সাংবাদিকের ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয় করে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর খেতাব জিতেছেন ইরানের তারকা শিল্পী জার আমির ইব্রাহিমি। হলি স্পাইডার সিনেমায় ৪১ বছরের এ অভিনেত্রী যৌনকর্মীদের সিরিয়াল খুনের সমাধান করার চেষ্টা করেছেন।
ইরানি জার আমির ইব্রাহিমির এই অর্জনের পেছনের গল্পটাও রোমাঞ্চকর। প্রেম নিয়ে একটি প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে পড়লে, ফ্রান্সে পাড়ি জমান ইব্রাহিমি। কান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতে আনন্দে কেঁদে ফেলেন তিনি।
ইব্রাহিমি বলেন, ‘এই মঞ্চে আসতে লম্বা পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। আমার গল্পটা খুব সহজ ছিল না। অনেক অপমানের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, তবে সেখানে সিনেমা ছিল।’
ড্যানিশ-ইরানি আলি আব্বাসি পরিচালিত হলি স্পাইডার সিনেমাটি একজন শ্রমজীবী মানুষের কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত, যিনি ২০০০ সালের গোড়ার দিকে যৌনকর্মীদের হত্যা করেছিলেন। ওই হত্যাকারী ‘স্পাইডার কিলার’ নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন।
ইরানে শুট করার অনুমতি না পাওয়ায় জর্ডানের একটি শহরে সিনেমাটি নির্মিত হয়েছিল। ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে ইরানের অন্যতম পবিত্র শহর মাশহাদ, যেখানে খুনগুলো হয়েছিল।
ইব্রাহিমি ২০-এর দশকের গোড়ার দিকে ইরানে তার সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি সোপ অপেরা ‘নার্গেস’-এ সহায়ক ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয় করে তারকা হয়ে ওঠেন।
Zar AMIR EBRAHIMI, lauréate du Prix d'interprétation féminine pour HOLY SPIDER (LES NUITS DE MASHHAD) de Ali ABBASI. -Zar AMIR EBRAHIMI, award winner for Best actress in HOLY SPIDER by Ali ABBASI. #Cannes2022 #Palmares #Awards #HOLYSPIDER #Photocall pic.twitter.com/9Jxw42xZRM
— Festival de Cannes (@Festival_Cannes) May 28, 2022‘ইরানে দেখানো অসম্ভব’
সিনেমায় ইব্রাহিমির চরিত্রটিও প্রতারণামূলক গুজব এবং পুরুষ দ্বারা হেনস্তার শিকার হয়েছে। সিনেমায় দেখানো হয়, খুনিকে গ্রেপ্তারে সরকারের আগ্রহ কম ছিল, বরং ধর্মবোধকে প্রতিষ্ঠার কারণে তিনি একজন নায়কে পরিণত হয়েছিলেন।
ইব্রাহিমি দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, ‘এই সিনেমাটি নারীদের নিয়ে, তাদের শরীর নিয়ে, মুখ, চুল, হাত, পা, স্তন, যৌনতা নিয়ে। ইরানে দেখানো অসম্ভব সবকিছু দিয়ে পূর্ণ একটি সিনেমা’।
‘সিনেমাটিকে বিতর্কিত চোখে দেখা উচিত নয়’
সাংবাদিকদের ইব্রাহিমি বলেন, ‘এখানে দেখানো সবকিছুই মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। ইরানের লোকেরাও যে যৌনতায় অংশ নেয়, তার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। ইরানের প্রতিটি শহরে যৌনবৃত্তি আছে।
ইরানের রাজধানী তেহরানে বেড়ে ওঠেন ইব্রাহিমি। সেখানে তিনি নাটকের স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। ১৮ বছর বয়সে প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। জ্ঞানী এবং নৈতিক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য দ্রুত পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি।
দক্ষিণ কোরিয়ার অভিনেতা গান কাং-হো এবং ইব্রাহিমি পুরস্কার হাতে পোজ দিচ্ছেন। ছবি: এএফপি
নির্বাসিত জীবন
২০০৬ সাল। কালোবাজারে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও নিয়ে তদন্তে নামে ইরানের কর্মকর্তারা। ভিডিওতে উঠতি এক তারকাকে (ইব্রাহিমি) তার বন্ধুর সঙ্গে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা যায়।
গ্রেপ্তারের ভয়ে ভিডিওর প্রকৃত মালিক দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। সে সময়ে ইব্রাহিমি দাবি করেছিলেন, ‘অনৈতিক প্রচারণার’ শিকার হয়েছেন তিনি। এরপর মামলাটি এতটাই হাই-প্রোফাইল হয়ে ওঠে যে তেহরানের প্রধান প্রসিকিউটর ব্যক্তিগতভাবে তা পরিচালনা করেন।
ইব্রাহিমি তখন প্যারিসে চলে আসেন। ফরাসি বলতে না পারায় অদ্ভুত সব চাকরি তাকে করতে হয়েছে।
‘আমি ফ্রান্সের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। আমাকে সাহায্য করার মতো কেউ ছিল না। আমি কোথায় নেমেছি তা বের করতে আমার দুই থেকে তিন বছর লেগেছে।’
পুরস্কার-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ইব্রাহিমি বলেন, ‘তারা আমাকে সব জায়গা থেকে মুছে দিতে চেয়েছিল। সিনেমা থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল। হয়তো আত্মহত্যা করতে, মরতে। তবে শেষ পর্যন্ত আমি এই পুরস্কার নিয়ে এসেছি।’