বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আমার জীবনের সেরা কাজ বাংলা খেয়াল: কবীর সুমন

  •    
  • ১৩ অক্টোবর, ২০২২ ১৭:৩৫

সুমন বলেন, ‘যেভাবে খেয়াল গাওয়া হয়, সারাক্ষণ তান করছেন, সেভাবে কারও ভালো লাগার কথা না। কিন্তু এটাকে যদি গানের একটি আঙ্গিক হিসেবে দেখা যায়, তাহলে মনে হয় যে বাংলা খেয়াল শ্রোতাদের নিরাশ করবে না। আমি অর্থপূর্ণ ভাষায় খেয়াল রচনা করছি।’

কবীর সুমন এখন ৭৩-এ। যদিও সার্টিফিকেট অনুযায়ী তিনি ৭২। কারণ নিবন্ধনের সময় বাবা-মা সুমনের জন্মসাল ১৯৪৯ থেকে ১৯৫০ করে দিয়েছিলেন। উদ্দেশ ছিল, সন্তান যদি সরকারি চাকরি করে, তাহলে যেন এক বছর বেশি করতে পারে।

৭৩ বছরের জীবনের প্রথম থেকেই সংগীত নিয়ে আছেন সুমন। সংগীত শেখা, এরপর সংগীত নিয়ে কাজ করা। বাংলা আধুনিক গানের বাক বদলের এক অধ্যয়ের রচয়িতা তিনি, এমনটিই বলা হয়।

৩০ বছর আগে ‘তোমাকে চাই’ অ্যালবামের তোমাকে চাই গানটি দিয়ে বাংলা গানের সুর ও কথার বাক বদলের কাজটি করেছিলেন তিনি। এতকাল বাংলা আধুনিক গান করে যাওয়া এ শিল্পী এখন মনে করছেন বাংলা খেয়াল নিয়ে তার কাজ সবচেয়ে সেরা।

অনেকদিন থেকেই বাংলা খেয়াল নিয়ে কাজ করছেন তিনি। খেয়াল শিখতে শিখতে গাইতে গাইতে সুমনের মনে হয়েছিল, ‘এ আমি কি গাইছি। আমি নিজেও বুঝতে পারছি না, যাদেরকে শোনাচ্ছি তারাও কিছু বুঝতে পারছেন না।’

সুমনের তখন মনে হয়েছিল মাতৃ ভাষায় খেয়াল তার গাইতেই হবে। যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। সুমন মনে করছেন কাজটার বেশ কিছুটা সম্ভব করে তুলেতে পেরেছেন তিনি।

‘তোমাকে চাই’ এর ৩০ বছর উদযাপন উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে পোস্ট করা ভিন্ন দুটি ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন কবীর সুমন।

তিনি বলেন, ‘শ্রীমতি স্বপ্না মণ্ডল, আমার বন্ধু, একসময় আকাশবাণী কলকাতার ডিরেক্টর ছিলেন। তিনি আমার এই বাংলা খেয়ালগুলির বান্দিশের স্বরলিপি করে রাখছেন। এরই মধ্যে দুটি বই প্রকাশ পেয়েছে। কয়েকদিন আগে স্বপ্না জানালেন, বাংলা খেয়ালের বান্দিশের সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়ে গেছে। এটা অনেক গর্বের, কারণ আমি মনে করি আমার জীবনের সেরা কাজ হচ্ছে বাংলা খেয়াল।’

সুমন জানান, তিনি ছোটবেলা থেকেই খেয়াল শিখেছেন। কিন্তু সেই খেয়াল শিখেছেন নানা হিন্দুস্তানি ভাষায় যেমন, ভোজপুরি, মৈথিলী, পাঞ্জাবের দুটি পাঞ্জাবি ও মুলতানি ভাষা। সিন্ধি ভাষাতেও খেয়াল রচিত হয়েছে, বাংলাতেও হয়েছিল অনেককাল আগে, কিন্তু দীর্ঘকাল আর চর্চা হয়নি।

তিনি বলেন, ‘খেয়াল সম্পর্কে একটা ভয় কাজ করে মানুষের মধ্যে। বিশেষ করে যারা ক্লাসিকাল মিউজিকের লোক, তার কথায় কথায় বলে থাকেন, কী বোঝ? শুনবে? শুনতে চাও, কী জানো? এই বলে তারা মানুষের মনে ভয় এনে দেন।

‘তো যারা বাংলা ভাষায় এ কথা বলেন তাদের পাল্টা প্রশ্ন করা যায়, বাংলায় কথা বলছেন, কী বোঝেন, বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে বলতে পারবেন? নং তৎপুরুষ কী বলতে পারবেন?’

