বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্বাধীন চলচ্চিত্রের পথে বাধা এফডিসির ‘এনওসি’

  •    
  • ৩ নভেম্বর, ২০২২ ১৪:৪০

এফডিসি থেকে এনওসি নিতে চাইলে কোনো সিনেমার প্রযোজকের হতে হয় প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সদস্য। এ সদস্য পদ পেতে দিতে হয় ১ লাখ ৩ হাজার টাকা। এখানেই আটকে যান স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতারা।

পূর্ণ্যদৈর্ঘ্য, স্বল্পদৈর্ঘ্য, প্রামাণ্য বা তথ্যচিত্র সেন্সরের জন্য প্রয়োজন হয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) অনাপত্তিপত্র (এনওসি)। আবেদন করা চলচ্চিত্রটি নির্মাণে বিএফডিসির কোনো পাওনা আছে কি না, সেটাই এনওসিতে জানানো হয়।

এফসিডির কাছ থেকে ‘কোনো পাওয়া নেই’ মর্মে প্রত্যয়ন পেলে সিনেমার সেন্সরে প্রদর্শন ও সেন্সর সার্টিফিকেট দেয় সেন্সর বোর্ড। আর প্রত্যয়নপত্র না দিলে সংশ্লিষ্ট সিনেমাকে সেন্সরে জমা নেয় না সেন্সর বোর্ড।

এফডিসি থেকে এনওসি নিতে চাইলে কোনো সিনেমার প্রযোজকের হতে হয় প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সদস্য। সমিতি সূত্র নিউজবাংলাকে জানিয়েছে, এ সদস্যপদ পেতে দিতে হয় ১ লাখ ৩ হাজার টাকা।

এখানেই আটকে যান স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতারা। নানা উপায়ে টাকা জোগাড় করে সিনেমা নির্মাণের পর লাখ টাকায় প্রযোজক পরিবেশক সিমিতির সদস্য হওয়া স্বাধীন চলচ্চিত্রের প্রযোজকদের জন্য কঠিন।

অথচ এফডিসির এনওসি নিয়েই সিনেমা সেন্সর করতে হবে- এমন কোনো আইন চলচ্চিত্র সেন্সরশিপ আইন (১৯৬৩) এবং দ্য ফিল্ম সেন্সরশিপ (এমেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট (২০০৬) এ উল্লেখ নেই।

‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের অনাপত্তিপত্র’র কথা উল্লেখ আছে সেন্সর বোর্ডের আবেদন ফরম পূরণের নিয়মাবলির ‘আবেদন করার পূর্বপ্রস্তুতি’ বিভাগে।

এনওসির মারপ্যাঁচে এখনও আটকে আছে নির্মাতা রেজা ঘটকের হরিবোল সিনেমাটি। রেজা ঘটক নিউজাংলাকে জানান, ২০১৯ সালে তিনি হরিবোল সিনেমাটি সেন্সরে জমা দেন। এফডিসির এনওসি নেননি বলে সিনেমাটির সেন্সর পাওয়া নিয়ে তৈরী হয়েছে জটিলতা।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি কেন এফডিসির এনওসি নিতে যাব। আমি সিনেমাটি বানিয়েছি এফডিসির বাইরে, এমনকি এফডিসির কোনো সুযোগ-সুবিধাই নেইনি। আমি সিনেমা বানিয়েছি, সরাসরি সেন্সরে জমা দেব। এফডিসির এনওসি নিতে গিয়ে পরিচালক সমিতি, প্রযোজক সমিতি এবং এফডিসির ক্লায়েন্ট হতে হবে। এ রকম কোনো পদ্ধতির কথা সেন্সর অ্যাক্টে উল্লেখ নেই।’

যারা কোনো সমিতির সদস্য নন, এফডিসির ক্লায়েন্ট নন, তাদের কীভাবে এনওসি দেয়া হবে, তার একটি নিয়ম উল্লেখ আছে এফডিসির সেবার তালিকায়। সেই নিয়মে প্রযোজক সমিতির প্রত্যয়নের পাশাপাশি পরিচালক সমিতির প্রত্যয়নের কথাও বলা হয়েছে।

পরিচালক সমিতির প্রত্যয়ন পেতে চাইলে তাকে পরিচালক সমিতির সদস্য হতে হবে এবং সেই সদস্যপদ নিতে সমিতিতে দিতে হয় ৭৫ হাজার টাকা। পুরো বিষয়টিকে ‘চক্র’ বলে দাবি করছেন নির্মাতা রেজা ঘটক।

এফডিসির এনওসি ছাড়া সেন্সর সনদ পাওয়া নিয়ে জটিলতার আরেকটি ঘটনা ফেসবুকে জানিয়েছিলেন চলচ্চিত্রকর্মী স্বজন মাঝি। তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘আমার চেনা একজন নির্মাতা বন্ধু সরকারি অনুদানে স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। ভদ্রলোক পাহাড়ে বসবাসকারী একটি স্বতন্ত্র জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে কাজ করবেন বলে পাহাড়ে শুট করতে গেলেন। শুটিং শেষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ফুটেজ জমা দিয়ে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা আনতে গেলেন। তাকে এফডিসির ছাড়পত্র জোগাড় করতে বলা হলো।

‘এফডিসিতে গিয়ে জানতে পারলেন ছাড়পত্র নিতে গেলে আগে তাকে এক লাখ টাকা জমা দিয়ে এফডিসির ক্লায়েন্ট হতে হবে। তিনি কর্তৃপক্ষকে জানালেন, ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য আমার তো এফডিসিতে কোনো কাজ নাই। আমার তো রাঙ্গামাটি বান্দরবানের পার্বত্যাঞ্চলে লোকেশন। এফডিসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রতি-উত্তরে বললেন, আপনি চাইলে এফডিসিতে রাঙ্গামাটির সেট বানিয়ে শুট করতে পারেন। ভদ্রলোক বললেন, এটা প্রামাণ্যচিত্র ভাই, সেট বানিয়ে শুট করার সুযোগ নাই!

