ভালো সিনেমার অভাব ও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দীর্ঘ সময় ধরে হলবিমুখ দর্শক। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া কয়েকটি সিনেমাকে ঘিরে পুরোনো চাঙাভাব ফিরে আসতে শুরু করেছে সিনেমা হলগুলোতে। এমনকি জমজমাট সিনেমা হলের পুরোনো অনুষঙ্গ টিকিট কালোবাজারি বা ব্ল্যাকারদের তৎপরতাও দেখা গেছে কিছু হলে।
এমন অবস্থা দেখা যায় রাজধানীর মধুমিতা হলে। রোববার বিকেলে সেখানে হাওয়া সিনেমার সন্ধ্যা ৬টার শোয়ের আগে সেখানে দেখা যায়, দ্বিগুণ দামে টিকিট বিক্রি করছেন কালোবাজারিরা। তবে এ নিয়ে খুব বেশি অভিযোগ নেই দর্শকদের।
টিকিট কাউন্টারে জিজ্ঞেস করে জানা যায়, সন্ধ্যা ৬টার শোয়ের টিকিট এখনও সব বিক্রি হয়নি। তাহলে কালোবাজারিদের কাছে কীভাবে টিকিট গেল? এমন প্রশ্নে কর্তব্যরত টিকিট বিক্রেতা কোনো উত্তর দেননি।
সিনেমা দেখতে আসা একাধিক দর্শক জানান, তারা যে ক্যাটাগরির টিকিট কিনতে চান, সেটি কাউন্টারে শেষ হয়ে গেছে বলে জানানো হয়েছে। তাই তারা কালোবাজারিদের কাছ থেকে টিকিট কিনছেন।
সিনেমার সুদিনে হলে কালোবাজারিতে টিকিট বিক্রি বেড়েছে বলে বলছেন অনেক দর্শক। ছবি: নিউজবাংলানাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর ওয়ারী থেকে আসা এক দর্শক বলেন, ‘আমরা কয়েকজন হাওয়া সিনেমা দেখতে এসেছি। কাউন্টারে ডিসির টিকিট পাচ্ছি না। তাই তাদের (কালোবাজারিদের) কাছ থেকে নিতে হলো।’
তিনি জানান, ১৫০ টাকার ডিসির টিকিট ৩০০ টাকা করে কিনেছেন তারা। এ রকম একাধিক দর্শককে দেখা গেছে কালোবাজারিদের কাছ থেকে টিকিট কিনতে।
মধুমিতা হলে আসনসংখ্যা প্রায় ১ হাজার ২০০। হলটির সুপারভাইজার শাহজাহান জানান, এর মধ্যে ডিসি ক্যাটাগরির ৩২৬টি, রিয়াল ৫৯৯টি ও সেকেন্ড ক্লাস ২৭০টি আসন রয়েছে।
রাজধানীর ওয়ারী থেকে এসেছেন আরেক দর্শক মুশফিকুর আহমেদ আবীর। তিনি পরিবার নিয়ে রাত ৯টার শো দেখবেন। তাই তিনি একা আগেই এসেছেন টিকিট কিনতে। কিন্তু ৯টার শোয়ের জন্য সাড়ে ৮টায় খুলবে কাউন্টার।
কালোবাজারিদের কাছে সেই শোয়ের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। আবীর বলেন, ‘আমরা পরিবারের প্রায় ১০-১২ মিলে সিনেমাটি দেখব। তাই ভাবলাম, আগেই কাটি, পরে এসে যদি টিকিট না পাই। কিন্তু ডিসির কাউন্টার বন্ধ। এদিকে ওরা (কালোবাজারিরা) টি-শার্ট ধরে টানাটানি করেছে তাদের কাছ থেকে টিকিট কিনতে। ১৫০ টাকার টিকিট ৩০০ টাকা চায়। এত টাকা দিয়ে তো কেনা যাবে না।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মধুমিতা হলের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রি হচ্ছে এটা আমাদেরও চোখে পড়েছে, কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। গত শুক্রবার তো এদের সঙ্গে সম্ভবত দর্শকদের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে, তিন কালোবাজারিকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল। আবার বোধ হয় ছেড়েও দিয়েছে। এরা একটা সিন্ডিকেট, এদের রোখা কঠিন।’
আবার কালোবাজারে টিকিট বিক্রিকে এক রকম ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে দেখতে চান এই হল মালিক। তিনি বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে কিন্তু বলা যায় আবার আগের মতো ফিরছে আমাদের সিনেমা- এটাও একটা ভালো দিকই বলা যায়। আমরা দীর্ঘ সময় খরার মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছি। দর্শকও ছিল না, এই কালোবাজারিরাও ছিল না।’
এ মুহূর্তে কেমন ব্যবসা হচ্ছে জানতে চাইলে নওশাদ বলেন, ‘দিন-দ্যা ডে, পরাণ এখন তো হাওয়া চলছে, তিনটাই মোটামুটি ভালোই যাচ্ছে। হাওয়া তো দুদিন হলো, শুক্র-শনি প্রায় সব শোয়ের বেশ ভালোই ছিল।’