অনন্ত-বর্ষা অভিনীত সিনেমা দিন- দ্য ডে সিনেমার পরিচালক মোর্তাজা অতাশ জমজম শনিবার তার ইনস্টাতে আবারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অনন্ত জলিলকে। স্ট্যাটাসটি তিনি দিয়েছেন বাংলায়।
স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘আপনি বাংলাদেশের পর সিনেমাটির প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে আমার অনুমতি ছাড়াই মালয়েশিয়ায় সিনেমাটি মুক্তি দিয়েছেন এবং এখন আপনি এটি সিঙ্গাপুরে মুক্তি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
‘সৌভাগ্যক্রমে, অচিরেই ইরানের আদালতে আপনার প্রতারণার স্বরূপ উন্মোচিত হবে এবং তারপর বাংলাদেশের বিজ্ঞ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে আমি আপনার কাছ থেকে আমার পাওনা আদায় করব।
‘কিন্তু মিডিয়ায় আপনার শিশুসুলভ দাবির জবাব দেয়া প্রয়োজন মনে করছিলাম। আপনি বলেছেন চুক্তিপত্রটি বানোয়াট? এটা সত্যিই লজ্জাজনক। আপনি ইরানে আপনার প্রথম দুই সফরে আমার অতিথি ছিলেন। আপনি আমার এবং আমার বাবা-মায়ের ঘরে সম্মানের সঙ্গে প্রবেশ করেছিলেন। এবং সবসময় পরস্পর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম। আপনার তেহরানে দ্বিতীয় সফরের সময়, দুই দেশের জাতীয় পতাকাকে সামনে রেখে আপনার এবং আমার মধ্যে সিনেমার কাজের চুক্তিপত্র লিখিত এবং স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ইরানের নীতি অনুযায়ী চুক্তিপত্রটি দুই পক্ষের মাতৃভাষায় (বাংলা ও ফারসি) লিপিবদ্ধ হয়েছিল।
‘দয়া করে এই দুটি পতাকাকে সম্মান করুন এবং ওই সভায় উপস্থিত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের সম্মান বজায় রাখুন। চুক্তি স্বাক্ষরে উপস্থিত সাক্ষীবৃন্দ, এখনও জীবদ্দশায় আছেন ও প্রয়োজনে সাক্ষ্য দিতে সক্ষম।
‘আমি জানি আপনার পরামর্শক গন, আপনাকে ভুল তথ্য এবং ভুল পথ দেখাচ্ছেন। তাদের পরামর্শ নেয়া যদি অব্যাহত রাখেন, তাহলে দিন দিন আপনার সামাজিক পদমর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে।
‘মিথ্যা মিথ্যার জন্ম দেয়। যারা আপনাকে প্ররোচিত করেছে, প্রচারণার জন্য দশ মিলিয়ন ডলার উল্লেখ করতে, তারাই আপনাকে এখন প্ররোচিত করছে, চুক্তিপত্রটিকে অস্বীকার করতে, আপনার মাতৃভাষাকে অস্বীকার করতে, সভায় উপস্থিত সাক্ষীদের উপেক্ষা করতে, আপনার দেশের জাতীয় পতাকাকে অস্বীকার করতে, এবং এক সঙ্গে যে ডাল-ভাত খেয়েছি তা অস্বীকার করতে।
‘আচ্ছা, বাংলাদেশের ব্যয়ে সম্পর্কে একটি সহজ প্রশ্ন, আপনি যেমন বলেছেন, আমি আপনার সঙ্গে ছিলাম আপনি দশ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন, আচ্ছা বলুন তো বাংলাদেশের প্রথিতযশা কবি ওস্তাদ হেলাল হাফিজকে বাংলা গানের লিরিক্স লেখার জন্য কত মার্কিন ডলার দিয়েছেন? কিংবা আমার প্রিয় বন্ধু বাংলাদেশের স্বনামধন্য গায়ক বেলাল খানকেই বা কত মার্কিন ডলার দিয়েছেন?
‘উল্লেখ্য যে, আদালতের আদেশ না হওয়া পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্ঠানেরই ছবিটি প্রদর্শনের অনুমতি নেই এবং এখন থেকে এটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
‘আপনি বলেছেন যে, কেবল বাংলাদেশের ব্যয়ভার আপনার ছিল। অর্থাৎ, ইরানী টিমের বাংলাদেশে দুই সপ্তাহের থাকা খাওয়ার খরচ! যদি এমনি হবে, তবে কী করে মিডিয়াতে দশ মিলিয়ন ডলারের দাবি করে এসেছেন।
‘বাংলাদেশের শুটিংয়ের অংশে পুলিশের জন্য কয়েকটি প্লাস্টিকের বন্দুক, কিছু পুলিশের ইউনিফর্ম এবং একটি পুরনো পুলিশের জিপের বেশি কিছুই ছিল না। এমনকি বাংলাদেশের অংশে যে গাড়িগুলো বিস্ফোরিত করার কথা ছিল আপনি সে গল্পটাই স্ক্রিপ্ট থেকে বাদ দিয়েছেন এবং কয়েক ঘণ্টার কিছু শটের জন্য আপনি একটি ট্যুরিস্ট হেলিকপ্টার ভাড়া করেছেন।
‘আমরা আট মাসে ৭৭ দিন ইরান ও আফগানিস্তান শুটিংয়ের অংশে যথেষ্ট প্রতিকূল ও কঠিনতম পরিবেশে চিত্রগ্রহণের কাজ করেছি যেখানে আমার দুই শতাধিক সহকর্মী এই ছবির জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন।
‘উপস্থিত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে, মুভির শুটিংয়ে পাঁচটি গাড়ি বিস্ফোরণ করেছি, শত শত বুলেট ছুড়েছি, এছাড়াও আমরা শত শত বিস্ফোরণ ঘটিয়েছি। ইরান পুলিশ বাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিট পুরো সিনেমা জুড়ে আমাদের সঙ্গে ছিল। যাত্রীবাহী এয়ারপোর্টে এবং সামরিক এয়ারপোর্টে কয়েকটি বিমান এবং হেলিকপ্টার শুটিংয়ের জন্য আমাদের সার্বক্ষণিক এখতিয়ারে ছিল এবং আমরা সমগ্র ইরানে কয়েক ডজন বিশেষ বিশেষ স্পট গুলোতে চিত্র গ্রহণের কাজ করেছি।
‘আপনি সম্ভবত এই রকম উন্নত সুযোগ সুবিধাগুলো দেখে, মিলিয়ন ডলারের মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অতএব, কয়েকটা প্লাস্টিকের বন্দুক দিয়ে, কিভাবে নিজেকে অনুমতি দিয়েছেন আমার অনুমতি ছাড়া সিনেমাটি সম্পূর্ণ করতে, আমার নামটি সিনেমার প্রযোজকের নাম থেকে সরিয়ে দিতে? এবং চুক্তিপত্রটি উপেক্ষা করে নিজের নামে প্রদর্শন করতে? সত্যি কি লজ্জাজনক নয়?
‘আমার কোনো অনুমতিপত্রের ভিত্তিতে আপনি সিনেমাটি মুক্তি দিয়েছিলেন? এটা একটা লজ্জাজনক ব্যাপার যে অতীতের ভুলগুলো শুধরে না নিয়ে আপনি কীভাবে সিঙ্গাপুরেও সিনেমাটি মুক্তি দিতে চান?’