বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আমরা বিক্ষিপ্ত, আমাদের ন্যাশনাল ফিল্ম আসলে কী: সাদিয়া খালিদ রীতি

  •    
  • ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২১:৫৭

‘আর্ট হাউস সিনেমাগুলো তো ইউরোপের ফিল্ম মুভমেন্ট থেকে শুরু হয়েছে। আমরা আমাদের আর্ট হাউস করতে গিয়ে ওদের অনেক ক্ষেত্রে কপি করেছি। এ ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের মানুষ, দর্শক ও দর্শনকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। আমরা কিন্তু এখনও স্ক্যাটার্ড, আমাদের ন্যাশনাল ফিল্ম আসলে কী? কেউ ইউরোপকে ফলো করছে, কেউ বলিউডকে ফলো করছে।’

সাদিয়া খালিদ রীতি প্রথম না দ্বিতীয় সেই আলাপে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি স্পষ্ট করে বললেন, ‘আমি দ্বিতীয় বলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করব।’

হলিউডের প্রেস অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে হওয়া নামকরা অ্যাওয়ার্ড প্ল্যাটফর্ম গোল্ডেন গ্লোবে ভোটার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন দেশের এ সাংবাদিক ও ফিল্ম ক্রিটিক।

এটি নিঃসন্দেহে উদযাপনের বিষয় এবং রীতি সেটি করছেনও। তার ভাষ্যে, ‘হ্যাঁ, আমি উদযাপন করছি। এটা এমন না যে হঠাৎ করে পেয়ে গেছি। এটার জন্য অনেক হার্ড ওয়ার্ক করেছি। শ্রম করে পাওয়ার যে আনন্দ সেটা পাচ্ছি।’

আর কেন তিনি দ্বিতীয় সেটি ব্যাখ্যা করতে জানান, ১৯৯৩ সালে ভোটার হিসেবে একজন যুক্ত হয়েছিলেন, তিনি বাংলাদেশি তবে আমেরিকান নাগরিক ছিলেন এবং আমেরিকান জার্নালিস্ট হিসেবেই তিনি ভোটার হয়েছিলেন। মূলত ফটো জার্নালিস্ট ছিলেন তিনি।

কীভাবে এ অর্জন? জানতে চাইলে রীতি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গোল্ডেন গ্লোব এর আগে শুধু আমেরিকার নাগরিকদের মধ্যে থেকে ভোটার হিসেবে নিত, এবার ওরা অন্য দেশ থেকেও ভোটার নিচ্ছে, যাদের হাইপ্রোফাইল মনে করছে। আগে ভোটার সংখ্যা ছিল ১০০ জনের মধ্যে, এখন সেটা ডাবলের মতো হয়ে যাচ্ছে।

চলচ্চিত্র সমালোচক, সাংবাদিক সাদিয়া খালিদ রীতি। ছবি: সংগৃহীত

‘আমি এটার খবর রাখতাম না, কারণ এটা শুধু আমেরিকার নাগরিকদের জন্য ছিল। তো হঠাৎ করে একদিন গোল্ডেন গ্লোবের ভোটিং বডির প্রেসিডেন্ট মেইল করল। আমি ভেবেছিলাম এটা হয়তো প্রি-সিলেকশন, আমি বোধহয় সিলেকশন হয়ে গিয়েছি। পরে দেখলাম, না, ওরা অ্যাপ্লিকেশন চেয়েছে এবং সেগুলো থেকে যাচাই-বাছাই করে তারপর চূড়ান্ত করবে। কয়েকটা মাস টেনশনে ছিলাম, হয় কি না।’

শেষমেশ জয়ের হাসি হেসেছেন রীতি। অনেকগুলো সিনেমা দেখতে হবে তার। নেটফ্লিক্স এবং ডিজনি নাকি এরই মধ্যে স্ক্রিনার (প্রমোশনাল) পাঠানো শুরু করেছ। অনেক বড় কাজ।

রীতি বলেন, ‘কাজটা যেন ঠিকমতো করতে পারি। গোল্ডেন গ্লোব কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে একজনকে নিয়েছে, দেশের সম্মানটা যেন রাখতে পারি।’

