জীবন তো একটা দৌড়। দৌড়াতে দৌড়াতে কেউ থেমে যায়, কেউ ছুঁয়ে ফেলে স্বপ্নকে। নাইমাকেও আমরা দৌড়াতে দেখি। রিকশা গার্ল সিনেমার বিভিন্ন অংশে নাইমা দৌড়াচ্ছেন তো দৌড়াচ্ছেন।
সিনেমায় নিজ গ্রাম পাকশীতে যে দৌড় শুরু হয়, ঢাকায় এসে সেই দৌড় তাকে পৌঁছে দেয় স্বপ্নের সীমানায়। আর দৌড়ের মধ্যেই ফুটে ওঠে তার জীবনের নানা স্তরের গতি-প্রকৃতি।
অমিতাভ রেজা পরিচালিত রিকশা গার্ল সিনেমার মূল চরিত্র নাইমা। অর্থ সংকটে থাকা এক পরিবারের তরুণী তিনি। দুঃখ-কষ্ট-অভাব পরিবারের অন্য সদস্যদের দমিয়ে রাখলেও তাকে করে তুলেছে জেদি।
সিনেমার প্রথমেই বুঝিয়ে দেয়া হয় নাইমা অনেক ভালো আঁকেন এবং তার আঁকার ভঙ্গীকে প্রথমে আলপনা মনে হলেও পরে সেটি রিকশা পেইন্টিং বলেই প্রতিষ্ঠিত হয়। নাইমার বাবা রিকশা চালক, তাই তার রিকশা পেইন্ট নিয়ে আগ্রহ থাকাটা বেশ যৌক্তিকও।
রিকশা গার্ল সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন নভেরা রহমান। ছবি: সংগৃহীত
নাইমা কিছুটা বাবা ঘেঁষা সন্তান। মায়ের চেয়ে তার বাবার সঙ্গে জমে ভালো। বাবাও তার মেয়ের পেইন্টিং নিয়ে গর্বিত। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করা মেয়েকে তিনি উৎসাহ দিয়ে বলেন, ‘আঁকাআকিটা যেন ছাড়িস না মা’। বাবার এ উৎসাহটাই নাইমাকে নিয়ে যায় স্বপ্নের কাছাকাছি। কঠিন মুহূর্তে বাবার এ কথাটাই অনুপ্রেরণা হয়ে থাকে নাইমার।
নাইমার কঠিন জীবনকে রঙিন ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন পরিচালক। সিনেমা শুরু হওয়া থেকে শেষ পর্যন্ত রয়েছে রঙের খেলা। পোশাকেও যেন রঙিন ও ধূসর জীবনের প্রতিচ্ছবি ফুঠে ওঠে, সেই চেষ্টা ছিল নির্মাতার।
রিকশা গার্ল সিনেমার অভিনয়শিল্পী। ছবি: সংগৃহীত
রুপকের আশ্রয় রয়েছে প্রপস ও কম্পোজিশনে। ঢাকায় আসার পরেই নাইমা যেখানে কাজ করতে যান, সেই সোসাইটিকে পরিচালক বুঝিয়েছেন অল্প কিছু দৃশ্যের মাধ্যমে। যাতায়াত ভাড়া বৃদ্ধি, অল্প করে রাজনীতি, উঁচু বিল্ডিংয়ে বসে শহর দেখা কিংবা ঘরের মধ্যে থেকে একটি পাখিকে সাহায্য করতে না পাড়ার ঘটনার মধ্যে দিয়ে সমাজের নানা পরিস্থিতিকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন অমিতাভ।
কিছু যে সমস্যা নেই, তা অস্বীকার করেননি পরিচালক। লিট ফেস্টের তৃতীয় দিন অর্থাৎ ৭ জানুয়ারি রাতে সিনেমাটি প্রদর্শিত হয়। প্রদর্শন শেষে অমিতাভ বলেন, ‘কিছু জায়গায় সমস্যা আছে, সেটা আগামী মাসে (ফেব্রুয়ারি) মুক্তির আগে ঠিক করে নেব।’
লিট ফেস্টে রিকশা গার্ল সিনেমা প্রদর্শনীর পর পরিচালকসহ পুরো ইউনিট। ছবি: নিউজবাংলা
পরিবারের জন্য কিছু করার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ঢাকায় আসে নাইমা। সে কাজে পাস করে যান। নিয়তি যখন তাকে হেড়ে যাওয়ার পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়, তখনই নাইমা সেই বাধা ডিঙিয়ে এগিয়ে যান আরও একধাপ। স্বপ্ন দেখায় শুন্যে উড়াল দেয়ার।