বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আমার মনে হয় না গানটি ভাবমূর্তি হারিয়েছে: খিলখিল কাজী

  •    
  • ২২ এপ্রিল, ২০২২ ২০:১৬

খিলখিল কাজী বলেন, ‘এখানে সুরটা ঠিক আছে এবং যে ছেলেটি বা আর্টিস্ট গানটি গেয়েছেন, তার অনেক দক্ষতা আছে ক্ল্যাসিকালে, তাই তিনি এ গানটি বেছে নিয়েছেন। সমালোচনা হতে পারে কিন্তু সমালোচনার উর্ধ্বে গিয়ে আমাদের ভালো কাজকে সাধুবাদ জানাতে হবে।’

কোক স্টুডিও বাংলার নতুন গান ‘বাগিচায় বুলবুলি’ প্রকাশ পেয়েছে ১৪ এপ্রিল রাতে। ১৬ এপ্রিল গানটি নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা। নজরুলের পুত্রবধু কল্যাণী কাজীর লেখার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, নজরুল তার পুত্র হারানোর শোকে এ গানটি লিখেছেন, ফলে রোমান্টিক পার্টিমুডে কোক স্টুডিও বাংলার সংগীতায়োজন গানের মূলভাব নষ্ট করেছে।

বুলবুলি গানটির সুর কম্পোজিশন ও সংগীতায়োজন করেছেন শুভেন্দু দাশ শুভ। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ঋতু রাজ ও সানজিদা মাহমুদ নন্দিতা। এতে ব্যবহার করা হয়েছে ফ্ল্যামিঙ্কো ও রুম্বা রিদম, ড্রামে ব্যবহার করা হয়েছে জ্যাজ রিদম।

তবে জাতীয় কবির নাতনি খিলখিল কাজী মনে করছেন, কোক স্টুডিও বাংলায় গানটির ভাবমূর্তি নষ্ট হয়নি।

ফেসবুক মেসেঞ্জারে নিউজবাংলার পাঠানো প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বাগিচায় বুলবুলি’ গানটি নিয়ে কাজ করার আগে কোক স্টুডিও বাংলা কর্তৃপক্ষ অনুমতি নেয়াসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন কবির নাতনি খিলখিল কাজীর সঙ্গে।

খিলখিল কাজী নিউজবাংলাকে বলেন, “কাজী নজরুল ইসালামের ‘বাগিচায় বুলবুলি’ গানটির প্রকাশ কাল ১৯২৮। আর তার দ্বিতীয় পুত্র বুলবুল মারা যান ১৯৩০ সালে। তাই বুলবুল মারা যাবার উপলক্ষ্যে গানটি রচনা করা হয়নি। এটা অনেক আগেই বলা হয়েছে।

“আমার মনে হয় না যে ‘বাগিচায় বুলবুলি’ তার ভাবমূর্তি হারিয়েছে। আমার সঙ্গে ওদের (কোক স্টুডিও বাংলা কর্তৃপক্ষের) কথা হয়েছিল। কাজী নজরুল ইসলামের গান সবাই গাইতে পারবে, কিন্তু সেই গানের সুর ও কথা ঠিক রাখতে হবে। সেটাকে ঠিক রেখে নিজের মতো করে গওয়া যাবে। আমার মনে হয় সেটি বজায় আছে।”

কল্যাণী কাজীর লেখা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খিলখিল কাজী জানান, তিনি কল্যাণী কাজীর লেখাটি পড়েননি, তাই সেটা নিয়ে কিছু বলতে পারছেন না।

খিলখিল কাজীর ভাষ্যে, ‘একটু মডিফিকেশন করা হয়েছে বলেই মনে হয় সমালোচনা হচ্ছে। আমি অনেক আগে থেকেই লক্ষ্য করছি, নতুন কিছু হলেই সেটা নিয়ে সমালোচনা হবেই। এটা আমাদের মানতে হবে যে, ভালো কথা হবে, মন্দ কথা হবে, এর মধ্যেই আমাদের চলতে হবে। আমাদের বেছে নিতে হবে কোনটা ভালো।

‘নতুন প্রজন্ম আমাকে অনেক আগে থেকেই বলেছে যে, কাজী নজরুল ইসলামের গান কেন মডিফাই করা হচ্ছে না। এর আগেও কিন্তু বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পীরা মডিফিকেশন করে জ্যাজ স্টাইলে গানটি করেছেন, তখন কিন্তু এত সমালোচনা হয়নি। আমি সমালোচনায় যাচ্ছি না, আমি যা কিছু ভালো তার পক্ষে কথা বলি এবং তার পক্ষে আছি।’