রীতি সিনেমাপাগল। স্বপ্নের পেছনেই ছুটছেন এখনও। রীতির বাবা ছিলেন এয়ারফোর্সে। যশোরে জন্ম রীতির, বেড়ে উঠেছেন দেশের বিভিন্ন জায়গায়। ক্লাস ৪-৫-এ চায়নাতেও ছিলেন তিনি।

চলচ্চিত্র সমালোচক, সাংবাদিক সাদিয়া খালিদ রীতি। ছবি: সংগৃহীত

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং ও হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টে অনার্স করে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার স্কুল অফ থিয়েটার, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগে লেখাপড়া করেছেন। তার বিষয় ছিল স্ক্রিপ্ট রাইটিং।

রীতি জানান, ২০১৫-১৭তে যখন তিনি লস অ্যাঞ্জেলসে ছিলেন, তখন ওখানে রাইটার হিসেবে কাজ করতে গেলে ওদের গল্পটাই বলতে হতো। কিন্তু রীতি চেয়েছিলেন নিজের দেশের গল্পটা আগে বলতে। হলিউডে রীতি দুটি প্রোডাকশন হাউস ও একটি আর্টিস্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মে কাজ করেছেন। সাংবাদিক হিসেবেও সেখানকার সংবাদমাধ্যমে কাজ করেছেন তিনি।

সিনেমার প্রতি এ ভালোবাসা রীতির টিনএজ বয়স থেকে। তিনি বলেন, ‘মুলান রুজ সিনেমাটা দেখে আমার সিনেমার প্রতি আগ্রহ জন্মে। ইচ্ছা ছিল মিউজিক ভিডিও বানাব।’

পরে রাইটিংয়ে আগ্রহ বাড়ে রীতির। বিদেশে লেখাপড়া ও কাজ শেষে দেশে এসে ফুল টাইম লিখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি।

রীতি বলেন, ‘আমাদের এখানে রাইটারদের মূল্যায়ন করা হয় না। মাসের পর মাস একটা প্রজেক্টে কাজ করেছি কিন্তু কোনো টাকা দেয় নাই; কোনো কনট্রাক্ট সাইন করে নাই। খুবই আনপ্রফেশনাল এই রাইটিংয়ের জায়গাটা। টাকা দিলেও খুব সামান্য টাকা দেয়। আমি বুঝলাম লিখে টিকে থাকা সম্ভব না। আসার পর ছয় মাস রাইটিং করেছি, পরে দেখলাম এভাবে হয় না, পরে আবার সাংবাদিক পেশায় যুক্ত হয়েছি ও রাইটিংয়ের কাজ করছি।’

এর পাশাপাশি রীতি যুক্ত হতে থাকেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে। এরই মধ্যে কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের জুরির দায়িত্ব পালন করেছেন, ছিলেন বার্লিনালে ট্যালেন্টসে।

চলচ্চিত্র সমালোচক, সাংবাদিক সাদিয়া খালিদ রীতি। ছবি: সংগৃহীত

ফেস্টিভ্যাল সার্কিটে যুক্ত হওয়ার শুরুর গল্প জানিয়ে রীতি বলেন, ‘আমি ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের (ডিআইএফএফ) সঙ্গে যুক্ত হই ২০১২তে। ২০১৮তে ফেস্টিভ্যালের জুরি হিসেবে দায়িত্ব পাই। ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালকে এখানকার মানুষ বোঝে কি না জানি না, কিন্তু এটা অনেক বড় ফেস্টিভ্যাল। ওই বছরেই আমার অনেকগুলো ফেস্টিভ্যাল থেকে ডাক আসে।’

অনেকে বলবেন, এসব ফেস্টিভ্যালে যুক্ত হয়ে দেশের সিনেমার কী হবে? তার ব্যাখ্যা দিয়ে রীতি বলেন, ‘ফায়দা হলো, আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আমাদের অংশগ্রহণ বাড়বে। ওরা কিন্তু আমাদের পয়েন্ট অফ ভিউটাই জানে না। ইউরো সেন্ট্রিক পয়েন্ট অফ ভিউ বা ওয়েস্টার্ন পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে ফিল্ম ক্রিটিসিজমটা চলে আসছে। ফেস্টিভ্যালে যখন কোনো ক্রিটিক সিনেমা দেখছে তার অধিকাংশই ওয়েস্টার্ন। ওরা সিনেমা দেখার পর যখন কথা বলে আমাদের সঙ্গে, তখন আমি বুঝি যে আমাদের কালচার সম্পর্কে ওদের কোনো ধারণাই নাই।

