অনেক তারকা শিল্পী নিয়ে নির্মিত হয়েছে ওয়েব সিরিজ কাইজার। যার মূল আকর্ষণ অভিনেতা আফরান নিশো। তিনি নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। ৮ জুলাই সিরিজটি মুক্তি পাবে হইচইতে; বুধবার বিকেলে প্রকাশ পায় এর ট্রেইলার।
রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সিরিজের ট্রেইলার প্রকাশ অনুষ্ঠানে পরিচালক তানিম নূর বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই একটা গোয়েন্দা চরিত্র তৈরি করার ইচ্ছা ছিল। ছোটবেলায় তিন গোয়েন্দা, ফেলুদা, ব্যোমকেশ পড়েছি। এগুলো তো পশ্চিমবঙ্গের চরিত্র। আমার ইচ্ছা ছিল ঢাকার একটা গোয়েন্দা চরিত্র তৈরি করার।’
তানিম আরও জানান, ২০১৪ সালে প্রথম কাইজার নাম দিয়ে দুই পৃষ্ঠা লিখেছিলেন। সেই ভাবনাটিই এবার আরও বড় পরিসরে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন তিনি। জার্মান সম্রাটদের কাইজার বলা হয়, সেখান থেকেই নামটি নিয়েছেন পরিচালক।
কাইজার ওয়েব সিরিজের অভিনয়শিল্পীরা। ছবি: সংগৃহীত
কাইজার চৌধুরী পুলিশের এডিসি, তিনি হোমিসাইড ডিটেকটিভ। তিনি ভিডিও গেম অ্যাডিক্ট। হোমিসাইড ডিটেকটিভ হলেও তিনি রক্ত ভয় পান। অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন এবং ভিডিও গেম আসক্তির জন্য তার ব্যক্তিগত জীবন বিপর্যস্ত। ডিপার্টমেন্টেও তার খুব সুনাম নেই। কিন্তু ডিটেকটিভ হিসেবে তিনি প্রথম শ্রেণির। তার বুদ্ধিদীপ্ততার জন্যই তিনি এখনও চাকরিতে বহাল রয়েছেন।
পরিচালক তানিম নূরের মতো অনেকেই ফেলুদা, ব্যোমকেশ পড়েছেন। চরিত্র দুটি যেমন বুদ্ধিদীপ্ত, তেমন তারা কথায়, আচারে, স্বভাবে এবং পোশাকে পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিকে প্রতিনিধিত্ব করেন।
কিন্তু কাইজারের এমন কী বৈশিষ্ট আছে, যা দেখলে মনে হবে তিনি ঢাকার গোয়েন্দা, জানতে চাইলে পরিচালক তানিম নূর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের জগৎ কিন্তু যা দেখি তার মধ্যে সীমাবদ্ধ না। আমাদের চিন্তার বাইরেও অনেক মানুষজন আছে। আমার মনে হয়েছে আমার ক্যারেক্টার হোমিসাইড, গেম অ্যাডিক্ট, রক্ত দেখে ভয় পায়- এমন হলে ভালো লাগবে। আমার মনে হয় সিরিজটি রিলিজ হলে আরও কিছু পাওয়া যাবে, আপনারা বুঝতে পারবেন। খুব রেগুলার, সাদামাটা ও সাধারণ একজন হিসেবেই দেখানো হয়েছে কাইজারকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেমন বাস্তবতা দেখাই, তেমনি বাস্তবতা নতুন করে নির্মাণ করি, সেখানে আমার লিবার্টি আছে। ক্যারেক্টার গিটার বাজাতে পারে, ক্যারেক্টার রান্না ভালো করতে পারে।’
সিরিজে কাইজার একজন গোয়েন্দা বিভাগের চাকরিজীবী। ঢাকার একজন গোয়েন্দা চরিত্র শুধু গোয়েন্দা হিসেবেই প্রতিষ্ঠা পেতে পারত, তার চাকরি করার প্রয়োজন কেন হলো জানতে চাইলে তানিম বলেন, ‘প্রথমে আমি যখন ভেবেছিলাম তখন আমি প্রাইভেট ডিটেকটিভই পেয়েছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশে প্রাইভেপ ডিটেকটিভের কিছু করার সুযোগ খুব কম। ফোর্সের মধ্যে থাকলে চরিত্রটির এক্সেসেবিলিটি অনেক বেড়ে যায়। যদি প্রাইভেট ডিটেকটিভ হয়, তাহলে তো অনেক ক্ষেত্রে সে এক্সেসই পাবে না।’
ওটিটিতে ডার্ক বা থ্রিলার ঘরানার গল্পের নির্মাণ বেড়েছে। সেখানে অনেক টেনশন, ওনেক রহস্য, অনেক ক্রাইসিস। কিন্তু আটপৌরে জীবন বা দেখা জীবন ও যাপনের গল্প অনেকটাই কম। এ সিরিজেও কাইজার চরিত্রটিকে অদেখা বৈশিষ্ট্যের মানুষ হিসেবে দেখানো হলো কি না জানতে চাইলে তানিম বলেন, ‘আমি আসলে এভাবে ভাবি না, গল্প বিভিন্ন রকমের হবে। সেটা রিয়েলিস্টক হবে, ফ্যান্টাসি হবে। আমি নিজে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হই। সেটা আমার নির্মাণে প্রভাব ফেলে।’
কাইজারের ছোটবেলার বন্ধু অম্লান (মোস্তাফিজুর নূর ইমরান) এবং তন্ময় (শঙ্খ জামান)। কাইজারের অনিয়ন্ত্রিত জীবনে অভ্যস্ত হতে না পেরে তার স্ত্রী শিরিন (শিমু) কাইজারকে ডিভোর্স দিয়ে অম্লানকে বিয়ে করে। এ ব্যাপারটি কাইজার মেনে নিতে পারেনি। কাইজারের মেয়ে নিকিতা (ঋদ্ধি) কাইজারকে ‘বাবা’ এবং অম্লানকে ‘আব্বু’ বলে ডাকে যা কাইজারের মেনে নিতে কষ্ট হয়।
কাইজার ওয়েব সিরিজের নারী ও শিশুশিল্পী। ছবি: সংগৃহীত
গেমিং পার্টনার অনন্ত (সৌম্য জ্যোতি) কাইজারের সার্বক্ষণিক সঙ্গী। কাইজারের অসংখ্য দোষ রয়েছে কিন্তু জীবনের গভীরে উঁকি দিলে দেখা যায় সেও একজন সংবেদনশীল মানুষ। গুলশানে একটি ফ্ল্যাটে প্রভাবশালী পরিবারের দুই তরুণীকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। এই জোড়া খুনের রহস্য সমাধানের দায়িত্ব এসে পড়ে এডিসি কাইজারের ওপর। এ রকম একটি গল্প নিয়েই কাইজার সিরিজটি আবর্তিত হয়েছে।
এতে আরও অভিনয় করেছেন শতাব্দী ওয়াদুদ, সুমন আনোয়ার, ইমতিয়াজ বর্ষণ, শিশুশিল্পী ঋদ্ধি, দ্বীপান্বিতা মার্টিন, স্বাগতাসহ অনেকে।
ট্রেইলার প্রকাশ অনুষ্ঠানে নিশো বলেন, ‘কাইজার চরিত্রটি দাবাং না, সুপারহিউম্যান না। সে সাধারণ। আপনারা তাকে সেভাবেই ভাববেন।’
সিরিজটি প্রযোজনা করেছে ফিল্ম সিন্ডিকেট।