‘বুলবুলি’ শিরোনামের গানটিতে নজরুলের গানের পাশাপাশি ব্যবহার করা হয়েছে নতুন কিছু কথা। যেটি লিখেছেন গাউসুল আলম শাওন। নজরুলের গানটিই শুধু রাখা যেত, কেন নতুন কিছু লাইন ও সুর যুক্ত করতে হলো, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন গাউসুল আলম শাওন।

কোক স্টুডিও বাংলার ক্রিয়েটিভ প্রোডিউসার গাউসুল আলম শাওন বলেন, ‘গান তৈরি করার সময় অর্ণব একদিন হঠাৎ করে বলল যে, এটা তো বুলবুলির প্রতি অভিযোগ। বুলবুলিরও তো একটা কথা থাকতে পারে। আমরা কি কয়েকটা লাইন উত্তর লিখতে পারি। তাহলে বিষয়টা আরও ভালো হতো।’

এ প্রসঙ্গে খিলখিল কাজী বলেন, ‘ডুয়েট যেটা করা হয়েছে, ওটা নাকি ওদের নিয়ম, সেটাই আমাকে বলা হয়েছে।’

একটি উদাহরণ দিয়ে খিলখিল কাজী বলেন, ‘যদি তোর ঢাক শুনে কেউ না আসে- গানটি আমরা অনেকেই শুনেছি, কিন্তু যখন একটি সিনেমায় অমিতাভ বচ্চন জি গানটি গাইলেন নিজের মতো করে নিজের ভয়েসে, তখন আরও অনেক মানুষ গানটি সম্পর্কে জানলেন।’

কাজী নজরুল ইসলামের গান অনেক বৈচিত্রময়, তার গানে বিদেশি সুর আছে, নানা দিক আছে। যা নিয়ে আরও অনেক কাজ করার আছে, যা নিয়ে অনেক এক্সপেরিমেন্ট করার আছে বলে মনে করেন খিলখিল কাজী।

তিনি বলেন, ‘শুধু তো গজল গান নয়, তার দেশাত্ববোধক গান ও জাগরণী গানও আছে। সেগুলোও কিন্তু ছড়িয়ে যেতে পারে এভাবে মডিফিকেশনের মাধ্যমে।’

কাজী নজরুল ইসলাম নিজেও বিভিন্ন রকম বাদ্যযন্ত্রের কাজ পছন্দ করতেন বলে জানান খিলখিল।

তিনি বলেন, ‘তার অনেক গানেই দেখবেন অনেক অনেক রকমের ইনস্ট্রুমেন্টের কাজ রয়েছে। তিনি নিজেও এটা পছন্দ করতেন। মাত্র ১১ বছরে তিনি সাড়ে চার হাজার গান রচনা করে গেছেন এবং নানান দিক নিয়ে। এগুলো ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে তো আমাদের একটু কাজ করতেই হবে। যদি নতুন প্রজন্মের কাছে কাজী নজরুল ইসলামের গান পৌঁছে না দিতে পারি, তাহলে তো এটা আমাদেরই ব্যর্থতা।’

সব মিলিয়ে ‘বুলবলি’ গানটি ভালো কাজ হয়েছে বলে দাবি করে খিলখিল কাজী বলেন, ‘এখানে সুরটা ঠিক আছে এবং যে ছেলেটি বা আর্টিস্ট গানটি গেয়েছেন, তার অনেক দক্ষতা আছে ক্ল্যাসিকালে, তাই তিনি এ গানটি বেছে নিয়েছেন। সমালোচনা হতে পারে কিন্তু সমালোচনার উর্ধ্বে গিয়ে আমাদের ভালো কাজকে সাধুবাদ জানাতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি চাই কাজী নজরুল ইসলামের গান যেন সবাই গাইতে পারে। সে চেষ্টাতেই আমরা এসব গানকে মডিফিকেশন করার চেষ্টা করছি। মডিফিকেশন বলতে গানের সুরটা না, শুধু ইনস্টুমেন্ট যেগুলো আছে সেগুলো ব্যবহার করে আমরা শুধু গানটাকে একটু বদলাতে চেষ্টা করেছি। গানের সুর, গানের কথা কখনোই বদলানের হবে না, সেটা কোক স্টুডির সঙ্গে আগেই কথা হয়ে গেছে। সেটাই করা হয়েছে। বাকিটা যারা শুনছেন তারা বুছবেন। নতুন প্রজন্ম ভীষণভাবে সাড়া দিয়েছে গানটির পক্ষে এবং তাদের প্রচুর ভালো লেগেছে এবং সেই সঙ্গে, আমার সমবয়সী যারা আছেন, তারাও অভিনন্দন জানিয়েছেন গানটিকে। পাশাপাশি সারা পৃথিবীতে গানটি পৌঁছে যাচ্ছে। দেশের বাইরের মানুষ গানটিকে রিভিউ করে ভালো বলছেন। কাজী নজরুল ইসলামের নামটি পৌঁছে যাচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর