বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘হয়তো আমি আর আসতে পারব না, এটাই হয়তো শেষ’

  •    
  • ২২ অক্টোবর, ২০২২ ১২:৫৩

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে না পারায় খুব আফসোস করলেন সুমন। আবার প্রশংসা করলেন সাংবাদিকদের লেখার। সুমন বললেন, ‘অনেকদিন ভালো কথা শুনিনা। আমি মমতার কিনা, নকশাল কি না, এসব নিয়েই আলোচনা হয়। আমি গানের কিনা তা নিয়ে আলোচনা হয় না।’

বাড়ির লোকেরা, মানে, কলকাতায় যারা কবীর সুমনকে দেখাশোনা করেন, তারা নাকি খুব আনন্দে দিন কাটাচ্ছেন। হবে না, সুমন যে বাংলাদেশে। থাকছেন সপ্তাহখানেক। ‘বুড়ো’টাকে তো দেখভাল করতে হচ্ছে না।

বাড়ির লোকেরা সুমনকে বুড়ো বলে কি না সেটা নিশ্চিত না, তবে সুমন নিজেকে বুড়ো বলেন। ২১ অক্টোবর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশন অডিটোরিয়ামে নিজেকে অনেকবার বুড়ো বলেছেন আধুনিক বাংলা গানের অন্যতম রূপকার ৭৩-এর কবীর সুমন।

প্রথমের ঘটনাটা তো বললেনই, সঙ্গে বিভিন্ন সময় বললেন, ‘বুড়ো হয়ে গেলে অনেক ঝামেলা’, বিরতির পর গাইতে এসে কাশতে কাশতে একই কথা বললেন আবারও। আরও বললেন, ‘জানি না আর বাংলাদেশে আসতে পারব কি না, শরীরটাই দেখা যাবে বাধা দিয়েছে।’

অনুষ্ঠানের শুরুর দিকটায় বেশ কথা বলছিলেন সুমন। সেই কথাই গোগ্রাসে গিলছিলেন শ্রোতারা। মাঝে মাঝেই তারা হেসে উঠছিলেন হো হো করে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে না পারায় খুব আফসোস করলেন সুমন। আবার প্রশংসা করলেন সাংবাদিকদের লেখার। সুমন বললেন, ‘অনেকদিন ভালো কথা শুনিনা। আমি মমতার কিনা, নকশাল কি না, এসব নিয়েই আলোচনা হয়। আমি গানের কিনা তা নিয়ে আলোচনা হয় না।

“এখানে (বাংলাদেশে) একটি পত্রিকায় লিখেছে, ‘একদিকে পিট সিগার, দক্ষিণ এশিয়ায় কবীর সুমন’, এটা মিথ্যা না, সাংবাদিক বাড়িয়ে বলেননি, কিন্তু এটা বলতে বুকের পাটা লাগে।”

সুমন এখন কি-বোর্ড বাজিয়ে গান করেন। কি-বোর্ড বাজাতে বাজাতে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন দেশের নামকরা সংগীতশিল্পী ফোয়াদ নাসের বাবুর প্রতি।

এরপর গান, চেনা মুখ, হাল ছেড় না, সুমনের সঙ্গে গাইলেন শ্রোতারাও। বিশেষ করে হাল ছেড় না বন্ধু গানে শ্রোতাদের কণ্ঠ মেলানোর প্রবণতা বেশি ছিল।

একবার শ্রোতারা চাইলেন গানের সঙ্গে হাত তালিও দেবেন। কিন্তু সুমন অনুরোধ করে বললেন, ‘হাত তালিটা থাক, তালের জন্য তবলা তো বাজছেই, আপনারা বরং গান শুনুন।’ শ্রোতারা হেসে উঠলেন, পুরো অনুষ্ঠানে তারা আর হাতে তালি দেননি।

এক সময় শ্রোতাদের কাছ থেকে গানের অনুরোধ যাওয়া শুরু করলো সুমনের কাছে। বেশ কটি গানের নাম উচ্চারিত হলো দর্শক সারি থেকে। সুমন শুরু করলেন ‘প্রিয়তমা, তোমাকে অভিবাদন’ গানটি।

স্বভাবসুলভভাবে গানটির কিছু অংশ গাওয়ার পর তা থামিয়ে জানালেন, গানটি মূলত তার বন্ধু শহীদ কাদরীর কবিতা থেকে করা। বললেন, ‘শহীদ কাদরীর অনুমতি নিয়ে কিছুটা এদিকে সেদিক করে গানটি করেছি। মূল কবিতার চেয়ে গানটা একটু ছোট। একবার সুযোগ হয়েছিল গানটি শহীদকে শোনাবার।

এরপর সুমন গান হাড়িয়ে যেও না, আমি চাই। আমি চাই গানের একটি লাইন এমন- আমি চাই, ধর্ম বলতে মানুষ বুঝবে মানুষ শুধু। এ লাইনটাতে এসে সুমন থেমে যান এবং একটা গল্প শোনান।

সুমন বলেন, ‘গানটা রেকর্ডের সময় আমি সুমন চট্টোপাধ্যায় ছিলাম। ভারতের আইন অনুসারে আমি এফিডেভিট করে মুসলমান হই। তখন কত লোকে কত কথা বলেছে।

