কোক স্টুডিও বাংলার দ্বিতীয় মৌসুমের ‘নাহুবো’ গানে কোনো খারাপ বা বাজে কথা নেই, যাতে হাজং সম্প্রদায় লজ্জিত হবে।
গানটি প্রকাশ হওয়ার পর যারা এর ভাষা ও কথা নিয়ে সমালোচনা করছেন তাদের উদ্দেশে এই বার্তা দিয়েছেন গানের হাজং ভাষার অংশের লেখক অনিমেষ রায়।
হাজং সম্প্রদায়ের অনিমেশ এই গানের শিল্পীও। তার সঙ্গে গানটি লেখায় অংশ নেন শিল্পী সোহানা রহমান। ‘নাসেক নাসেক’ গান দিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়া অনিমেষ নতুন গানের মাধ্যমে নিজের জাতিগোষ্ঠী হাজংয়ের সংস্কৃতি তুলে এনেছেন।
ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমি জানি ভাষাগত কারণে আপনাদের অনেকেরই খুব কষ্ট হচ্ছে এটাকে সহজে বুঝতে। সেটার জন্য আমি দুঃখিত। তবে এটুকু বলতে পারি যে, আমি কোনো বাজে কথা বা খারাপ কথায় এই গানটি রচনা করিনি, যার জন্য আমার হাজং সম্প্রদায় লজ্জিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘দয়া করে আমার ভাষা নিয়ে কেউ বাজে কথা বলবেন না। আমি এতোটা বাজে রুচির মানুষ নই । গান ভালো না লাগতেই পারে। কারণ গানটা আমি আমার ভাবনা, দর্শন,আর আমার রুচিবোধ থেকে লিখেছি এবং গেয়েছি। সেদিক থেকে সবার ভালো না লাগতেই পারে। আর এটাই স্বাভাবিক।
‘তবে, এখানে আমার জাতিসত্তার প্রতি যদি কোনো বাজে প্রভাব পরে, তাহলে আমি এর জন্যে দোষী হয়ে যাচ্ছি। দয়া করে আমাকে এতো বড়ো দোষ দিবেন না। তাহলে হয়তো আর কেউ চেষ্টা করবে না- এটা প্রমাণ করতে যে, বাঙালি সংস্কৃতি কতোটা বৈচিত্র্যময় ।’
অনিমেষ লিখেছেন, ‘আমিও বাঙালি, বাংলাদেশি। কিন্তু যন্ত্রণাটা হলো আমার জন্মগত, বংশগত, সম্প্রদায়গত একটা ভাষা আছে সেটা হলো হাজং ভাষা। জন্মের পর থেকে এই ভাষায় কথা বলা শিখেছি।
‘কিন্তু কিছুটা বড় হওয়ার পর বুঝলাম যে আমার রাষ্ট্রীয় ভাষা বাংলা। শুরু করলাম আমার রাষ্ট্রীয় ভাষা শেখা বাংলা। সেই তখন থেকে এখন পর্যন্ত আমার কন্ঠ থেকে যতগুলো শব্দ এ সমাজের মানুষের কাছে পৌঁছেছে তার সিংহভাগ বাংলা।’
তিনি লিখেছেন, ‘ইদানিং তো আমার মনে হয় আমি একটা কথাও হাজং ভাষায় বলি না। সব বাংলায়। আর এটাই স্বাভাবিক। এতে আমি বা আমার হাজং ভাষাভাষী জনমানুষের বিন্দু মাত্র দুঃখ,যন্ত্রণা হয়না। কারন আমরা জানি আমরা বাঙালি। আমাদের এখনো হাজং ভাষার কোনো বর্ণমালা নেই
‘তাই খুব করে চেষ্টা করছিলাম যেন এই গানের মাধ্যমে যতটুকু পারি আমার এই ভাষাটাকে বাঁচিয়ে রাখতে। এটার জন্যে আমরা অনেকদিন ধরে বিভিন্ন পদক্ষেপও নিচ্ছি। সৌভাগ্যক্রমে কোক স্টুডিও আমাদের হাজং সম্প্রদয়ের (বাঙালির) জন্যে একটি সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে আসলো। আনন্দে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। এই বুঝি একটু সুযোগ পেলাম হাজং ভাষার অস্তিত্বকে একটু জানান দেবার,বাঁচিয়ে রাখবার।’
অনিমেষ লিখেছেন, ‘আমার কোনো কথায় আপানারা কোনোরকম কষ্ট পেলে আমাকে ক্ষমা করবেন। আরেকটা কথা, বাংলায় এ পর্যন্ত এতো বড়ো একটা জায়গায় মাত্র দুটি হাজং ভাষায় গান হয়েছে। আমি বলছিনা জোর করে ভালো লেগেছে বলতে। শুধু বলছি আমার সৃষ্টিকে ভালো লাগেনি বলতে গিয়ে যেন পুরো বাংলার ঐতিহ্যকে অসম্মান করে বসেন।’