে। ফলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে রফতানি।
গত মার্চের পর থেকে দেশের রফতানি তলানিতে পৌঁছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ এ খাতের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে বলে পোশাক রফতানিকারকেরা জানিয়েছেন।
চলতি অর্থবছরের মে ও জুনে রফতানিতে ব্যাপক ধস নামলেও জুনে কিছুটা উন্নীত হয়। তবে জুলাই- আগস্টে তেজিভাব দেখা যায়। সেপ্টেম্বরেও এ ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম নিউজবাংলাকে বলেন, করোনায় বিশ্ববাজারে সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই), মাস্ক ও মেডিকেল গাউনের চাহিদা বাড়ছে। এসব পণ্য বেশি রফতানি হওয়ায় দেশের রফতানি আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার আশংকায় ক্রেতারা এখন উদ্বিগ্ন। পরিস্থিতি দেখে ক্রয়াদেশ দেবেন তারা। ফলে আগামীতে রফতানিতে কিছুটা অনিশ্চয়তা আছে।
রোববার রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০১০-২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে প্রবৃদ্ধি এবং লক্ষ্যমাত্রা দুটোই অর্জিত হয়েছে। এ সময়ে মোট রফতানি হয় ৯৮৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলার, গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৯৬৪ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ রফতানি আয় বেড়েছে বা প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
অপরদিকে, চলতি অর্থবছরের তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ২৪ কোটি ডলার বেশি রফতানি হয়েছে। এ সময়ে রফতানি আয়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৬৬ কোটি ডলার।
মোট রফতানির প্রায় ৮০ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক শিল্প থেকে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ হচ্ছে বাংলাদেশের পোশাক পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার। করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ায় ওই সব দেশে ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে যায়। বর্তমানে ওই সব দেশে ভোগ চাহিদা বাড়ছে। ফলে বাংলাদেশের পোশাক পণ্যের রফতানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একক মাস হিসেবে সেপ্টেম্বরে রফতানি খাত শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে। ইপিবির তথ্যমতে, গত সেপ্টেম্বরে রফতানির পরিমাণ ৩০১ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। ওই মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৮৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৬ শতাংশ বেশি আয় হয়েছে।
রফতানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত পোশাকে আলোচ্য অর্থবছরের তিন মাসে আয় ৮১২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮০৫ কোটি ডলার।
চলতি অর্থবছরে মোট রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ হাজার ১০০ কোটি ডলার। পোশাক রফতানিকারকরা আশা প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।
গত অর্থবছরে মার্চ পর্যন্ত রফতানি ভালো অবস্থানে ছিল। কিন্তু করোনায় কয়েক মাস এর ছন্দপতন ঘটে। যে কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় নি গত অর্থবছর।