অভিনেতা খালেদ খান অনেকের কাছে যুবরাজ নামে পরিচিত। তিনি মারা যান ২০১৩ সালে। খালেদের স্ত্রী মিতা হক। তিনি দেশের খ্যাতিমান রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী। ২০২১ সালে তিনি পারি জমান অদেখালোকে।
এই দুই গুণী মানুষকে যুগলরূপে পাওয়া গেল উৎসবে। খালেদ খান মারা যাবার পর যুবরাজ সংঘের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ‘যুবরাজ’ উৎসব। মিতা হক মারা যাবার পর উৎসবে যুবরাজের সঙ্গে যুক্ত হলেন তিনি। যেন আজানায় আবারও জুটি বেঁধেছেন তারা, আর পৃথিবীতে হচ্ছে তার উৎসব।
উৎসব প্রসঙ্গে খালেদ খান-মিতা হকের মেয়ে ফারহিন খান জয়িতা বলেন, ‘শিল্পচর্চার পাশাপাশি খালেদ খান-মিতা হক সমাজ ও দেশ নিয়ে ভাবতেন। তারা তাদের সেই ভাবনা-দর্শনকে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন বিভিন্নভাবে। এখন তারা নেই, তাতে যেন সেই ভাবনা ও দর্শনের ছড়িয়ে যাওয়া বন্ধ না হয়ে যায়। এজন্যই এ উৎসব।’
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির নিশাত চত্বরের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে আরিফ বাউল ও তার দলের বাউল গানের পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয় মিতা যুবরাজ উৎসব।
প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে মিতা যুবরাজ উৎসব উদ্বোধন করেন ফেরদৌসী মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত
প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালায় উৎসব উদ্বোধন করেন বরেণ্য অভিনয়শিল্পী ফেরদৌসী মজুমদার।
‘বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান অসাম্প্রদায়িকতা ও মিতা যুবরাজ’ স্লোগানে অনুষ্ঠিত আয়োজনে বক্তব্য রাখেন ফেরদৌসী মজুমদার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফু, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, অভিনয়শিল্পী সারা যাকের, নাট্যকার ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ফেরদৌসী মজুমদার বলেন, ‘ওপারে এই দুটি মানুষের ভালোবাসা অটুট থাকুক।’
মফিদুল হক বলেন, ‘এই উৎসবের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের মধ্যে যুবরাজ ও মিতা হকের প্রতিবাদী চেতনাটি ছড়িয়ে যাবে।’
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘পরিবেশনার মাঝে তাদরে সাংস্কৃতিক বিশ্বাস ও দেশের প্রতি যে নিবেদন তা নতুন প্রজন্মের কাছে অনুসরণীয়।’
সারা যাকের বলেন, ‘মিতা যে সমাজকে চিন্তা করত সেই সমাজে সব ধর্মকে শ্রদ্ধা জানাবে সবাই।’
অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী বলেন, ‘তারা বেঁচে থাকবেন আমাদের হৃদয়ে।’
মিতা যুবরাজ উৎসবে আলোচকেরা। ছবি: সংগৃহীত
বুলবুল ইসলাম ও লাইসা আহমেদ লিসা স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য রাখেন। এরপর নৃত্য পরিবেশন করেন র্যাচেল প্রিয়াংকা ও তার দল, সামিনা হোসেন প্রেমা, কস্তুরী মুখার্জি ও তার দল।
উৎসবে নৃত্য পরিচালনা করছে র্যাচেল প্রিয়াংকা ও তার দল। ছবি: সংগৃহীত
আবৃত্তি পরিবেশন করেন আসাদুজ্জামান নূর, সুবর্ণা মুস্তাফা ও জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। মাসুম রেজার লেখা ‘আবছায়ায় যুবরাজ’ নামের একটি নাটক মঞ্চস্থ হয়। মোস্তাফিজ শাহীন নির্দেশিত নাটকে অভিনয় করেন ইস্তেখাব দিনার, রওনক হাসান, ত্রপা মজুমদার ও জ্যেতি সিনহা।
উৎসবে সংগীত ও আবৃত্তির আয়োজন। ছবি: সংগৃহীত
সবশেষে অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন ভারতের প্রখ্যাত শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য্য। গানের ফাঁকে ফাঁকে তিনি মিতা হককে নিয়ে কিছু স্মৃতিচারণ করে। তিনি জানান, তারা একে-অপরকে দোস্ত বলে সম্মোধন করতেন।