ঈদে রাজধানীবাসীকে বিনোদন দিতে প্রস্তুত জাতীয় চিড়িয়াখানা। নগরীর মিরপুরে ১৮৬ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা এই বিনোদন কেন্দ্র বিশেষত শিশুদের জন্য অন্যতম বড় আকর্ষণ।
তবে ছোটদের জন্য এই বিনোদন কেন্দ্র হলেও তা টানে সব বয়সী মানুষকেই। তাই সব বয়সী মানুষই ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে এখানে মিলিত হয়। প্রতি ঈদের মতো এবারও এখানে লাখো দর্শনার্থীর সমাগম ঘটবে- এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। আর সে বিষয়টি মাথায় রেখে ঈদ সামনে রেখে চিড়িয়াখানাকে সাজানো হচ্ছে নতুন সাজে।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিনোদন কেন্দ্রে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে আসেন হাজারও দর্শনার্থী। আর উৎসবের দিন এলে তো কথাই নেই। তাই এবারের ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দর্শনার্থীদের জন্য জাতীয় চিড়িয়াখানা সার্বিকভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
ঈদে দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাতে মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানার ভেতরে করা হয়েছে রংকরণ ও পরিচ্ছন্নতার কাজ। ছবি: নিউজবাংলা
এছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, মানসম্পন্ন খাবারের ব্যবস্থাসহ আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে পুরো চিড়িয়াখানাকে। এবারের ঈদের ছুটিতে এখানে প্রায় ৫ লাখ দর্শনার্থীর আগমন ঘটবে বলে প্রত্যাশা তাদের।
জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে আমাদের প্রধান লক্ষ্য থাকে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি। তারা যেন সুস্থ ও নিরাপদভাবে চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করে বেরিয়ে যেতে পারেন সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ‘ইতোমধ্যে আমরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব সংস্থাকে চিঠি দিয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও কথা বলেছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে ঈদের সময়টা অধিকসংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্য চিড়িয়াখানার ভেতরে ও বাইরে দায়িত্বে থাকবেন। এছাড়া সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে।’
ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে আমরা চিড়িয়াখানা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছি। কাজটা করা হয়েছে মূলত দুইভাবে। প্রথমত আমরা প্রাণীদের থাকার শেড ও শেডের বাইরের স্থানগুলো পরিষ্কার করে দুগন্ধমুক্ত করেছি। দ্বিতীয়ত চিড়িয়াখানার বিভিন্ন স্থানে রং করে সোন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হয়েছে।
‘এছাড়া দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে বাড়ানো হয়েছে দিকনির্দেশনামূলক সাইনবোর্ডের সংখ্যা। ইতোমধ্যে অনেক জায়গায় দিকনির্দেশক নতুন সাইনবোর্ড লাগানো হয়ে গেছে।
‘চিড়িয়াখানার মূল প্রবেশ মুখ সাজানো হয়েছে রঙিন পতাকা দিয়ে। আর আশপাশ নতুন রংয়ে রঙিন করা হয়েছে। এছাড়া দর্শনার্থীরা যাতে প্রাণীদের একদম কাছে চলে যেতে না পারে সেজন্য দশ হাত দূর দিয়ে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে।’
চিড়িয়াখানার এই পরিচালক আরও বলেন, ‘আমাদের এখানে কিছু স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকবে। তারা দর্শনার্থীদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে সহায়তা করবে। এছাড়া ঘুরতে আসা বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা থাকবে। চিড়িয়াখানার তথ্যকেন্দ্র থেকে এই চেয়ার পাওয়া যাবে।
‘দর্শনার্থীরা যাতে পর্যাপ্ত পানির সুবিধা পান সেজন্য পুরনো কল মেরামত করে পর্যাপ্ত পানি সরবারাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া এখানে চারটি গুচ্ছ টয়লেট আছে। প্রতিটি গুচ্ছে ৯-১০টি টয়লেট আছে। ঈদ উপলক্ষে নতুন করে টয়লেট তৈরির সুযোগ অবশ্য আমাদের নেই। তবে আমাদের যেগুলো টয়লেট আছে সেগুলোই মেরামত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে মান উন্নত করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বরাবরই চিড়িয়াখানার ভেতরে অবস্থিত খাবারের দোকানগুলো পরিদর্শন করি। এবার ঈদেও সেই বিষয়টিতে আমরা লক্ষ্য রাখছি, যাতে দর্শনার্থীরা ন্যায্য দামে ভালো মানের খাবার খেতে পারেন। এছাড়া খাবারের দোকানগুলোতে নতুন চেয়ার-টেবিল সরবরাহ করা হয়েছে।’
জাতীয় চিড়িয়াখানায় এবারে কোনো নতুন প্রাণী সংগ্রহ করা হয়নি বলেন জানান পরিচালক। একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গত অর্থবছরে আমরা কিছু প্রাণী ক্রয় করেছি; সেগুলো থাকবে। যেমন অস্ট্রেলিয়া থেকে রেড ক্যাঙারু, নীল ওয়াইল্ড বিস্ট, অ্যারাবিয়ান লামা, আফ্রিকার সাদা পেলিক্যান পাখি ও সিংহ।
‘এছাড়া কয়েক মাস আগে একটি জেব্রা ও জলহস্তী বাচ্চা প্রসব করেছে। শিশুরা এই বাচ্চা প্রাণী দেখলে আনন্দ পাবে। চিড়িয়াখানায় একটি শিশুপার্ক আছে, একটি জাদুঘর আছে, অ্যাকুরিয়াম আছে। সেখানেও দেখার অনেক কিছু আছে। আশা করছি শিশুরা নিরাশ হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি এবার ঈদের ছুটিতে ৪/৫ দিনে প্রায় ৫ লাখ দর্শনার্থী আসবে। এর মধ্যে ঈদের দিনই ১ লাখ ২৫ হাজারের বেশি দর্শনার্থীর আগমন ঘটবে। চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে অবশ্য দর্শনার্থী কিছুটা কমে যেতে পারে। তবে আবহাওয়া অফিসের মাধ্যমে আমরা জেনেছি যে ঈদের সময় বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তাই আমরা নিরাশ হচ্ছি না।’
দর্শনার্থীদের প্রবেশ মূল্য আগের মতোই থাকছে। দুই বছরের ঊর্ধ্বের বয়সী সবাইকে ৫০ টাকার টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হবে। আর চিড়িয়াখানার ভেতরে অবস্থিত প্রাণী জাদুঘরে প্রবেশমূল্য ১০ টাকা।