হাওয়া সিনেমার ট্রেইলার শুরুই হচ্ছে এক নারীকে আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। যেখানে দেখা যাচ্ছে নৌকার প্রধান এক নারীকে প্রশ্ন করছেন, ‘এই কোন বোটে থে আইছ, সত্যি কইরা কও।'
এই প্রশ্ন থেকে স্পষ্টই বোঝা যায়, সেই নারী নৌকায় আগে থেকে ছিল না, হঠাৎ করে তাকে আবিষ্কার করেছেন মাঝিমাল্লারা। আর সেখান থেকেই রহস্যের শুরু।
প্রথম প্রশ্নটি যিনি করছেন তার নাম চান মাঝি। তিনি নৌকার প্রধান। এ বিষয়টি প্রমাণিত হয় ট্রেইলারের একটি সংলাপে। সেখানে চান মাঝি বলছেন, ‘চান মাঝির বোট ঘাটে ফিরবে না’।
অভিনেত্রী নাজিফা তুষি। ছবি: জয়িতা আফরিন
যাকে প্রশ্ন করা হলো, সেই নারীর নাম গুলতি। ট্রেইলারে ছোট ছোট দৃশ্যে ধরা পড়ে তার ভিন্ন ভিন্ন রূপ এবং তাকে ঘিরে রহস্যময়তা।
এই রহস্যটি তৈরি করতেই হয়তো সিনেমার বা যে নৌকাকে ঘিরে সিনেমার গল্প, সেখানে একমাত্র নারী চরিত্রটি এটি। চরিত্রটিতে অভিনয় করেছেন নাজিফা তুষি।
প্রকাশিত ট্রেইলারের একটা বড় অংশজুড়ে গুলতি বা নাজিফা তুষি সম্পর্কিত ঘটনা। তাহলে তিনিই কি সিনেমার প্রধান টুইস্ট?
‘আমি বিষয়টা এভাবে দেখি না। প্রতিটা চরিত্রের ইমপ্যাক্ট আছে গল্পে। সিনেমায় প্রধান চরিত্র বলে কিছু নাই। আমি এভাবে বলতে পারি যে, আমার চরিত্রটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং আমার চরিত্রটির জন্যই গল্পে অনেক ঘটনা ঘটে।’ নিউজবাংলাকে মঙ্গলবার বিকেলে এভাবেই নিজের চরিত্র সম্পর্কে জানান তুষি।
ট্রেইলারের পুরোটা সময় নাজিফা তুষিকে দেখা গেছে নানা রূপে। প্রথম দৃশ্যে তাকে দেখা গেছে ভীতসন্ত্রস্ত, মাঝখানের দিকে তিনি হাজির হয়েছেন মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে। শেষ দিকে তুষিকে মারামারি করতে দেখা গেছে, আবার সমুদ্রের পানিতে ভালোলাগার মোহেও পড়তে দেখা গেছে তাকে।
অভিনেত্রী নাজিফা তুষি। ছবি: জয়িতা আফরিন
কোনটি আসল গুলতি? তুষি বলেন, ‘আমি একেক জনের সঙ্গে একেক রকম। আর সব রকম মিলিয়েই আমি। সিনেমায় আমার চরিত্রটা অনেক ডায়নামিক। কোথাও চরিত্রটি ভীত, কোথাও হিংস্র, সাহসী, কোনো সময় সে রহস্যময়ী। চরিত্রটির একটি দর্শনগত দিকও আছে। সেটি মুক্তির পর ভালো করে বোঝা যাবে।’
হাওয়া সিনেমার ধারণা দিতে গিয়ে পরিচালক অনেকবারই বলেছেন যে এটি একটি রূপকথার গল্প, কিন্তু এটা এ সময়ের রূপকথা। সিনেমাটির গল্পের সঙ্গে মিথ জড়িয়ে আছে।
পরিচালকের বক্তব্যের রেশ ধরে তুষি বলেন, ‘সমুদ্র নিয়ে কিন্তু অনেক মিথ আছে মানুষের মধ্যে। আমাদের সিনেমাতেও মিথের ব্যাপার আছে। ট্রেইলারের বিভিন্ন সংলাপে তা প্রতিষ্ঠিতও। মাছ ধরতে যাওয়ার বোটে নারীদের ওঠা নিষেধ, এটা একটা মিথ। এর মধ্যে মাঝ সমুদ্রে একটা মেয়ে নৌকায় উঠল কীভাবে, এটাই একটা রহস্য।’
এর বেশি কিছু বলতে চাননি তুষি। এর বেশি কিছু দেখতে হবে প্রেক্ষাগৃহে। ২৯ জুলাই মুক্তি পাচ্ছে সিনেমাটি।
মিথ শব্দটি বারবার আসছে হাওয়া সিনেমাকে ঘিরে। কিন্তু মিথটা নিয়ে অনেক ভাবার দরকার নেই বলে জানালেন তুষি। তিনি বলেন, ‘আমরা একটা সিনেমা বানিয়েছি। সিনেমার গল্প বোঝার জন্য অনেক কিছু জেনে নিয়ে দেখতে বসতে হবে এমন না। পরিচালক এভাবে গল্পটা বলতে চেয়েছেন। কিন্তু দর্শকরা যেন সেটা দেখে সহজেই বুঝতে পারেন, এনজয় করেন সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। কেউ যদি ক্রিটিক্যালি অ্যানালাইসিস করতে চান তাহলে মিথ বা অন্য টার্মগুলোর প্রয়োজন হতে পারে।’
হাওয়া সিনেমাকে বলা হচ্ছে ‘মডার্ন ফেরিটেল’। স্বাভাবিকভাবেই এখানে মিথের ছোঁয়া রয়েছে, পাশাপাশি এখানে সম্পর্ক ও প্রতিশোধের গল্পও রয়েছে।
অভিনেত্রী নাজিফা তুষি। ছবি: জয়িতা আফরিন
হাওয়া সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ রয়েছে। জানা যাচ্ছে কিছু প্রেক্ষাগৃহে অগ্রীম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে সিনেমাটির এবং দুই তিন দিনের শো হাউজফুল হয়ে আছে। বিষয়টি যেমন আনন্দের তেমন চাপেরও।
তুষি বলেন, ‘এটা সত্যি চাপের। আমি তো অনেককে বলছি যে, অনেক আহামরি কিছু দেখব এমন প্রত্যাশা নিয়ে যাওয়ার দরকার নাই। এটা একটা সাধারণ ও সুন্দর গল্প হিসেবে আমার দর্শকদের সামনে আনতে চাই।’
তুষি দর্শকদের বলতে চেয়েছেন, সবাই সিনেমাটি এনজয় করেন, মজা করেন।