বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘বন্ধু কি খবর বল, কত দিন দেখা হয়নি’

  •    
  • ১৬ অক্টোবর, ২০২২ ১৪:৫১

‘..... ফরহাদ ও ফারুক ছিল। ফরহাদ অনেক আগেই গত হয়েছেন। ফারুক, শাহজাহান ফারুক আমার বন্ধু ছিল। আমি জানি না সে বেঁচে আছে কি না! থাকলেও কোথায় আছে, দেশে না বিদেশে, কে জানে? কোনোদিন দেখা হবে কি না জানি না, ইস আমার বন্ধুর সঙ্গে একবার যদি দেখা হতো...’

এক সময়ের বন্ধুত্ব, সময়-কাল-প্রেক্ষাপটে সেই বন্ধুত্বে ছেদ পড়া, অনেকদিন পর আবার বন্ধুর সঙ্গে দেখা এবং ফেলে আসা স্মৃতিগুলো হুড়মুড় করে সব সামনে চলে আসা; বন্ধুত্বের এমন শাশ্বত ঘটনাই গানে তুলে এনেছিলেন কবীর সুমন।

কাজের চাপে অনেক কিছু ছেড়ে আসা, ভুলতে বসা মধ্য বয়সীদের কাছে ‘বন্ধু কি খবর বল’ গানটি হাজির হয় ফেলে আসা বন্ধ সময়ের গিট খুলে।

গানটির প্রথম কয়েকটি লাইন এমন-

‘হঠাৎ রাস্তায় আপিস অঞ্চলে

হারিয়ে যাওয়া মুখ চমকে দিয়ে বলে

বন্ধু, কী খবর বল?

কত দিন দেখা হয়নি…’

গানটির গীতিকার, সুরকার ও গায়ক কবীর সুমনের বেলাতেও ঘটল এমন ঘটনা। তবে এবার ‘আপিস অঞ্চলে’ নয়; গান গাইতে এসে অডিটরিয়ামে। পুরনো বন্ধুকে খুঁজে পেলেন সুমন।

১৫ অক্টোবর রাতে কলকাতার শিল্পী কবীর সুমনের সঙ্গে দেখা হয় বাংলাদেশের শাহজাহান ফারুকের। দেখা হওয়ার মুহূর্তে দুজনেই ছিলেন আবেগাপ্লুত।

শনিবার বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে হওয়া কবীর সুমনের গানের অনুষ্ঠান শেষে ঘটা সেই ঘটনা অনুষ্ঠান স্থলে হাজির থেকে দেখেছেন সুমন ভক্ত সুমন জাহিদ। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন সেই ঘটনা।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি সুমন ভক্ত। সুমনের গান আমি ও আমরা অনেকে শুধু শুনিনা, চেটেপুটে খাই। তার গান শুনতে শনিবার আমি অডিটোরিয়ামে ছিলাম এবং বন্ধুর সঙ্গে সুমনের দেখা হওয়ার ঘটনা সামনে থেকেই দেখেছি।’

কবীর সমুনের কথা সুমন জাহিদ তার ফেসবুকে লিখেছেন এভাবে- ‘আপনারা বলেন রংধনু কিন্তু আমরা বলতাম রামধনু। রামধনু বলা যে খারাপ তা বলছি না। রামধনুকে যে বাংলাদেশের মানুষ রংধনু বলে, এটা আমার জানা ছিল না। এটা জেনেছি আমার বন্ধু শাহজাহান ফারুকের কাছ থেকে।

‘আমরা তখন জার্মান রেডিওতে কাজ করতাম। সে অনেক আগের কথা। আমাকে তখন ভারত থেকে পালাতে হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ সরকার আমাকে গ্রেপ্তারের জন্য খুঁজছে। পালিয়ে জার্মান গেলাম। জার্মান রেডিওর বাংলা বিভাগে চাকরি পেলাম। বাংলা বিভাগে তখন বাংলাদেশের অনেকেই চাকরি করে। জীবনে যে কত কিছু শিখেছি তাদের কাছ থেকে, সে ঋণ কোনো দিন শোধবার নয়।

‘... ফরহাদ ও ফারুক ছিল। ফরহাদ অনেক আগেই গত হয়েছেন। ফারুক, শাহজাহান ফারুক আমার বন্ধু ছিল। আমি জানি না সে বেঁচে আছে কি না! থাকলেও কোথায় আছে, দেশে না বিদেশে, কে জানে? কোনোদিন দেখা হবে কি না জানি না, ইস আমার বন্ধুর সঙ্গে একবার যদি দেখা হতো...’

সমুন জাহিদ বলছেন, ‘সুমনের আক্ষেপ শেষ হওয়ার আগেই আমার ঠিক পেছন থেকে দুই-একজন বলে উঠলেন, আছে তো, এই এখানে!

‘তাকিয়ে দেখলাম বয়স্ক একজন ভদ্রলোক, মাঝ বয়সী এক ভদ্র মহিলার হাতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছেন। চোখে মুখে বিস্ময়কর এক উজ্জ্বল দ্যুতি। গোটা হল হর্ষধ্বনি দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল তাকে সম্মান জানাতে।

‘আমি সঙ্গে সঙ্গে উঠেই ভদ্রলোকের হাত ধরে খুব সাবধানে তাকে মঞ্চে নিয়ে আসি। তুমুল করতালিতে ফেঁটে পড়ছে গোটা অডিটরিয়াম। অসুস্থ সুমন যে নিজে একা দাঁড়াতে পারে না, হারিয়ে যাওয়া বন্ধুকে দেখে অবিশ্বাস্যভাবে একাই আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালেন। গুটি পায়ে দুই কদম এগিয়ে দুই বন্ধু একে অপরকে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরলেন।

‘এমনতর অকৃত্রিম আলিঙ্গন দেখিনি কখনও। আলিঙ্গনে থরো থরো, দুই বন্ধুর মুখে কোনো কথা নেই, চোখ বেয়ে ঝড়ে যাচ্ছে শুধু অবিরল জলধারা!

‘বিরল বন্ধুতার সাক্ষী হয়ে রইলো আরেক সুমন।’

এবারের বাংলাদেশে সফরে আসার আগে কবীর সুমন যে ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছিলেন সেখানে তিনি তার রেডিওতে চাকরির জীবনে পরিচিত হওয়া বাংলাদেশের অনেক সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করেন। সেখানে তিনি শাহজাহান ফারুকের কথাও বলেছিলেন। এমনকী অনিশ্চিত অনুরোদ করে জানিয়েছিলেন, শাহজাহান ফারুক যদি বেঁচে থাকেন বা দেশে থাকেন এবং তিনি যদি কবীর সুমনের বাংলা খেয়ালের অনুষ্ঠান দেখতে আসেন, তাহলে কবীর সুমন খুব খুশি হবেন।

কবীর সুমনের এমন অনিশ্চিত অনুরোধ শাহজাহান ফারুকের কাছে পৌঁছেছিল কি না, তা জানা যায়নি।

এ বিভাগের আরো খবর