বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আবেগের দাম নেই: ঋতুপর্ণা

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ৮ মার্চ, ২০২৪ ১৭:২৫

এখন সবাই জোরে দৌড়চ্ছে। আবেগের কোনো দাম নেই। আগে আমার ইচ্ছা-অনিচ্ছা নিয়ে ভাবতে এক শ জন হাজির হয়ে যেত। এখন লোকে ফোনে পরামর্শ দিয়ে চলে যাবে। উল্টে বলবে ‘ওর মধ্যে সারাক্ষণ হতাশা’। এড়িয়ে যাবে। নিজেকে করুণার পাত্র যেন কোনো মেয়ে তৈরি না করে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ভক্তদের জন্য নিজের অনুভূতি ভাগাভাগি করলেন ভারতীয় অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।

শুক্রবার দৈনিক আনন্দবাজারে প্রকাশিত লেখাটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।

আজ শিবরাত্রি আবার নারী দিবস। শিব আর শক্তির পাশাপাশি অবস্থান। কোনও রকম ভনিতা না করেই বলতে পারি মেয়েরা অনেকগুলো বিষয় একসঙ্গে সামলাতে পারে। ছেলেরা পারে না তা নয়। তবে মেয়েরা এ ক্ষেত্রে একটু এগিয়ে।

আমার ঠাকুমাকেই দেখেছি, রান্নাঘর থেকে বাইরের জগৎ– একা হাতে সামলাতে। আমি তো ওর হাতেই মানুষ। বাড়িতে তখন আত্মীয়-স্বজনের আনাগোনা, ঠাকুমা ঢালাও বিছানা করে এক হাঁড়িতে তাদের যেমন খাওয়াত, তেমনি স্নিকার্স পরে পিঠে ব্যাগ নিয়ে বেড়াতে যেত।

স্নাতক স্তরের পড়াশোনাও ছিল না ঠাকুমার। কিন্তু আমার মনে হয় মেয়ে হিসেবে এমন সহজাত ক্ষমতা ছিল যে একসঙ্গে অনেক দায়িত্ব নিতে পারত। এই ক্ষমতা কিন্তু সময় বা পরিস্থিতির জন্য তৈরি হয় না। ভেতরেই থাকে। আমি কখন আঁকার স্কুলে যাব, কখন পড়ব সব নখদর্পণে। ভোর ৬টায় আমায় ডেকে দিয়ে বলত, ‘ওঠ! কখন পড়বি, ন'টা তো বেজে গেল।’

শুধু কি আমি? মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জায়গা তৈরি করার ক্ষেত্রেও ঠাকুমা সজাগ ছিল। আমার পিসিরা সেই ভাবে মানুষ হয়েছিল। এক পিসি ব্যাঙ্কে কাজ করেছে, আর এক জন শান্তিনিকেতনে বাটিক শিখেছে। অন্যজন অঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা করেছে। আমি ৩ কামরার ফ্ল্যাটের মধ্যেই এ সব হয়ে উঠতে দেখেছি।

আমার মা বিয়ের পরে ওই একভাবেই হঠাৎ জামালপুর থেকে কুড়িজন আত্মীয় চলে এলে, তাদের হাসিমুখে আপ্যায়ন করেছে। তবে মেয়েদের নিজের সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা জরুরি। আমি যদি অসহায়, দুর্বল হিসেবে সকলের সামনে জহির করি নিজেকে জহির করি, লোকেও ওই চোখেই আমাকে দেখবে।

তখন আমাকে ঘিরে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের পরিবেশ তৈরি হবে। আমার ভাললাগা, ইচ্ছা সব আমাকেই দেখতে হবে। না হলে তো কিছুই করা যাবে না। কারও কিচ্ছু এসে যায় না। সময়ে এক এক করে প্রিয়জন হারিয়ে যাবে। মানুষ আরও বিচ্ছিন্ন হবে। কিন্তু এ নিয়ে যদি সারাক্ষণ মন খারাপ করি তা হলে নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনব

এই তো আজ সকাল থেকে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে আমার শাশুড়ি হাসপাতালে। তার সব দায়িত্ব আমার। মেয়ের খবর রাখা। ছেলেকে ফোন করা। সংসারের নানা কাজ...সবই চলছে।

এখন সবাই জোরে দৌড়চ্ছে। আবেগের কোনো দাম নেই। আগে আমার ইচ্ছা-অনিচ্ছা নিয়ে ভাবতে এক শ জন হাজির হয়ে যেত। এখন লোকে ফোনে পরামর্শ দিয়ে চলে যাবে। উল্টে বলবে ‘ওর মধ্যে সারাক্ষণ হতাশা’। এড়িয়ে যাবে। নিজেকে করুণার পাত্র যেন কোনো মেয়ে তৈরি না করে।

আমি এখন মর্যাদা নিয়ে খুব ভাবি। মানুষের কাছে সব কিছু থাকলেও সে মর্যাদাহীন হলে বিপদ। আমি মাটিতে পড়লে নিজেকেই নিজে উঠিয়ে নিয়ে চলি। সংসার আর কাজ দুটোতেই বিশ্বাস করি। ইন্ডাস্ট্রিতেও দীর্ঘদিন ধরে একা যুদ্ধ করছি। বড় প্রযোজনা সংস্থারা যে আমার সঙ্গে আছে। এমনও নয়।

আমি নিজেই নিজের জায়গা তৈরি করেছি। নতুনদের সুযোগ দিয়েছি। আমি আমার সবটা দিয়ে কাজ করি। কান্না মুছে হাসি ফিরিয়ে আনি। আমি বৃদ্ধি করতে না পারি, সৃষ্টি তো করি...

এ বিভাগের আরো খবর