দেশীয় সংগীতের সুপারস্টার, ব্যান্ড সংগীতের লিজেন্ড, ভক্তদের কাছে ‘গুরু’। যার জনপ্রিয়তা রয়েছে দেশের বাইরেও। তিনি আর কেউ নন, মাহফুজ আনাম জেমস।
তার নতুন একটি গান ‘আই লাভ ইউ’ চাঁদরাতে আসার কথা শুনে নড়েচড়ে বসেছে সংগীতাঙ্গন। ভক্তরা তো বটেই, সংগীতসংশ্লিষ্টদের মধ্যেও এ নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল আগ্রহ। এরই মধ্যে প্রকাশও পেয়েছে গানটির ট্রেলার।
শুক্রবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে জেমস জানান, ভক্তদের জন্যই তার নতুন গান করা। তিনি বলেন, ‘এক যুগ হয়ে গেছে আরকি। এটা এমনও হতে পারত যে ১৩ বছর বা ১১ বছর পরে হচ্ছে। আমার আশপাশের যারা বন্ধু-বান্ধব, পরিচিত যারা, তারা বলছিল নতুন গান করা দরকার, কিন্তু তাদের আমি ওভাবে গুরুত্ব দিইনি।
‘তবে বেশ কিছুদিন ধরে মাঠে-ময়দানে যারা আমার দর্শক-শ্রোতা, তারা ঠিক অনুরোধও না দাবি করে বসেছে যে নতুন গান লাগবে। ওদের কারণেই মনে করলাম যে এখন মনে হয় করা উচিত নতুন গান।’
ভক্তের জন্য জেমস বরাবরই উদার। ভক্তরাই তার সব- এমন কথা আগে অনেকবারই বলেছেন জেমস। অথচ সেই ভক্তের জন্য ‘নগর বাউল’ থেকে এতদিন নতুন কোনো গান করেননি তিনি।
১২টি বছর চলে গেল। মঞ্চে নিয়মিত থাকলেও নতুন কিছু করার ক্ষুধা কি ছিল না জেমসের? নাকি জেমসের শিল্পীসত্তার ক্ষয় হয়েছে এবং হচ্ছে প্রতিনিয়ত?
এসব জানতে শনিবার দুপুরে নিউজবাংলার পক্ষ থেকে লিখিত প্রশ্ন পাঠানো হয়েছিল জেমসের সহকারী রুবাইয়াত রবিন ঠাকুরকে। জেমসের পক্ষে তিনি উত্তর দিয়েছেন নিউজবাংলার ছয়টি প্রশ্নের।
প্রথম প্রশ্ন: ১২ বছর নগর বাউল থেকে কোনো কাজ করলেন না। এ সময়ের মধ্যে নতুন কোনো কাজ করতে চাননি? নাকি নতুন কাজ করার কোনো ক্ষুধা ছিল না। যদি কোনো শিল্পীর কাজ করার ক্ষুধা মরে যায়, তাহলে নাকি শিল্পীরও মৃত্যু হয়। ধারণাটি যদি ভুল হয়, সঠিকটা জানতে চাই।
জেমস: শিল্পীসত্তা তো শুধু নতুন কাজের ওপর নির্ভর করে না। মঞ্চটা হচ্ছে আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। মঞ্চে আমি সব সময় সরব ছিলাম, থাকার চেষ্টা করি। আর গানের ব্যাপারটা হচ্ছে, তোমরা তো জানো যে গানের কিছু ট্রান্সফর্ম হয়েছে। অর্থাৎ প্রথমে এটা ছিল এলপি, সেখান থেকে ক্যাসেট, সেখান থেকে সিডি। এরপর কিন্তু দীর্ঘ সময় স্থবির ছিল।
অডিও প্রডাকশন, যারা এগুলো প্রডিউস করত, তারা কোন ফরমেটে যাবে এটা নিয়ে ব্যস্ত ছিল সবাই। ট্রানজিশন পিরিয়ড বলে এটাকে। সেই সময় নতুন কোনো কাজ করা হয়নি।
তুমি যেটা জিজ্ঞেস করলে যে শিল্পীসত্তার মৃত্যু, এটা একদম ইরিলিভেন্ট একটা ব্যাপার। শিল্পীসত্তার সঙ্গে নতুন প্রডাকশনের কোনো সম্পর্ক নেই।
পৃথিবীতে তুমি এমন কোনো শিল্পীর নাম বলতে পারো যে ৪০ বছর ধরে প্রতি বছর নতুন গান দিয়ে আসছে।
এমনও দেখা গেছে যে বছরে ৫০টি গান করেছি। আবার দেখা গেছে দুই বছর গ্যাপ। এটা তো সৃষ্টির ব্যাপার। যখন ফিল কাজ করবে, গান তৈরি হবে, যারা এটা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করবে তাদের সঙ্গেও ব্যাটে-বলে মেলার ব্যাপার আছে।
দ্বিতীয় প্রশ্ন: ১২ বছরের গ্যাপ বা ভক্তদের অপেক্ষা কী চাঁদরাতের একটি গান এবং পরবর্তী সময়ে প্রকাশিতব্য কয়েকটি গানে মিটবে?
