বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পরী, রাজ্য ও রাজের নতুন জন্মের গল্প

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৬ অক্টোবর, ২০২২ ১৮:১৫

রাজকে কখনও আয়োজন করে থ্যাংক ইউ বলা হয়নি। এত বড় একটা জার্নি, তুমি আমার সঙ্গে ছিলে, ছায়ার মতো ছিলে, থ্যাংক ইউ রাজ। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। এটা একটা নতুন জন্ম, আমার রাজ্য ও রাজের।

অভিনেত্রী পরীমনি এবার জন্মদিন পালন করেছেন স্বামী-সন্তান নিয়ে। নিজের বিশেষ এই আয়োজনে তিনি আয়োজন করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জীবনসঙ্গী রাজকে। ধন্যবাদ জ্ঞাপনের সেই অডিও-ভিডিওতে উঠে এসেছে পরীর জীবনের নানা ঘটনা ও মুহূর্তের কথা। সেগুলোই তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।

এই গল্পটা শুধুই আমার

এই গল্পটা শুধুই আমার ছিল, এক দুরন্ত পরীর, যে শুধুই উড়ে বেড়াত স্বপ্ন-কল্পনায়, এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে। ডুবে থাকত বন্ধু, আড্ডা, ফ্যাশন, ফ্যান-ফলোয়ার্স আর সিনেমার পর্দায় নিজেকে নতুন করে আবিষ্কারের নেশায়।

শুধু কি পর্দায়? জীবনও যে তার কম নয়।

কিন্তু জীবনের সিনেমায় আমার রিয়েল হিরোটা যে কই, যার সঙ্গে পথ কখনও ফুরায় না, চলতেই থাকে চলতেই থাকে। আচ্ছা কোনো গুনিন এসে হাতের রেখা গুনে যদি বলে দিত কোথায় যাচ্ছি আমি। কিন্তু প্রামিজ আর কোনো ভুল মানুষের কাছে যাব না।

আমার ওস্তাদ গিয়াসউদ্দিন সেলিম, আমার জন্য এক গুনিন নিয়ে এলেন। আর আমি মুখোমুখি হলাম সাদা পাঞ্জাবি পরা এক দুরন্ত যুবকের। কেন এমন লাগল তাকে দেখে। এ অস্থিরতার নাম কী?

একটা প্রেমের গল্প শুনবেন

ওস্তাদের অফিসে গুনিনের লুক টেস্ট। আমি গেলাম বিকেলবেলা, বিকেলবেলা থেকে সন্ধ্যা অব্দি আমাদের লুক সেট হলো, আমার বেসিক্যালি।

আর সেখানে পাগলটা ছিল। আমাদের লুক সেট হলো প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে। পরে আমাদের ডায়ালগ রিহার্সাল শুরু হলো।

ডায়ালগ রিহার্সাল করতে গিয়ে আমাদের এমন একটা সিকোয়েন্স রিহার্সাল করতে দেয়া হয়, সেটার মধ্যে রাজের পার্টের ডায়ালগটা এমন ছিল- ‘জিন পরির কথা থোও, তুমি আমার বুকে আসো’। প্রথমেই যদি এমন একটা ডায়ালগ হয় অপরিচিত মানুষের সঙ্গে, আমি একটু ঘাবড়ে দিয়েছিলাম রাজকে।

আমাদের সেকেন্ডে যেদিন দেখা সেদিন প্রচণ্ড বৃষ্টি ছিল। আমাদের বাসায় আসার কথা শুধু ওস্তাদের (গিয়াসউদ্দিন সেলিম)। পুরো স্ক্রিপ্টটা নিয়ে, গল্পটা নিয়ে বসার জন্য। ড্রইংরুমে গিয়ে দেখি আরও একটি মানুষ। আমি জানতাম না রাজ আসবে। হতভম্ব হয়ে গেলাম। আমি শাড়ি পরা ছিলাম। এ ছবিটা সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোড করেছিলাম, ক্যাপশন ছিল- ‘একটু ঝড় বৃষ্টি’।

