‘মাটির বাংলার, শ্যামলা চামড়ার
মাঝি মাল্লা, কৃষি কামলা
মর্জিনার দেওয়ানা, যাযাবর যতটি জটা পাগলা
ঢোলের তালে হেইলা দুইলা
নাইচা, গায়া, হাইসা, খেইলা
জাললে জালালি জালা
ভবের বাত্তির জোলাভাতি
গানের পাগল, জাতের পাগল, জুইতের পাগল, ভাতের পাগল, গোলে পাগল, মালে পাগল, বাক্সে বন্দি লক্ষ্য পাগল, ভবের পাগল, রবের পাগল, দুনিয়ার সবই পাগল
জাললে জালালি জালা, জাললে জালালি শই’
কোক স্টুডিও বাংলায় ‘ভবের পাগল’ গানে উপরের লাইনগুলো গেয়েছে জালালি সেট।
বাংলার হিপ-হপ গানের দলটি বাংলায় র্যাপ করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। চার জনের এ দলে রয়েছেন এমসি মাগজ, জালালি সাফায়াত, ডাবল এস ও সাধু।
জালালি সেটের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীতকোক স্টুডিও বাংলার মঞ্চে তাদের গান পরিবেশনের কারণে শ্রোতাদের কাছে আরও কিছুটা এগিয়ে গেছে জালালি সেট। ২৮ জুলাই রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে পরিবেশনার পর নিউজবাংলার কথা হয় জালালি সেটের সঙ্গে।
এমসি মাগজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোক স্টুডিও বাংলা প্লাটফর্মটা খুব মেইনস্ট্রিম। আমাদের বাংলা র্যাপ গান তো অনেকদিন আন্ডারগ্রাউন্ড ছিল, এখনও আছে, কিন্তু এই কোক স্টুডিও প্লাটফর্মের কারণে আমাদের একটা নতুন ক্রাউড হইছে, সেটা মেইনস্ট্রিম ক্রাউড।
‘যাদের বয়স একটু বেশি যেমন আমাদের মা-বাবা, ওই ক্রাউডটা আমরা ক্যাপচার করতে পেরেছি। প্রচুর সাড়া পাচ্ছি, কনসার্ট, সাউন্ড ট্র্যাক, এজেন্সি, ফিল্মের কাজগুলো আসতেছে। টুকটাক সবদিক দিয়ে অনেকে নক করছে। আর একটা বাজ ক্রিয়েট হইছে।’
কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার এ কৃতিত্ব এমসি দিয়েছেন অর্ণবকে। তিনি কোক স্টুডিও বাংলার সংগীত প্রযোজক। এমসির মতে মেইন স্ট্রাগলটা করেছেন অর্ণব। বাংলা র্যাপকে মেইনস্ট্রিমে তুলে ধরেছেন তিনি।
জালালি সেট এখন নতুন কিছু লক্ষ্য তৈরি করছে। এমসি মাগজ বলেন, ‘লক্ষ্যের তো কোনো শেষ নাই। একসময় আমাদের গোল ছিল যে, মার্কেটে একটা অ্যালবাম থাকবে। ২০১৫ সালে আমাদের প্রথম অ্যালবাম বের হয়।
এমসি মাগস (বাঁয়ে), সাফায়াত (মাঝে), ডাবল এস (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত‘এখন নতুন নতুন অনেক গোলস তৈরি হচ্ছে। আমরা লং টার্ম চিন্তা ভাবনা করি বাংলা র্যাপ নিয়ে। আর স্ট্রাগল তো চলছেই।’