জেমস: আমি এ পর্যন্ত যা করেছি গান এটাই এনাফ (যথেষ্ট)। যদি আমি কোনো নতুন গান নাও করি, তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। আমি তো মঞ্চে সব সময় আছি। আমার গান শুনতে পাচ্ছে, আমাকে কাছাকাছি দেখতে পাচ্ছে। ওটা নতুন গানের সঙ্গে কোনো রিলেশন নেই। তার পরও ভক্তদের জন্যই আমার নতুন গানটি আমি করেছি। যেটা চাঁদরাতে প্রকাশ পাবে। আর মঞ্চে আমি সব সময় আমি গেয়ে যাব, যতক্ষণ আছি। মঞ্চেই আসল জায়গা।
তৃতীয় প্রশ্ন: সব ধরনের সুযোগ ও সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নতুন গান করা থেকে বিরত থাকলেন কেন। আগের ইমেজ, জনপ্রিয়তা ধরে রাখতেই কি আপনার বিরতি?
জেমস: অতীতের কী ইমেজ, জনপ্রিয়তা কোনটা কী ধরে রাখতে হবে, এগুলো নিয়ে আমি মোটেও চিন্তিত না। যখন যেটা আমার টেম্পারমেন্টের সঙ্গে স্যুট করে আমি সে কাজটাই করি। গানও যখন আমি করি, নিজের ইচ্ছামতোই করি।
এরপর গানটা বাজারে যায়, শ্রোতাদের ভালো লাগলে গ্রহণ করে, ভালো না লাগলে গ্রহণ করে না। এভাবেই চলে আসছে।
চতুর্থ প্রশ্ন: ১২ বছর ধরে নতুন কোনো কাজ না করেও আপনি স্টার অফ দ্য স্টারস, লিজেন্ড। এটা কি কোনোভাবে আপনাকে বিব্রত করে? মানে কাজ না করেও এ খ্যাতি কি আপনি নিতে চান?
জেমস: কাজ না করে কখনও খ্যাতি কি পাওয়া যায়, এটা কখনই হয় না। ক্যারিয়ারে তো আমি প্রচুর কাজ দিয়েছি। সেগুলো তো শ্রোতাপ্রিয়তাও পেয়েছে।
কাজ না করে কি খ্যাতি পাওয়া যায়, আমার প্রশ্ন হলো এখানে।
পঞ্চম প্রশ্ন: বিশ্বের অনেক রকস্টারকেই দেখা গেছে তুমুল জনপ্রিয় থাকার সময় তারা হতাশ বা ডিপ্রেশনের মতো রোগে ভুগেছেন। আপনি কি কোনো কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গেছেন কখনও?
জেমস: না।
ষষ্ঠ প্রশ্ন: আপনাকে নিয়ে কেউ যদি বয়োগ্রাফি বা সিনেমা করতে চান, সে ক্ষেত্রে আপনি অনুমতি দেবেন কি না?
জেমস: অনেকেই চেয়েছেন বা অনেকেই চান। আমরা দেখছি যে কার সঙ্গে করা যায়। এটা ভাবছি। ভবিষ্যতে বলতে পারব, এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে অনেক প্রোপোজাল আছে।
শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে গান ছাড়াও ব্যক্তিগত নানা বিষয়ে কথা বলেছেন জেমস। জানান, বলিউডে গানের ক্যারিয়ার গড়েননি দেশ ছাড়তে হবে বলে। দেশে থাকার জন্য বলিউডে গানের ক্যারিয়ার ছেড়ে দিয়েছেন।
জেমসের ফটোগ্রাফির সুনাম রয়েছে। শখেই করেন কাজটি। পোর্ট্রেট ও ল্যান্ডস্কেপ ছবি তুলতে পছন্দ করেন তিনি। বলেন, ‘নির্মলেন্দু গুণের ছবি তোলার ইচ্ছা আছে। তার ছবি এখনও তোলা হয়নি।’