বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শুরুতেই হোঁচট খেল রাজস্ব আদায়

  • আবু কাওসার, ঢাকা    
  • ৩ অক্টোবর, ২০২০ ১৯:২৯

প্রথম দু মাসে ঘাটতি ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি, বাজেট বাস্তবায়নে চাপে সরকার, ব্যয় সংকোচন করে সমন্বয়ের চেষ্টা

বাজেট বাস্তবায়নে অর্থায়নের সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বা রাজস্ব আদায়। করোনা মহামারির কারণে এতে বড় ধরনের ধস নেমেছে। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, কেউ বলতে পারছে না। 

রাজস্ব আদায়ে বিশাল ঘাটতির কারণে বাজেট বাস্তায়নে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। এতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেয়া বাড়বে। তখন বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরন ব্যাহত হওয়ার আশংঙ্কা থাকে। এতে করে বাধাগ্রস্ত হতে পারে বেসরকারি খাত। বাড়বে মূল্যস্ফীতি, যা প্রকারান্তরে মানুষের জীবন-যাপনে দুর্ভোগ বয়ে আনবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম দু মাস জুলাই-আগস্টে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪০ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা। তবে এ সময়ে আদায় হয়েছে ৩০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি ১০ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা। এ সময়ে আদায় বেড়েছে (প্রবৃদ্ধি) ১ শতাংশের কম, যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ম। গত অর্থবছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল পাঁচ শতাংশ। 

করোনাকালে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেগবান করতে চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) বিশাল ব্যয়ের বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। অর্থনীতি সহসাই স্বাভাবিক হবে এমন প্রত্যাশা রেখে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে এবার এনবিআররে মাধ্যমে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বিশাল রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু অর্থবছরের শুরুতেই রাজস্ব আয়ের যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, তাতে এবারও বড় ধরনের ঘাটতি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে বাজেটে অর্থায়নের আরেকটি উৎস সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বেড়ে গেছে অস্বাভাবিকভাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে নিট বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময় এর পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে।  

বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল, তার ৩৭ শতাংশের বেশি দুই মাসে নেয়া হয়ে গেছে। সঞ্চয়পত্র থেকে  চলতি বাজেটে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হয়। এছাড়া বিদেশী উৎস থেকে ঋণ আসায় শ্লথ গতি দেখা যাচেছ। 

রাজস্ব আদায়ে ধস, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণ বেড়ে যাওয়া ও বিদেশি ঋণ প্রাপ্তিতে ধীরগতি – এসব কারণে সরকারি আয়ে ভাটা পড়েছে। অথচ, বেড়েই চলছে ব্যয়। ফলে বাজেট ঘাটতি মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার।  অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশি – এ দুটি উৎস থেকে বাজেট বাস্তবায়নে অর্থের জোগান দেয় সরকার। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ব্যাংক ব্যবস্থা  ও সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ঋণ নেয়া হয়। অপরদিকে, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ বিভিন্ন উন্নয়সহযোগী, দাতা সংস্থা ও দেশ থেকে কম সুদে সহজ শর্তে ঋণ সংগ্রহ করা হয়। করোনাকালে অর্থের জোগান নিশ্চিত করা সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে এবারের বাজেট বাস্তবায়নে ব্যাপক চাপে আছে সরকার। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, ব্যয় সংকোচন ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। 

অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনাকালে অর্থের জোগানে সংকট হবে - এ বিষয়টি বিবেচনা করে এবারের বাজেট দিয়েছে সরকার। সে জন্য অর্থবছরের শুরুতেই ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করা হয়। এর অংশ হিসেবে সরকারি গাড়ি কেনা সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করা হয়েছে, সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করা হয়েছে এবং উন্নয়ন বাজেট বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপের ফলে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। সাশ্রয় করা অর্থ করোনা প্রতিরোধসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করা হবে। 

যোগাযোগ করা হলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও আইএমএফ-এর সাবেক কর্মকর্তা  ড. আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, অর্থায়নের সমস্যা বহু পুরনো। কিন্তু করোনাকালে এই সংকট প্রকট হয়েছে। কারণ রাজস্ব আদায়ে খুবই খারাপ অবস্থা। বিদেশি ঋণ প্রবাহ সন্তোষজনক নয়। এ অবস্থায় বাজেট বাস্তবায়নে এবার বড় ধরনের চাপে পড়বে সরকার। এ চাপ সামলাতে বাজেটে বড় ধরনের ব্যয় সংকচন, ও বিদেশী সহায়তা বাড়ানো ও রাজস্ব আদায় আরও জোরদারের পরামর্শ দেন তিনি। 

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ নিউজবাংলাকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজস্ব আদায় কম হবে। বিষয়টি নিয়ে ভিন্নমত নেই। কিন্তু রাজস্ব আদায় বাড়াতে যে ধরনের সংস্কার কার্যক্রম নেয়া দরকার, তা গ্রহণ করেনি সরকার। তিনি আরও বলেন, টার্গেট একটা করতে হবে। তার জন্য অঙ্ক করে হিসাব মিলিয়ে দেয়া সহজ। কিন্তু রাজস্ব আয় কীভাবে বাড়াতে হবে, কোথায় সংস্কার করলে আয় বাড়বে  - এ সব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ নেই। ফলে রাজস্ব ঘাটতি ক্রমশ বাড়ছে।

AK/SB

এ বিভাগের আরো খবর