ঈদ উপলক্ষে সিনেমা মুক্তি পেয়েছে চারটি। শান, গলুই, বিদ্রোহী ও বড্ড ভালোবাসি সিনেমাগুলোর মধ্যে শান নিয়ে দর্শকের আগ্রহ বেশি বলে জানাচ্ছেন প্রেক্ষাগৃহসংশ্লিষ্টরা। গলুই আছে তার পরেই।
১০২ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েও বিদ্রোহী সিনেমা নিয়ে পাওয়া যাচ্ছে না আলোচনা। এই দৌড়ে বড্ড ভালোবাসি সিনেমাকে পাওয়াই যাচ্ছে দর্শকদের আগ্রহে।
শান সিনেমার প্রযোজক ওয়াহিদুর রহমান সিনেমাটির ব্যবসায় অনেক খুশি। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যা আশা করেছিলাম, তার চেয়েও বেশি সাড়া পাচ্ছি।’
প্রথম সপ্তাহে ৩৪টি সিনেমা হলে মুক্তি পায় শান। প্রযোজক সিনেমার বাজেট বা টেবিল কালেকশন কিছুই জানাতে চাননি। বলেছেন, ‘আমরা আশা করছি অর্থের পরিমাণও আমরা জানাতে পারব। সিনেমার ব্যবসা ভালো হচ্ছে, এটা যদি মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তাহলে অবশ্যই সেটা আমরা জানাব।’
দেশের প্রেক্ষাগৃহ ছাড়াও মালয়েশিয়াতে মুক্তি পেয়েছে শান। দুই-তিন সপ্তাহ পর সিনেমাটি ইউরোপের মার্কেটেও যাবে বলে জানান প্রযোজক। তখন ব্যবসার পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করেন ওয়াহিদুর রহমান।
রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সে প্রদর্শিত হচ্ছে শান ও গলুই। দুটো সিনেমাই ভালো যাচ্ছে বলে নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘প্রথম কয়েক দিন তো খুবই ভালো গেছে। আমরা কিছু হাউসফুল শো পেয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা ধারণা করেছিলাম যে করোনার পর দর্শক আসবেন কি না, সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। দর্শক প্রেক্ষাগৃহে এসেছেন।’
দুটি বাংলা সিনেমার মধ্যে কোনটি ভালো চলছে, জানতে চাইলে মেসবাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি তুলনা করে বলছি না। দুটো সিনেমাই ভালো যাচ্ছে। তবে শান সিনেমার দর্শক অল্প কিছু বেশি।’
রাজধানীতে সিনেপ্লেক্স ছাড়াও মধুমিতা ও শ্যামলী সিনেমাসে চলছে শান সিনেমা। মধুমিতার মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই বছর তো করোনায় সবকিছু বন্ধই ছিল। সেই হিসেবে বিগত ৫ বছরে আমার এখানে শান সিনেমার মতো বিক্রি হয়নি। তাই দ্বিতীয় সপ্তাহেও শান চালাচ্ছি।’
শ্যামলী সিনেমাসের ম্যানেজার হাসান নিউজবাংলাকে কিছুটা উল্টো চিত্র দেখান। সেখানেও চলছে শান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অন্যান্য ঈদের তুলনায় সেল অনেকটা কম। তবে নরমাল সময়ের চেয়ে অনেক ভালো চলছে। আমরা এখনও কোনো হাউসফুল শো পাইনি।’
নারায়াণগঞ্জের সিনেমাস্কোপে শান অনেক ভালো করেছে বলে নিউজবাংলাকে জানান প্রেক্ষগৃহটির মালিক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান। ৩৫ সিটের এ সিনেমা হলে প্রথম কয়েক দিন টানা হাউসফুল গিয়েছে বলে জানান নুরুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘এযাবৎকালে সবচেয়ে ভালো সময় পার করছি আমরা। অগ্রিম টিকিটও বিক্রি করেছি। তবে এখন সেল অনেকটা কমেছে।’
সিরাজগঞ্জের রুটস সিনে ক্লাবে প্রদর্শিত হচ্ছে শান। ২২ সিটের এ সিনেমা হলের চেয়ারম্যান সামিনা ইসলাম নীলা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম কয়েক দিন তো খুবই ভালো গেছে। আমরা হাউসফুল শো পেয়েছি। তবে কয়েক দিন যেতেই সেল কমেছে। ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ার কারণেই এমন হয়েছে বলে আমার ধারণা।’
চট্টগ্রামের দুটি সিনেমা হলের সঙ্গে কথা হয়েছে নিউজবাংলার। যার একটি সিলভার স্ক্রিন, অন্যটি সুগন্ধা সিনেমা হল।
সিলভার স্ক্রিনে ঈদের দিন থেকেই চলছে শান ও গলুই। সেখানে দর্শকের পরিমাণ খুব একটা না বলে জানান প্রেক্ষাগৃহটির ম্যানেজার (অপারেশন) সালাউদ্দিন মোহাম্মদ পারভেজ।
তিনি বলেন, ‘আমরা দুটি সিনেমার কোনোটাতেই হাউসফুল পাইনি। দর্শকও তুলনামূলক কম। এর মধ্যে শান সিনেমার দর্শক কিছুটা বেশি।’
সুগন্ধা সিনেমা হলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর শাহাদাৎ হোসেনের কণ্ঠেও একই সুর। তিনিও কোনো হাউসফুল শো পাননি। দর্শকও তুলনামূলক কম। তাই প্রথম সপ্তাহ শেষ হতেই গলুই সিনেমা চলবে প্রেক্ষাগৃহটিতে।
তিনি বলেন, ‘যে দর্শক এসেছেন তাতে আমি খুশি। এখন দরকার নতুন নতুন ভালো সিনেমা। ঈদের সিনেমার ডামাডোল কেটে গেলেই নতুন সিনেমা দরকার হবে।’
শাপলা মিডিয়া প্রযোজিত বিদ্রোহী সিনেমা নিয়ে তেমন উচ্ছ্বাস পাওয়া গেল না প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্ট অপূর্ব রায়ের কণ্ঠে।
সিনেমা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার ঈদে দর্শক তেমন নেই। তারপরও আমরা যে দর্শক পেয়েছি সেটা অনেক।’
সিনেমাটি কোনো সিনেপ্লেক্সে প্রদর্শিত হচ্ছে না। এর কারণ জানিয়ে অপূর্ব বলেন, ‘অ্যাকশন সিনেমা সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ প্রদর্শন করতে চায় না।’
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেশ অনেক দর্শক এসেছে, এটা আমাদের বড় পাওয়া। ভালো সিনেমা হলে দর্শক দেখতে আসবে, এটা তার প্রমাণ।’
উজ্জ্বল জানান, ঈদ উপলক্ষে ১০০টির মতো প্রেক্ষাগৃহ খুলেছে। এখন চ্যালেঞ্জটা হলো, হলগুলোকে চালু রাখা। ঈদের সিনেমার পর নতুন নতুন ভালো সিনেমার প্রয়োজন হবে বলে জানান উজ্জ্বল। তা হলে কোরবানির ঈদের আরও বেশি প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা মুক্তি দেয়া সম্ভব হবে।