‘যাই হোক, শেষ পর্যন্ত সেই ভদ্রলোককে বাধ্যতামূলক এক লাখ টাকা জমা দিয়ে এফডিসির ক্লায়েন্ট হয়ে ছাড়পত্র সংগ্রহ করে মন্ত্রণালয়ের নিয়ম মানতে হয়েছিল।’ (স্ট্যাটাসের সংক্ষিপ্ত অংশ)

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এফডিসির এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, তারা প্রযোজক সমিতির প্রত্যয়ন চান, পরিচালক বা শিল্পী সমিতির কোনো প্রত্যয়ন তাদের প্রয়োজন হয় না।

এফডিসি থেকে এনওসি কেন নিতে হবে, জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘৩৫ মিলিমিটার ফিল্মে যখন সিনেমা নির্মাণ করা হতো, তখন এফডিসিতে অনেকেই সেবা নিয়ে টাকা বাকি রেখে সিনেমা নির্মাণ করেছেন এবং সিনেমা মুক্তিও দিয়েছেন। পরে আর টাকা পরিশোধ করেননি। এ সুযোগ যেন কোনো প্রযোজক আর না নিতে পারেন, সে জন্যই এনওসি নেয়াটা জরুরি।’

সে ক্ষেত্রে প্রযোজক সমিতির প্রত্যয়ন বা এফডিসির ক্লায়েন্ট হওয়া কেন জরুরি, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যারা এফডিসির ক্লায়েন্ট নন বা কোনো সমিতির সদস্য নন, তাদের জন্য প্রযোজক সমিতির প্রত্যয়ন গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এতে করে আমরা দেশীয় সিনেমার মাদার অর্গানাইজেশন থেকে জানতে পারি যে আবেদনকারী একজন প্রযোজক এবং নথি সংরক্ষণের জন্যও এ প্রক্রিয়া জরুরি।

‘এ ছাড়া প্রযোজক সমিতির প্রতিনিধি এফডিসির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। আট সদস্যের পর্ষদের সাতজনই সরকারি কর্মকর্তা, একজন প্রযোজক সমিতির প্রতিনিধি।’

এখন অবশ্য প্রযোজক সমিতির কোনো কমিটি নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সমিতিটি এখন পরিচালনা করছেন মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা সরকারি কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এফডিসির সেই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘যারা সিনেমা এফডিসির বাইরে বানান, তাদের জন্য আমরা এনওসি ফি নিই ১৫ হাজার টাকা। ১ লাখ টাকা দিয়ে এফডিসির তালিকাভুক্ত হতে হয়। যারা তালিকাভুক্ত হন, তারা যদি ১ লাখ টাকার কম সেবা নেন, তাহলে বাকি টাকা আমরা তাকে দিয়ে দেই, ১ লাখের বেশি লাগলে বাকি টাকা তার কাছ থেকে সংগ্রহ করি। এ ক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে আলাদা করে এনওসি ফি রাখা হয় না।’

সেপ্টেম্বর মাসে স্বাধীন চলচ্চিত্র সাঁতাও পেয়েছে সেন্সর ছাড়পত্র। এর পরিচালক খন্দকার সুমন কোনো সমিতির সদস্য ছিলেন না। কিন্তু এনওসি পেতে তাকে হতে হয়েছে প্রযোজক সমিতির সদস্য।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং সে সময়ের তথ্যসচিবকে দেয়া নির্মাতা খন্দকার সুমনের চিঠি। ছবি: সংগৃহীত

খন্দকার সুমন গত ৩১ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং সে সময়ে তথ্য সচিবের দায়িত্বে থাকা মকবুল হোসেন বরাবর দুটি চিঠি ইস্যু করেন। যেখানে তিনি এফডিসির এনওসি নিতে একজন স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতার সমস্যার কথা তুলে ধরেন।

সুমন নিউজবাংলাকে জানান, চিঠি পেয়ে মকবুল হোসেন চিঠির মারফত এফডিসির এনওসির বিষয়টি সেন্সর আইনে আছে কি না জানতে চান সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মো. সাইফুল্লার কাছে। মো. সাইফুল্লা চিঠির মাধ্যমে মকবুল হোসেনকে জানান, এমন কোনো আইন সেন্সর অ্যাক্টে নেই।

নিউজবাংলাও মো. সাইফুল্লার কাছে জানতে চেয়েছিল সেন্সর পেতে এফডিসির এনওসি নেয়ার প্রক্রিয়াটি সেন্সর আইনে আছে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি কোনো আইনসিদ্ধ প্রক্রিয়া কি না সেটা বলার আগে বলতে চাই, এটা মন্ত্রণালয়ের (তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়) ইস্যু, এটা তারাই ভালো বলতে পারবে। তাদের সঙ্গে কথা বলেন।’

এফডিসির এনওসি নিয়ে কাজ করাকে সেন্সর বোর্ড তেমন সমর্থন করে না বলে শোনা যায় বোর্ড কর্মকর্তা ও বোর্ড সদস্যদের কাছে। তবে এনওসি ইস্যু করার মাধ্যমে এফডিসির কিছু আয় হয়, সে জন্য মন্ত্রণালয় থেকে পদ্ধতিটি চালু রাখতে বলা হয়েছে বলে নিউজবাংলাকে জানান সেন্সর বোর্ডের দুই কর্মকর্তা।

এ নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মো. নজরুল ইসলাম এবং উপসচিব সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।

এ বিভাগের আরো খবর