‘এতে করে সমস্যা হলো, আমাদের এখান থেকে সিনেমা নির্মাণ হবে ঠিকই, কিন্তু ওরা বুঝবেই না কিছু এবং এ অঞ্চলের সিনেমার যথার্থ মূল্যায়ন হবে না। ফিল্মের ইকোসিস্টেমের মধ্যে এটা গুরুত্বপূর্ণ একটা পার্ট, যে ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যাটফর্মে বসার মতো ফিল্ম ক্রিটিকও থাকতে হবে।’

আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সিনেমা দেখে রীতির পর্যবেক্ষণ হলো- সেসব সিনেমার সঙ্গে দেশের সিনেমার পার্থক্য অনেক।

কারণ ব্যাখ্যা করে রীতি বলেন, ‘আর্ট হাউস সিনেমাগুলো তো ইউরোপের ফিল্ম মুভমেন্ট থেকে শুরু হয়েছে। আমরা আমাদের আর্ট হাউস করতে গিয়ে ওদের অনেক ক্ষেত্রে কপি করেছি। এ ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের মানুষ, দর্শক ও দর্শনকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। আমরা কিন্তু এখনও স্ক্যাটার্ড, আমাদের ন্যাশনাল ফিল্ম আসলে কী? কেউ ইউরোপকে ফলো করছে, কেউ বলিউডকে ফলো করছে।’

সম্প্রতি ঘোষণা এসেছে অস্কারের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র বিভাগে লড়তে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো হাওয়া সিনেমাটি। এর সম্ভাবনা কেমন জানতে চাওয়া হয় রীতির কাছে।

চলচ্চিত্র সমালোচক, সাংবাদিক সাদিয়া খালিদ রীতি। ছবি: সংগৃহীত

তিনি বলেন, ‘অস্কারে লবিং হয়, প্রচুর লবিং হয়। আমি যখন লস অ্যাঞ্জেলেসে কাজ করতাম তখন দেখতাম আমাদের অফিসে এসে কেক দিয়ে যাচ্ছে, গিফট দিয়ে যাচ্ছে। একবার দেখেছিলাম যে টম হ্যাঙ্কসের কোনো একটি সিনেমা, নাম মনে করতে পারছি না, ওরা এক মাস ধরে প্রতি রাতে পার্টি দিয়েছে।

‘তবে ইন্টারন্যাশনাল ফিচার ফিল্মে এই লবিং মনে হয় না প্রযোজ্য। এ ক্ষেত্রে ওরা দেখে ফেস্টিভ্যালে কেমন পারফর্ম করেছে সিনেমাটি। হাওয়া তো সেই অর্থে ফেস্টিভ্যালে পারফর্ম করেনি। তার পরও সিনেমাটি যদি কয়েক ধাপ এগিয়ে যেতে পারে, সেটাই আমাদের পাওয়া হবে।’

কাজ তো চলছেই, পাশাপাশি একটি টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছেন রীতি। সেটি কেমন?

রীতি বলেন, ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে একটা সেগমেন্ট করি আমরা, যেটার নাম ওয়েস্ট মিট ইস্ট। ওখানে আমরা সাউথ এশিয়ান রিজিয়নের স্ক্রিপ্ট নিয়ে একটা কম্পিটিশন করি। আমার একটা স্বপ্ন হচ্ছে যে, সাউথ এশিয়ান ফিল্মের মধ্যে রিজিয়নাল কো-অপারেশনকে আরও শক্তিশালী করা। আমাদের মধ্যে এই কো-অপারেশনটা খুবই উইক এখন পর্যন্ত।

কো-অপারেশন বাড়লে কী হবে জানতে চাইলে রীতি বলেন, ‘গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মটা যে এত ওয়েস্ট ঘ্যাসা সেটা চেঞ্জ হবে। আমার সংঘবদ্ধ হলে আমাদের পয়েন্ট অফ ভিউটা সবার শুনতেই হবে। ওয়েস্ট মিট ইস্ট প্রোগ্রামটা নিয়ে সাউথ এশিয়ানদের মধ্যে বেশ একটা আগ্রহ আছে। আশা করি বিষয়টা নিয়ে এগোনো যাবে।’

এ বিভাগের আরো খবর