বলিউড তারকা নোরা ফাতেহিকে ঢাকায় আনার ক্ষেত্রে আয়োজকরা সত্য গোপনের অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, উইমেন লিডারশিপ করপোরেশনের সভাপতি ইশরাত জাহান মারিয়া ডকুমেন্টারি শুটিংয়ের আড়ালে বাণিজ্যিক লাভের উদ্দেশে তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।
মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে এমনটা দাবি করেন মাসিক বিজনেস ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন ‘মিরর’-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও প্রকাশক শাহাজাহান ভূঁইয়া রাজু। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, পাওনা পরিশোধ না করে মিথ্যা মামলা দিয়ে তার সুনাম ক্ষুণ্ন করেছেন মারিয়া।
তবে ইশরাত জাহান মারিয়া পাল্টা অভিযোগ করে বলেছেন, রাজু প্রতারণা করে তার কাছ থেকে চেক নিয়েছেন। ওই চেক ফেরত পেতে তিনি আরেকটি মামলা করেছেন।
মিরর গ্রুপের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ হোসেনসহ প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মারিয়া কী ধরনের সত্য গোপন করেছেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শাহাজাহান ভূঁইয়া বলেন, নোরা ফাতেহিকে বাংলাদেশে আনার অনুমতি ছিল ডকুমেন্টারি শুটিংয়ের জন্য। কিন্তু উইমেন লিডারশিপ করপোরেশন এর আড়ালে বাণিজ্যিক লাভের উদ্দেশ্যে বিনা অনুমতিতে উচ্চ মূল্যে টিকিট বিক্রি ও অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রামের আয়োজন করেছে।
‘এ ক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে। কারণ উল্লেখ করা উদ্দেশ্যের বাইরে গিয়ে প্রোগ্রাম করতে পারেন না। টিকিট বিক্রিরও সুযোগ নেই। এটাই তো প্রতারণা।’
সংবাদ সম্মেলনে রাজু জানান, মিরর গ্রুপ নোরা ফাতেহিকে বাংলাদেশে আনার কথা ছিল। কিন্তু সরকারের অনুমতি না পেয়ে গ্রুপটি এই আয়োজন থেকে সরে আসে এবং নোরা ফাতেহিকে লিগ্যাল নোটিশ দেয়। মিরর গ্রুপের চুক্তি বহাল জেনেও উইমেন লিডারশশিপ করপোরেশনের সভাপতি ইশরাত জাহান মারিয়া নোরাকে নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করেন।
রাজু লিখিত বক্তব্যে বলেন, নোরা ফাতেহিকে নিয়ে ৯ সেপ্টেম্বর মিরর গ্রুপ একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করার কথা ছিল। এ বিষয়ে নোরা ফাতেহির সঙ্গে অগ্রীম সম্মানি পরিশোধ সাপেক্ষে মিরর গ্রুপের চুক্তি হয়। কিন্তু দেশে ডলার সংকটের কারণ দেখিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় নোরার আগমনের অনুমতি দেয়নি।
নিষেধাজ্ঞার কারণে পরে পাওনা ফেরত চেয়ে নোরাকে লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু মিরর গ্রুপের চুক্তি বহাল জেনেও ইশরাত জাহান মারিয়া ১৮ নভেম্বর নোরা ফাতেহিকে নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
রাজু বলেন, ‘লিগ্যাল নোটিশ ও আমাদের পাওনার বিষয়টি জানতে পেরে মারিয়া স্বেচ্ছায় আমার সঙ্গে দেখা করেন। তিনি ওই পাওনা পরিশোধ করবেন বলে মিরর গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করেন এবং তিনটি চেক দেন।
‘চুক্তির শর্ত অনুযায়ী আমরা লিগ্যাল নোটিশ প্রত্যাহার করে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে এডিসহ রেজিস্ট্রি ডাকযোগে চিঠি পাঠাই। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী মারিয়া টাকা পরিশোধ না করে উল্টো মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি এবং আমার ব্যবসায়িক সুনাম ক্ষুণ্ন করেছেন।’
রাজুর দাবি, ইশরাত জাহান মারিয়া ১৬ নভেম্বর রাত আনুমানিক ১২টা ৪৫ মিনিটে তাকে ফোন করে জানান যে তার সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী তিনি পাওনা টাকা পরিশোধ করতে চান। তিনি পরদিন সকাল সাড়ে ১১টায় তার অফিসে এসে টাকা পরিশোধ করার কথা জানান।
রাজু বলেন, ‘সকালে মারিয়া মোবাইলে ম্যাসেজ করে বলেন- আমি নির্ধারিত সময়ে আসছি, আপনি থাকেন। ওই সময়ে তিনি আসেননি। তবে সমসাময়িক সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে আমাকে জানান যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমাকে তাদের সঙ্গে ডিবি অফিসে যেতে হবে।
‘ডিবি অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমার নামে মারিয়া মামলা করেছেন। যে মামলা হয়েছে সেটা মিথ্যা। আদালতে বলেছি যে, আমরা চুক্তি করেছি এবং চেকের কপি আছে। তখন আদালত আমাদের জামিন দিয়েছে।’
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ‘মিরর’ এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক শাহাজাহান ভূঁইয়া রাজু। ছবি: নিউজবাংলা
নিজের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে রাজু বলেন, ‘উনি যে চেক দিয়েছেন তা দুইবার ডিজঅনার করেছে। তারপরও আমরা সহযোগিতা করতে চেয়েছি। এখানে কোনো চাঁদাবাজির বিষয় ছিল না। উনি আসলে আমাদের পেমেন্ট দেননি।
‘আমরা টিকিট বিক্রি করেছি, পুরস্কারের নামে টাকা নিয়েছি- এসব অভিযোগও সত্য নয়।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইশরাত জাহান মারিয়ার সঙ্গে মঙ্গলবার রাতে যোগাযোগ করলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাজু আমাদের অনুষ্ঠান আয়োজনে বিবিধভাবে সহায়তা করার কথা ছিল। সে উদ্দেশ্যেই তাকে ব্যাংক চেক দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি কোনো সহায়তাই করেননি। তিনি প্রতারণা করে আমার কাছ থেকে চেকগুলো নিয়েছিলেন।
‘নোরা ফাতেহিকে রাজু যে টাকা দিয়েছেন এমন কোনো ডকুমেন্ট তিনি বা মিরর গ্রুপ দেখাতে পারেননি। তিনি প্রতারণা করে আমার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে চেয়েছেন। এখন ওই চেকগুলো ফেরত পেতে আজ (মঙ্গলবার) জজকোর্টে রাজুর বিরুদ্ধে আমি আরেকটি মামলা করেছি।’
গত রাতে রমনা থানায় রাজুর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে আরেক ব্যক্তি পৃথক একটি মামলা করেছেন বলে জানান মারিয়া।