কী একটা কানেকশন

রান্নাবান্না হলো, আমরা খাওয়াদাওয়া করতে গেলাম, টেবিলে আমরা সবাই বসলাম, ওস্তাদ বসল, আমি বসলাম। তারপর যেটা হয়, দেখলাম ও (রাজ) বাম হাত দিয়ে খাচ্ছে। কারণ ওর ডান হাত ভাঙা ছিল তখন অ্যাক্সিডেন্টের পর।

এটা দেখার পর, আমি অনেক কিছু ভাবিনি, আমার ওস্তাদ আছে সামনে, আমি হুট করে বললাম, এই তুমি বাঁহাত দিয়ে খাচ্ছ, তুমি খেতে পারছ?

আমি কী করলাম, আমি আমার প্লেট সরিয়ে বললাম যে, আমি তোমাকে খাইয়ে দিই? এটা বলে ওর প্লেটটা নিলাম, ও দেখলাম যে তাকাল, হা করল, আমিও খাইয়ে দিলাম।

ওর জন্য কেমন একটা মায়া লাগা শুরু হয়ে গেল। বাচ্চা মানুষের মতো খেলো আমার হাতে। ওখান থেকে আমি জানি না কী একটা কানেকশন আসলে তৈরি হলো, আমি টের পাচ্ছিলাম।

জিনটা হলো রাজ

অনেক খোলা একটা মাঠের মধ্যে শুটিং হয়, একটা বটতলা, গুনিনের আখড়া। আমরা বটতলার মধ্যে একটা জিনে আমাকে ধরছিল, জিনটা হলো রাজ। কোনোভাবেই জিন ছাড়ানো যাচ্ছিল না/ আমার আশপাশ থেকে তাড়ানো যাচ্ছিল না তাকে।

যেকোনো ছুঁতোয় তার আশপাশে আমার থাকা চাই। দিনে দিনে এমন হলো ও আমার চোখের সামনে না থাকলে কেমন পাগল পাগল লাগত, অস্থির লাগত। আমার হয়তো শুটিং চলছে, ওর শুটিং নেই, কিন্তু কী হচ্ছে, ওকে বাধ্যতামূলক সেটে থাকতে হবে, না হলে আমার শুটিং হচ্ছে না, পারছি না শুটিং করতে।

এটা সামহাউ, ওস্তাদ মানুষ তো, ওস্তাদ বুঝে গিয়েছিল। ওস্তাদ সাপোর্ট করা শুরু করলে একটা সময়। থাকুক, দুইটা পাগল একসঙ্গে থাকুক। আমাদের অনেক চান্স দিল ওস্তাদ, থ্যাংক ইউ।

আমার অনেক আজব আজব জিনিস ইচ্ছে করত, আমার সব ইচ্ছেগুলোতেই ও হ্যাঁ বলত, ওর কোনো কিছুতেই 'না' ছিল না। আমরা শুটিং শেষ করে পানিতে নামতে চাইলাম, ও না করল না, ও আমার সঙ্গে পানিতে নেমে গেল। তারপর আমরা মধ্যদুপুরে পুকুরের মধ্যে সাঁতার কাটলাম অনেকক্ষণ।

লোকেশন লিভড, চরিত্র রাজ-পরী

বিষয়টা এমন ছিল যে, আমি ওকে বিদায় দেব, নিচে নামিয়ে দেব। আমরা লিফটে একসঙ্গে উঠলাম, নিচে যাওয়ার পরে ও বলল, চলো তোমাকে ওপরে দিয়ে আসি। লিফটটা ওপরে আসার পর আমি বললাম, চলো তোমাকে নিচে দিয়ে আসি। এভাবে ওঠানামা করছে লিফটটা।

একটা সময় রাজ বলে যে, লিফটটা বন্ধ হয়ে যাক, আমরা এখানে আটকে যাই। আমি বললাম লিফটের মধ্যে কেন আটকাতে হবে, জীবনের মধ্যে আটকে যাই চলো। এভাবে আসলে ওকে প্রোপজটা করা।

