কলকাতার নজরুল মঞ্চে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কনসার্টের পর রাতে মৃত্যু হয় ভারতের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কেকের।
পশ্চিমবঙ্গে কেকের সেই কনসার্টের আগে সোমবার রাতে ফেসবুক লাইভে এসেছিলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী রূপঙ্কর বাগচী।
সে লাইভে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন শ্রোতাদের প্রতি। শ্রোতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বাঙালি হতে শিখুন, বাঙালি হোন।’
রুপঙ্কর আরও বলেছিলেন, ‘কেকের লাইভ দেখলাম। আমরা ওর থেকে অনেক ভালো গাই, কিন্তু আমাদের নিয়ে এত উন্মাদনা হয় না।’
তার বক্তব্যের পরের দিন নজরুল মঞ্চে কনসার্টের পর চিরবিদায় নেন কেকে। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানারকম কটাক্ষ ও গণ-আক্রোশের মুখে পড়েন রূপঙ্কর।
কদিন ধরে চলা টানা কটাক্ষের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার কলকাতা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে কেকের পরিবারের কাছে নিঃশর্ত দুঃখ প্রকাশ করেছেন রূপঙ্কর।
এবার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি কবিতা লিখেছেন রূপঙ্করের স্ত্রী চৈতালী লাহিড়ি।
শনিবার সকালে ফেসবুকে পোস্ট করা চৈতালীর সেই কবিতায় ফুটে উঠেছে, কেকের ঘটনায় কিভাবে তাদের ওপর নেমে এসেছে মানসিক নিপীড়ন। কিভাবে পরিবারকে সহ্য করতে হচ্ছে দুঃসহ যন্ত্রণা।
‘রাত জাগা ভোর’- শিরোনামের চৈতালীর সেই কবিতাটি নিউজবাংলার পাঠদের জন্য তুলে ধরা হলো-
‘স্যোশাল মিডিয়া তোমার দেওয়া আ্যড্রনালিন রাশ,
ছোট্ট পরিবারের জীবনে নামিয়ে এনেছে ত্রাস।
দরকার একটা স্মার্টফোন আর মনে একরাশ ঘৃণা,
জীবনের যত না পাওয়ার যন্ত্রণা আর কিছু বাহানা।
তারপর একটা লম্বা ট্রীপ এমন নেশা কোনো
মাদকেই হয় না,
উত্তেজনা উত্তেজনা---উফফ দাদা জীবনে কী পাবোনা ভুলেছি সে ভাবনা
এমন একটা বেপরোয়া ঝড়ের মুখে পড়ে,
অসহায় সে পরিবারের টীন এজ মায়ের মনে,
ধরফরিয়ে বুকটা পোড়ে, বরটা বড়ই বোকা
দুনিয়াদারিতে নেহাৎ কাঁচা শিল্প যাপনে মগ্ন থাকা।
এমন কথা কি বলতে হয়, তুমি কি সমাজের হোতা?
কে দিয়েছে মাথার দিব্যি? কেন নড়ল মাথার পোকা?
নিজেকে নিয়ে বাঁচো, নিজের আখের গোছাও ওগো--
মেয়েটার ভবিষ্যৎ আছে, আমার কথাটাও ভাবো।
ভালোই হল চিনতে পেল বন্ধু এবং বাসা
সময় চেনায় কোনটা সত্যি আর কোনটা মরিচীকা
তোমাদেরও ঘরে জানি আছে এমন বোন ও মা
কেমন হবে তাদের জন্য এমন সমালোচনা?
হুমকী ফোন আর অশ্লীলতা ভাষায় ও ভঙ্গীতে
বিনিদ্র রাত দুমুঠো ভাত মুখেও না রোচে।
তবুও ছিলাম নীরব জানি ওটাই তখন শ্রেয়
যতই ভাবি আমার শহর আমার বড় প্রিয়।
অচেনা আজ ঠেকে কেন চেনা লোকের মুখ
বদলে গেল চোখের ভাষা বেড়িয়ে এলো দাঁত নোখ।
ছোট্ট মেয়ে থই পায় না বাবার বিশেষণে,
ভাবছে যতই চোখের পাতা ভিজছে অভিমানে
অবুঝ তাকে কী যে বলি-----
ওরে ভাবিস না রে,
ওসব হল রাগের কথা
ধরতে হয়না ওমন করে।
ঘর সামলাই কাজ সামলাই মুখে হাসি রেখে,
কেউ যেন না বোঝে চোখের কালি রাখি ঢেকে।
সত্যিকারের মানুষ কিছু ঘিরে ছিলেন পাশ
তাদেরও নানান হেনস্তায় কেটেছে দিনরাত।
তাদের বলি তোমাদের আমায় লড়াকু বলেই জানা
এক্ষেত্রে ভুমিকা আমার স্ত্রী ও যশোদা মা।’