‘ভাইয়ারে’ সিনেমা মুক্তি পেয়েছে ২ সেপ্টেম্বর। এই সিনেমাকে সম্পূর্ণ ‘পাপমুক্ত চলচ্চিত্র’ দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছেন প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা রাসেল মিয়া।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে রাসেলকে কাঁদতে কাঁদতে বলতে শোনা যায়, ‘আল্লাহ্র কসম, একদম কোরআন শরিফের ওপর হাত রেখে বলি এটা আসলেই একটা পাপমুক্ত ছবি। এই ছবি করতে গিয়ে কোনো অ্যাক্টর, ডিরেক্টর, প্রডিউসার একটা মেয়ের হাত পর্যন্ত ধরে নাই।
‘এই জন্য উনি (রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও নারী উদ্যোক্তা বলে দাবি করা হেলেনা জাহাঙ্গীর) বলেছেন এটা একটা পাপমুক্ত ছবি, আমিও বলছি এটা আসলেই একটা পাপমুক্ত ছবি। এই ছবিতে কোনো পাপ নাই।’
এই সিনেমাটিতে অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেছেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। তিনিই প্রথম এক ফেসবুক পোস্টে সিনেমাটিকে ‘পাপমুক্ত’ বলেন।
রাসেলের বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সিনেমায় কয়েকটি দৃশ্যের ছবিও ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যায় তিনি অভিনেত্রীর হাত ধরেছেন, এমনকি আরও ঘনিষ্ঠ দৃশ্যও রয়েছে।
বিপাকে পড়া রাসেল মিয়া এবার দাবি করছেন, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ‘পাপমুক্ত’ সিনেমা বলে কিছু নেই। তিনি আবেগের বশে ভিডিওতে আগের বক্তব্যটি দিয়েছিলেন। তবে সিনেমার জগৎ বশ করে ফেলেছে রাসেলকে, তাই ‘পাপ’ থাকলেও অভিনয় ছাড়তে রাজি নন তিনি।
রাসেল সোমবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিনেমার বাইরে একটা বেগানা মেয়ের হাত ধরা অবশ্যই পাপ এবং সিনেমার মধ্যে আমি যে একটা মেয়ের হাত ধরেছি এটাও পাপ। একজন মুসলমান হিসেবে বলব, আমি কোথাও পাইনি সিনেমা করলে মানুষ (পাপমুক্ত থাকে)…।
‘আমি সব জায়গায় পেয়েছি (পাপমুক্ত) সিনেমা, এটা নাই। পবিত্র কোরআন, হাদিসে সিনেমা করার পারমিশন কোথাও নাই। আমি এটা জানি, কিন্তু আমার মন সেদিকে (সিনেমা) চলে গেছে। আমি বের হতে পারছি না, আমি কী করব বলেন?’
রাসেল যেন অনেকটা ‘জেনেশুনেই বিষ পান করা’র সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি জেনেশুনেই এই পাপ করতেছি এবং আল্লাহ্র কাছে ক্ষমাও চাচ্ছি। আল্লাহকে বলেছি আমার আবেগ সিনেমা-নাটকে চলে আসছে, আপনি আমাকে মাফ করে দিয়েন।’
তবে নিজের পক্ষে কিছু যুক্তিও দাঁড় করিয়েছেন রাসেল।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিনেমা যে পাপমুক্ত বা সিনেমা হালাল- আমি এটা কিন্তু বলিনি। এই ছবি করতে গিয়ে আমি ব্যক্তিগত কোনো পাপ করিনি। আমি বোঝাতে চেয়েছি, ব্যক্তি পাপ ছাড়াও বাংলাদেশে অসংখ্য ছবি হয়।
‘সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে যে মেয়েদের হাত ধরেনি সেটা না। আমি বোঝাতে চেয়েছি- আছে না ব্যক্তিগতভাবে কারও হাত ধরা, তার সঙ্গে আলাদা একটু সময় কাটানো… (সেটি হয়নি)।’
রাসেল মিয়া বলেন, ‘আমি বলতে চেয়েছি সিনেমার বাইরে আমরা কেউ হাত ধরিনি। শুটিং চলাকালে তো আমি নায়িকার হাত ধরেছি, নায়িকারে তো কোলেও নিছি। এই হাত ধরা, আর সেই হাত ধরার মানে তো এক না। হাত ধরা ছাড়া কি ছবি হয়!’
নতুন আরও একটি সিনেমা নিয়ে আসছেন বলে জানান রাসেল। তিনি বলেন ‘খুব শিগগিরই সাংবাদিকদের ডেকে জানানো হবে।’
অভিনয়ে নিজেকেই নিজের আইডল মনে করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছেলে রাসেল। তিনি বলেন, ‘আমার নিজস্ব যে কোয়ালিটি আছে, আমি ওটাই চেষ্টা করি আমার মতো করে উপস্থাপনের জন্য।’
সিনেমা জগতে আসার পরিক্রমা জানিয়ে রাসেল বলেন, ‘ভাইয়ারে ছবিটা করার আগে আমার ছোট ছোট কনটেন্ট আছে ১০৭টার মতো। বিভিন্ন মেসেজের ওপর কনটেন্টগুলো করা। সেগুলো ইউটিউবে আছে।
‘আমি যে একেবারে কোনো কাজ করিনি সেটা না। ফার্স্ট টাইম সিনেমাতে আসছি, দর্শকদের যে সাড়া পাচ্ছি…। ভাবছিলাম যে আর সিনেমায় থাকব না, এই অভিনয়-টভিনয় করব না। এটা ক্যাচালের জায়গা। কিন্তু না, যেহেতু দর্শক চায় তাই বাঁচি-মরি সব আল্লাহ্র হাতে। কন্টিনিউ করে যাব ইনশাআল্লাহ।’
‘ভাইয়ারে’ সিনেমা নিয়ে বক্তব্যের পাশাপাশি রাসেল মিয়ার অভিনীত আরেকটি কনটেন্ট ভাইরাল ফেসবুকে। সেখানে ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাককে দায়ী করা হয়েছে।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, জিনস ও টি-শার্ট পরা একজন নারীকে লাঠি নিয়ে তাড়া করছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কনটেন্টে নিজের চরিত্রটি একজন ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’-এর ছিল বলে দাবি করেন রাসেল।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওটা একটা নাটকে আমি অভিনয় করেছিলাম। নাটকে আমি থাকি পাগল। নারীর পোশাকের ওপর এই কনটেন্টটা করা হয়েছে।
‘আমি একটি বিষয় বলি, পোশাক কিন্তু ধর্ষণের মূল কারণ না। এটা একটা নাটক, একটা নাটকে তো সবকিছু বোঝানো যাবে না।
‘ওই নাটকে তীব্র অশালীন পোশাকের বিষয়টি বোঝানো হয়েছে। অশালীন পোশাক বলতে আমরা কী বুঝি? মেয়েরা শার্ট পরে, প্যান্ট পরে এটা কিন্তু অশালীন না। ওই নাটকে মেয়েটা একটা ব্লাউজের মতো ড্রেস পরেছিল, এটা তো একদম ওভার লুক… অশালীন ড্রেস পরেছে ওই ড্রেসটাকে বোঝানো হয়েছে।’