আমার সবকিছু ওর হয়ে গেল

রাজ আম্মুকে গিয়ে বলল, পরীকে ছাড়া আমি থাকতে পারছি না। আম্মু রেগে যাওয়ার বদলে খুশি হলেন। আমাদের সবার আড়ালে বিয়ে হয়ে গেল। আমার সবকিছু ওর হয়ে গেল।

আমার জীবনে আরও একজন আসছে

একদিন সকালে আমি অনুভব করলাম, আমার জীবনে আরও একজন আসছে। ঘুমন্ত রাজকে বললাম, রাজ, আরেকজন আসছে, আমি টের পাচ্ছি। রাজ ঘুমের মধ্যে বলল, আসুক, এই যে আমার বালিশের পাশে ঘুমাবে।

ও এত সহজ করে বলল, আমি ওর ঘুমন্ত মুখটাই দেখছিলাম।

কনফার্ম হওয়ার জন্য আমরা ডাক্তারের কাছে গেলাম। যখন আলটাসনো রুমের মধ্যে প্রথম বাবুর হার্টবিট শুনি, আমি শুধু রাজের রি-অ্যাকশন দেখছিলাম। ও একবার পর্দা খুলবে না কি করবে, ও অস্থির হয়ে গেল। ও আমার হাত ধরে টেনে ওঠাল, আমাকে জড়িয়ে ধরল, ধরার পরে যেটা হলো যে, আশপাশের সবাই আমাদের দেখছে, ও বাচ্চা মানুষের মতো কান্না শুরু করে দিল।

তারপরে যেটা হলো, ও আমাকে পা মাটিতে ফেলতে দিচ্ছে না এ রকম একটা অবস্থা। কোলে তুলবে না মাথায় তুলবে না ঘাড়ে তুলবে এ রকম একটা অবস্থা।

একটা হুইলচেয়ার নিল, সেখানে বসাল, হাসপাতালের পুরো চত্বরটা ঘুরল আমাকে নিয়ে। ওই ছবিটি ও প্রথম প্রকাশ করে জানিয়েছিল যে ও বাবা হচ্ছে, আমি মা হচ্ছি।

আমার পাগলা

প্রেগনেন্সির শুরুর দিকটা প্রায় ঘরবন্দি হয়ে গিয়েছিলাম আমি। কখনো বারান্দায়, কখনো ছাদে গিয়ে পাখিদের ছবি তুলতাম, আর ও আমার সঙ্গে থাকত। আমার রান্না ওর খুব পছন্দ। প্রেগনেন্ট অবস্থায় আমি যখন রান্না করতাম ও আমার পিছে পিছে থাকত। আমি রান্না করতাম ও স্ক্রিপ্ট পড়ত।

আজব আজব খাবারের ইচ্ছে হতো আমার, হয়তো সেটা মাঝরাতে, কিন্তু রাজ ম্যানেজ করে ফেলত। আমার রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেতে একদম ভালো ভালো লাগে না, ও আমাকে নিয়ে বের হতো, আমি বসে থাকতাম আর ও খেত।

বাবু তখন পেটে, এক মাস, আমি কাগজের বউ-এর শুটিং করি আউটডোরে, মধ্যরাতে গাঁদা ফুল নিয়ে হাজির, শীতের রাত। ঝগড়া করে বারবার ও আমাকে রেখে চলে যেত। সেদিনও শুটিংয়ে ঝগড়া করে আমাকে রেখে চলে গিয়েছিল। কিন্তু এক দিন ঝগড়া করে দূরে থাকতে পারিনি। আমার পাগলা।

নানু ভাই, এই একটা মানুষ, আমার খুব আপনজন। রাজের সঙ্গে নানুর সম্পর্ক বন্ধুর মতো। আমার জীবনের তিনটা খুঁটি নানু, রাজ, রাজ্য।

এটা একটা নতুন জন্ম

রাজকে কখনও আয়োজন করে থ্যাংক ইউ বলা হয়নি। এত বড় একটা জার্নি, তুমি আমার সঙ্গে ছিলে, ছায়ার মতো ছিলে, থ্যাংক ইউ রাজ। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। এটা একটা নতুন জন্ম, আমার রাজ্য ও রাজের।

এ বিভাগের আরো খবর