‘আমি হিন্দু ধর্মাবলম্বি থাকার সময় কেউ কিন্তু বলেনি যে, আপনি আপনার ধর্মটাকে বাদ দিয়ে শুধু মানুষ হয়ে এ গান করেন। কিন্তু মুসলমান হওয়ার পর এমন অনেক কথা শুনতে হয়েছে।’

দর্শক-শ্রোতাদের উদ্দ্যেশ করে সুমন বলেন, ‘আমি এসব কথা আপনাদের কাছে বলে যেতে চাই। হয়তো আমি আর আসতে পারব না। এটাই হয়তো শেষ, শরীর আটকে দেবে।’

বাংলাদেশের গীতিকার এনামুল করিম সুজনের লেখা গান গেয়ে শোনান সুমন। গানটি সুমনের গাওয়া ও সুর করা। গানটি মুখস্থ ছিল না তার, তবুও শুনিয়েছেন আর বলেছেন, ‘খারাপ হয়নি সুরটা, আমার পাল্লায় যখন পরেছেন, আর কই যাবেন, গান শুনতেই হবে।’

অনুষ্ঠানের শুরু থেকেই অডিটোরিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ। এ নিয়ে কিছুটা দুঃখ প্রকাশ করে সুমন বলেন, ‘এত কষ্ট করে আমার গান শুনছেন, আমার খুব খারাপ লাগছে।’ আবার মজাও করেন এ বলে যে, ‘কই বা যাবেন, সিট ছেড়ে দিলে দেখবেন অন্য কেউ বসে পড়েছে।’

উত্তর আসবেনা, তুমি আসবেই আমি জানি গানটি গাইতে গিয়ে শুরু করলেন গল্প। বলেন, ‘একবার বন্ধুর বাড়িতে বিশ্বভারতীর শিক্ষিকা এলেন, নিজের লেখা কবিতা বললেন। বুঝলাম তিনি অভিমানি। সেদিন বাড়ি ফিরে এ গানটি লিখেছিলাম।’ আবারও শুরু করলেন গান।

সুমন চেয়েছিলেন কিছু গান শ্রোতাদের পছন্দে হবে, কিছু গান হবে তার নিজের পছন্দে। সবটা করতে পারেননি সুমন।

মানুষের ইতিহাস লিখতে হবেই গানটি গাইতে গিয়ে সুমন বলেন, ‘আমি তখন এই ভাবধারার লোক ছিলাম। লিখেছিলাম, শুধু শাজাহানের তাজমহলের কথা ইতিহাসে আছে কিন্তু মানুষের কথা ইতিহাসে লেখা নেই।’

‘আমি তখন অনেকটা নাম করে ফেলেছি, বয়স ৪৩, একদিন ফোন এলো আমার ভবানিপুরের বাসায়। একটি মেয়ের কণ্ঠ, দু-এক কথা বলে আমরা দেখা করতে সম্মত হলাম। একদিন দেখা করি এবং স্তম্ভিত হই।

‘আমি তখন বিবাহিত, মেয়েটি ছোট বয়সে, তাকে দেখে আমি মারা গেলাম। আমরা কেউ কাউকে কামনা করিনি, আমরা ডেট করতাম, তবে সেটা প্রেমের ডেট না। একদিন মেয়েটা বললো, প্রেমে পড়েছি, বাঁচাতে হবে, ছেলেটি গ্রামের, আমি ওকে চাই।’

এ গল্পটি সুমন বললেন, এক মুহূর্তে ফিরিয়ে দিলে গানটি গাওয়ার আগে। সুমন এও বললেন, ‘তিনি কি শুনেছেন গানটা, জানি না। তিনি কোথায়, কেমন আছেন, গান গাইতে গাইতে মনে হলো।’

এরপর আর কথা বলেননি সুমন। শ্রোতাদের পছন্দের গানগুলো একটানা করে গেছেন। যার মধ্যে ছিল আমি যাকে ভালোবাসি, পেটকাটি চাঁদিয়াল, তোমার জন্য লিখছি প্রেমের গান, বাশুরিয়া বাজাও বাঁশি, খাতা দেখে গান গেও না, আমাদের জন্য।

এসব করতে করতে সন্ধ্যা ৭টা ২৪ মিনিট, আগের গান শেষ করেই, এক বিন্দু বিরতি না দিয়ে সুমন শুরু করেন তোমাকে চাই। হর্ষধ্বনিতে ফেটে পরেন শ্রোতারা। অনেকেরই বোঝা হয়ে যায়, এটাই হতে যাচ্ছে এ সফরে সুমনের শেষ গান। শ্রোতারা সবাই মিলে গাইলেন তোমাকে চাই। এর মধ্যে সুমন গানটির লাইন মনে করতে পারছিলেন না। শ্রোতারা তা মনে করিয়ে দিলেন এবং সবাই মিলে গাইতে লাগলেন।

গান শেষে করতালিতে ফেটে পড়ে পুরো অডিটোরিয়াম। সুমন দাড়িয়ে সবাইকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, আর বলেন, ‘দেখা হবে, ভালো থাকবেন।’ শেষ হয় সুমনের বাংলাদেশ সফর।

এ বিভাগের আরো খবর