সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া হাওয়া সিনেমায় একটি শালিক পাখিকে খাঁচায় বন্দি অবস্থায় প্রদর্শন ও হত্যা করে খাওয়ার চিত্র দেখানো হয়েছে। ইউটিউব, ফেসবুকে প্রকাশ পাওয়া একই সিনেমার বিহাইন্ড দ্য সিনে দেখানো হয়েছে সামুদ্রিক প্রাণী শাপলা পাতা মাছ তুলে আনার দৃশ্যও। এ ছাড়া কাছাকাছি সময়ে আরও কয়েকটি নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্রে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ লঙ্ঘন করতে দেখা গেছে দাবি করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিবেশবাদী ৩৩টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট’ (বিএনসিএ)। তাদের মতে, এর ফলে বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধ বাড়ার পাশাপাশি বন্যপ্রাণীরা হুমকির মুখে পড়ছে।
বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জোটের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'গত ২৯ জুলাই মুক্তি পাওয়া ব্যতিক্রমী চলচ্চিত্র হাওয়া বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আমরা বাংলা চলচ্চিত্রের এই সুদিনকে স্বাগত জানাই। কেননা আমরা বিশ্বাস করি, দায়িত্বশীল সংস্কৃতি বা চলচ্চিত্র মানুষকে সুপথ দেখাতে পারে। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত চলচ্চিত্রটির রিভিউ ও হলফেরত দর্শকের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি চলচ্চিত্রটিতে একটি শালিক পাখিকে খাঁচায় বন্দি অবস্থায় প্রদর্শন ও একপর্যায়ে হত্যা করে খাওয়ার দৃশ্য দেখানো হয়েছে। যার মাধ্যমে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে। একই সঙ্গে সেই চলচ্চিত্রের প্রকাশিত বিহাইন্ড দ্য সিনে সামুদ্রিক প্রাণী শাপলা পাতা মাছও তুলে আনতে দেখা গেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'প্রতিদিন চলচ্চিত্রটি হাজার হাজার মানুষ দেখছে। আমরা মনে করছি, সমাজের আইডলদের মাধ্যমে এই ধরনের বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধ চিত্রায়ণের কারণে সাধারণ মানুষ পাখি শিকার, খাঁচায় পোষা ও হত্যা করে খাওয়ায় উৎসাহিত হবে। জেলেরা শাপলা পাতা মাছ শিকারেও উৎসাহিত হবে, যা প্রকৃতি থেকে এই প্রাণীদের বিলুপ্ত করে দিতে পারে। যার প্রভাব পড়তে পারে পুরো প্রতিবেশ ব্যবস্থায়। তাই দ্রুত এই চিত্র দেখানো বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।'
বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের নীরব ভূমিকা দেখে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনসিএ আহ্বায়ক।
তিনি বলেন, 'দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা হলো চলচ্চিত্রটি প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষের কাছে পৌঁছালেও এই চলচ্চিত্রে বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত সুস্পষ্ট অপরাধের দৃশ্য প্রদর্শন নিয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটকে। এর মাধ্যমে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও আইন বাস্তবায়নে সংস্থাটির আন্তরিকতার ঘাটতি সুস্পষ্ট হচ্ছে, যা দেশের সচেতন নাগরিকদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।'
বিএনসিএ-এর দাবি, এখনই চলচ্চিত্রটির প্রদর্শন বন্ধ করে আইন লঙ্ঘনের চিত্র সংস্কার করা এবং বন্যপ্রাণী হত্যার দৃশ্য দেখানোর জন্য চলচ্চিত্রটির পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট অভিনেতাকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। শিগগিরই ব্যবস্থা না নিলে বন্যপ্রাণী রক্ষার স্বার্থে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো আন্দোলনে নামবে বলে জানানো হয় বিবৃতিতে।