র্যাপ মিউজিককে পেশা হিসেবে নিয়ে টিকে থাকা যাবে কি না জানতে চাইলে সাফায়াত জানান, বাংলাদেশের মিউজিক থেকে আর্টিস্টরা অনেক কিছু করে ফেলছে এমন না। বেশিরভাগ আর্টিস্ট শখের বশে মিউজিক করে। যারা র্যাপ করে তারাও শখ থেকেই করে। র্যাপ গান নিয়ে এখনও ক্যারিয়ার অপরচুনিটি বাংলাদেশের নাই।
আশাবাদ ব্যক্ত করে সাফায়াত বলেন, ‘রেকর্ড লেভেলস আসছে, ভালো ভালো কাজ হচ্ছে। আরও কিছু বছর যাওয়ার পর হয়তো আমরা একটা আউটকাম পাব। দিনশেষে আসলে আমরা হয়তো জিতি, না হয় শিখি, ওই হার মানে যে হাল ছাড়ে। আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জালালি সাফায়াতকে ‘লোকাল বাস’ গানে একাই পারফর্ম করেছেন র্যাপার হিসেবে। জালালি সেটের যে কেউ চাইলে একাও পারফর্ম করতে পারেন বলে জানান তিনি।
সাফায়াত বলেন, ‘এটাই তো জালালি, স্বাধীন। যে যার মতো কাজ করতেছে, সবাই সবার কাজ হাসিল করতে হয়। আমরা এক সঙ্গে কাজ করি, আবার যখন একজনের করা দরকার, উনার জন্য বেটার, তখন উনি করে। যেমন কোক স্টুডিও তে আমরা টোটালি মার্কস ভাইয়ের উপর ডিপেনডেন্ট ছিলাম। ভাই যেটা করবে সেটাই।’
জালালি সেটের নতুন পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ডাবল এস বলেন, ‘আমাদের প্রথম অ্যালবাম করার পর আরেকটা গোল ছিল যে, আমরা আরেকটা অ্যালবাম করব। এখন তো অ্যালবামের যুগ নাই আর। আমাদের কাজ চলতেছে নতুন গানের, পাশাপাশি আমাদের আরও কিছু ইনিশিয়েটিভ নেয়ার চিন্তাভাবনা আছে। যেমন ডকুমেন্ট্রি করা, পড কাস্টিং করা। আমরা রেডি হচ্ছি, ভালো অফার আসলে স্পন্সর পেলে আরও কিছু করা যাবে।’
ডাবল এসের সঙ্গে এমসি আরও যুক্ত করে বলেন, ‘বাংলা র্যাপ কালচারে কোনো পডকাস্ট নাই, কোনো ডকুমেন্ট্রি নাই। এগুলো আমরা এবার করতে চাই।
জালালি সেটের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত‘২০১৫ তে আশাদের প্রথম অ্যালবাম আসছে। তখন থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত অনেক ম্যাটেরিয়াল আমরা জমিয়েছি। আমরা ইচ্ছা করে মাঝে মাঝে ব্রেকটা নেই। আমরা পরিমাণের চেয়ে মানে বিশ্বাস করি। ব্রেকের মধ্যে আমরা শব্দ কালেক্ট করি। বাংলা র্যাপ ইন্ডাস্ট্রিতে আমাদের যে লিরিক্স বা শব্দ সেটা খুব ইউনিক।’
শ্রোতাদের আহ্বান জানিয়ে সাধু বলেন, ‘কোক স্টুডিওর পর আমরা অনেক কনসার্টস পেয়েছি। ফ্রেন্ডদের বলব, আমাদের শো তে জয়েন কর, এনজয় কর।’
এমসি মাগজ র্যাপের পাশাপাশি বিট বানান, গ্র্যাফিতি করেন, হিপ-হপ অন্য কিছু অ্যাকটিভিটিসের সঙ্গে যুক্ত আছেন। সাধু এখনও স্টুডেন্ট, সঙ্গে মিউজিশিয়ান, ব্যবসায়ী।
ডাবল এস শখ থেকেই শুরু করেছিলেন হিপ হপ র্যাপ। এখন ফ্যামিলি বিজনেসও দেখছেন। আর সাফায়াত তার সঙ্গে শুধু র্যাপার পরিচয়টাই রাখতে চান।