সুমনের মতে, বোঝাবুঝির কি আছে, শুনতে যদি ভালো লাগে তো ভালো। না তো হলো না।

সুমন বলেন, ‘যেভাবে খেয়াল গাওয়া হয়, সারাক্ষণ তান করছেন, সেভাবে কারও ভালো লাগার কথা না। কিন্তু এটাকে যদি গানের একটি আঙ্গিক হিসেবে দেখা যায়, তাহলে মনে হয় যে বাংলা খেয়াল শ্রোতাদের নিরাশ করবে না। আমি অর্থপূর্ণ ভাষায় খেয়াল রচনা করছি।’

আধুনিক গান ও খেয়াল নিয়ে সুমন অনেকদিন পর বাংলাদেশে আসছেন। জানান, শেষ এসেছিলেন ২০০৯ সালে। বৃহস্পতিবার তিনি আবারও ঢাকায় এসেছেন।

অনেকেই ধারণা করে থাকেন সুমনের গান মানে জীবনমুখী গান। সুমন বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন তার বক্তব্যে।

সুমন বলেন, ‘আমি এসব নামকরণের মধ্যে নেই। বিশ্বাস করুণ, আমি হাত জোর করে বলছি, আমি কোনোদিন জীবনমুখী, চন্দমুখী, মৃত্যুমুখী, এরকম কোনো মুখীর মধ্যে আমি নেই। আধুনিক বাংলা গান, সেটাই যথেষ্ট।’

সুমন তার এ সফরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। এ জন্য তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন। তিনি নিজেও একজন সাংবাদিক উল্লেখ করে জানান, ভয়েস অফ জার্মানি, ভয়েস অফ আমেরিকাতে কাজ করেছেন তিনি।

এ কাজের সূত্রে তার পরিচয় হয়েছে অনেক বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে। কয়েকজনের নামও উল্লেখ করেন সুমন। যাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ আল ফারুক, শাজাহান ফারুক, আব্দুস সাত্তার, ইকবাল বাহার চৌধুরী, ইশতিয়াক আহমেদ, জিয়াউর রহমান, মাসুমা খাতুন, দিলারা হাশেম, রোকেয়া হায়দার অন্যতম।

সুমন একসময় গিটার বাজিয়ে গান করতেন। শারীরিক সমস্যার কারণে এখন আর গিটার বাজাতে পারেন না তিনি। কি-বোর্ড বাজাতে পারছেন এখনও। সেটি বাজিয়েই বাংলাদেশে গান করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

সুমন বলেন, ‘আমার বাবা ও গুরু বলেছিলেন ৪০ বছর না হলে মঞ্জে খেয়াল গাইবে না। এখন সব পাল্টে গেছে, এখন তো প্রায় মায়ের পেট থেকেই সবাই গাইতে শুরু করে দেয়। সকলেই প্রায় ওস্তাদ বা পণ্ডিত, মেয়ে হলে বিদুষী। আমার নামের আগে কিছুই নেই, শূন্যতা।’

সুমনের কাছে ঠিক-ঠাক গান শুনতে চাওয়ার দাবি যেমন অনেকের আছে, তেমনি সুমনেরও দাবি আছে নবীনদের কাছে। দাবি জানিয়ে সুমন বলেন, ‘তারা যেন তাদের জীবনে একটা স্থির লক্ষ্যের দিক আগায়। তারা যেন ঠিক করে যে, একটি ক্ষেত্রে আমি এক্সেল করব। এটাতে আমি এমন জায়গায় পৌঁছাব যেন কেউ আমার কাজ ফেলে দিতে না পারে।’

এ বিভাগের আরো খবর