প্রমত্তা পদ্মার দুটি প্রান্ত মাওয়া ও জাজিরা। দুই কূলে দুজন দাঁড়িয়ে ‘এই কূলে আমি আর ওই কূলে তুমি, মাঝখানে নদী ওই বয়ে চলে যায়’ গানটি গাওয়ার আর সুযোগ নেই। কারণ দুকূল এক হয়েছে।
দুই কূলকে এক করেছে পদ্মা মহুমুখী সেতু। শনিবার সকালে সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজস্ব অর্থায়নে এত বড় প্রকল্প দেশে এটাই প্রথম। তাই পদ্মা সেতু মানে স্বপ্নজয়, পদ্মা সেতু মানে দেশের সক্ষমতার প্রতীক।
সারা দেশে সব পেশাজীবী বিভিন্নভাবে আনন্দ উদযাপন করছেন। নৃত্যশিল্পী মোফাস্সাল আল আলিফ ও মাটি সিদ্দিকী জুটি তাদের কাজের মাধ্যমে পদ্মা সেতু চালুর আনন্দ প্রকাশ করেছেন।
ছবিতে মাটি ও আলিফ। ছবি: মোমেন্টওয়ালা
শুক্রবার আলিফ তার ফেসবুকে কিছু ছবি পোস্ট করেন। ছবিতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে আনন্দ-উদযাপন, আলিঙ্গন ও দূরত্ব ঘুচে যাওয়ার আবেদন।
আলিফ ছবিগুলোর ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘দূরত্ব কমল, স্বপ্ন আজ সত্যি হলো।’ যদিও ছবি দেখে আর ক্যাপশন পড়ার প্রয়োজন হয় না।
এ ছবিগুলোর পেছনের গল্প, কোরিওগ্রাফি এবং পরিকল্পনার কথা জানতে নিউজবাংলা কথা বলে আলিফের সঙ্গে।
আলিফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা একটা যৌথ কাজ। এই কাজটির মূল পরিকল্পনা করেছে ফটোগ্রাফি প্ল্যাটফর্ম মোমেন্টওয়ালা। পদ্মা সেতু উদ্বোধন নিয়ে অনেকেই যার যার জায়গা থেকে উদযাপন করছেন। এ উদযাপনে আমরাও শামিল হতে চেয়েছি, সে জন্যই কাজটি করা।’
বিস্তারিত জানিয়ে আলিফ বলেন, ‘আমরা কোনো পূর্ব-অনুমতি না নিয়েই গিয়েছিলাম পদ্মা সেতুতে ছবি তুলতে। যেসব জায়গায় ছবি তুলতে চেয়েছিলাম, তার কোনো জায়গাতেই ছবি তুলতে পারিনি। বিকেলের দিকে পৌঁছে অনেকের সঙ্গে কথা বলতে বলতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। আমরা যে ছবিগুলো তুলেছি, সেগুলো একটি রেস্ট্রুরেন্টের ছাদে তোলা। সেখানেও কিছু অসুবিধা ছিল। খুব তাড়াতাড়ি করে ছবিগুলো তুলে চলে এসেছি, দিনের আলোও নিভে যাচ্ছিল।’
আলিফ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বাবিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। ২০১৮ সালে তিনি যান মুম্বাইতে। নৃত্যের ওপর কোর্স করে ২০২০-এ ঢাকায় ফেরেন। এখন তিনি নাচ শেখান এবং একই সঙ্গে বিভিন্ন আয়োজনে প্রফেশনালি কাজ করছেন।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের ছবি কেমন হওয়া উচিত? তা ভাবতে গিয়ে আলিফের একটি বিষয়ই মনে হয়েছে, সেটি হলো দূরত্ব কমে যাওয়ার বিষয়টি।
আলিফ বলেন, ‘এখন আর অপেক্ষা নয়, সেই আনন্দটাই আমরা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি ছবির মধ্যে। ছবি দেখে অনেকে আবার মনে করতে পারেন, এ বুঝি শুধু ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাওয়ার আনন্দ; তা কিন্তু নয়। দুই কূল এক হয়েছে, এখন সব অপেক্ষারই অবসান ঘটল, সেই আনন্দটাই তুলে আনার চেষ্টা করেছি।’
ছবিতে আলিফের সহশিল্পী মাটি সিদ্দিকী। তারা দুজন জুটি হয়ে অনেক কাজ করেছেন। অনেক থিমের ওপরেই কাজ করা হয়েছে তাদের। অনেক দিন ধরেই একসঙ্গে তারা কাজ করে বলে জানান আলিফ।
এই প্রজেক্টের মূল পরিকল্পনাকারী নাজমুল হোসেন। তিনি ছবিগুলো তুলেছেন এবং মোমেন্টওয়ালা ফটোগ্রাফি প্ল্যাটফর্মের কর্ণধার তিনি।
১৯ জুন তোলা ছবিগুলো কীভাবে এবং কী পরিকল্পনায় তোলা হলো, সেই গল্পই জানিয়েছেন নিউজবাংলাকে।
ছবিতে মাটি ও আলিফ। ছবি: মোমেন্টওয়ালা
নাজমুল বলেন, ‘আমি, আলিফ অনেক দিন ধরেই একে ওপরকে চিনি। পদ্মা সেতুতে ছবি তোলার পরিকল্পনার কথা জানাতেই আলিফ জানান যে, সে আর মাটি মিলে কাজটি করবেন। আমি ভেবেছিলাম নৌকা নিয়ে ব্রিজের নিচের অংশে নানাভাবে ছবি তুলব। স্পটে যাওয়ার পর আরও অনেক কিছুই করা যাবে ভেবেছিলাম। কিন্তু তার কিছুই করা যায়নি অনুমতি না থাকার কারণে। যে ছবিগুলো দেখছেন সেগুলো আসলে মূল পরিকল্পনার ১০ ভাগও না।’
তিনি আরও বলেন, ‘অল্প একটু জায়গার মধ্যে অল্প কিছুক্ষণ ছবি তোলার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের পরিকল্পনা ছিল দিনের আলোয় ছবি তোলার। কিছুই হয়নি। আলিফের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে জন্য, অল্প সময়ের মধ্যেই কিছু ছবি তোলা গেছে। ওইটুকু সময়ের মধ্যে আমরা যে অনেক পরিকল্পনা করেছি তা না। যেটা মনে এসেছে সেটাই করেছি।’
ছবিগুলোকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নাজমুল বলেন, ‘এখানে একটা সংযোগ তৈরি হলো। দুই পারের মানুষের সংযোগ। ছবিতে যে আলিঙ্গন দেখছেন, এ আলিঙ্গন যে কারও হতে পারে। এ আলিঙ্গনের মাধ্যমে যেন সব দূরত্ব ঘুচে যায়।’
মনের মতো করে ছবি তুলতে পারেননি নাজমুল ইসলাম, মনের মতো কোরিওগ্রাফিও করতে পারেননি আলিফ-মাটি। সুযোগ হলে সেই কাজগুলো করে দর্শকদের সামনে আনতে চান।