বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিপাশার ‘প্রস্তরকাল’ শুরু

  •    
  • ১৭ এপ্রিল, ২০২২ ২১:৪৩

বিপাশা হায়াত বলেন, ‘এ কাজগুলোর কিছু অংশ নিউ ইয়র্কের অ্যাপার্টমেন্টে করা, যখন কোভিড-১৯ আমেরিকা জুড়ে ভয়াবহ রূপ নিয়ে উপস্থিত। যখন জর্জ ফ্লয়েড প্রাণ হারান কোনো এক মানুষেরই রোষে এবং ব্ল্যাক লাইভস্ ম্যাটার শীর্ষক প্রতিবাদ বিপুল আকার ধারণ করে। এমন প্রেক্ষাপটে সবকিছু ছাপিয়ে পাথর আমার কাছে হয়ে ওঠে সময়, শক্তি, আশা ও প্রতিবাদের ভাষার প্রতিটি অক্ষর।

রাজধানীর গ্যালারি চিত্রকে শুরু হয়েছে চিত্রশিল্পী ও অভিনেত্রী বিপাশা হায়াতের একক চিত্রপ্রদর্শনী ‘প্রস্তরকাল’।

প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে শিল্পীর বিভিন্ন মাধ্যমের তিন শতাধিক শিল্পকর্ম। শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় চিত্রকে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী অধ্যাপক রফিকুন নবী।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্পী রফিকুন নবী বলেন, ‘বিপাশার এই প্রদর্শনীর কার্ড যখন পেলাম, তখন দেখি কার্ডে একটি শিরোনাম লেখা রয়েছে- স্টোন টাইম বা পাথর সময়। তখন আমি খেয়াল করলাম- কী হলো, হঠাৎ বিপাশা এই প্যালিওলিথিক, নিওলিথিক ওই লাইনে চলে গেল, বহু পুরনো লাইনে; এটা কী হলো।

'পরে বুঝলাম আসলে পাথর সময়, যে সময়টা আমরা অতিবাহিত করলাম, করছি বা করবো, সামনে যে ভালো সুদিন দেখছি তাও নয়; রোগবালাই থেকে শুরু করে সব কিছু মিলে আমাদের একটা দুর্যোগের সময় কাটিয়ে দিলাম। তখন আমার ধারণা হলো- ও একটা সিম্বল করেছে যে, পাথর সময়।’

অধ্যাপক রফিকুন নবী আরও বলেন, ‘আমার ধারণা ছিল সে পাথরই এঁকে গেছে। পাথরের ভেতরে যেসব টেকচার থাকে, পাথরের টোনাল ভ্যারিয়েশন, পাথর দেখতে শক্ত অথচ ভেতরে নরম ভাবসাব, এইসব বোধয় ওর ছবিতে থাকবে। এখানে এসে দেখলাম আসলে সে ওইখানেই আবদ্ধ থাকেনি। তার অন্যান্য প্র্যাকটিস ও স্বচ্ছন্দ আর্টের আরো যে দিক আছে সেগুলোও কাজ করেছে।’

বিশ্বব্যাপী সাম্প্রতিক বিচ্ছিন্নতা, মহামারি, সংকট সময় এবং মানুষের অপরিসীম অন্তর্নিহিত শক্তিকে শিল্পী বিপাশা হায়াত চিহ্নিত করেছেন ‘প্রস্তরকাল’ হিসাবে।

নিজের এই প্রদর্শনী নিয়ে লিখিত বক্তব্যে বিপাশা বলেন, ‘পাথর এবং সময় দুটোই আমাকে খুব ছোটবেলা থেকে ভাবাতো। সময় হল চতুর্থ মাত্রা- যাকে দেখা যায় না, স্পর্শ করা যায় না এবং নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। যা অজানা তাই আমার কাছে আকর্ষণীয়। আমার কাজের মাধ্যমে, নিজস্ব ধারায় আমি সময়কে সংরক্ষণ করেছি বিভিন্ন পর্যায়ে। সেটি আমার কাছে নিয়ন্ত্রণও।

'কিন্তু এই পাথর যেমন একটি বিশাল সময়কালকে নিজের গহীনে ধারণ করে তার পুনঃআকার নেয়, তেমনি মানুষের ভেতরেও লুকিয়ে আছে মায়ের গর্ভ থেকে শুরু করে এই মুহূর্ত অব্দি পুরো জীবন। আমি পাথরের ভেতরে সময়কে দেখতে পাই। আবার কখনো কখনো সময় প্রস্তররূপে আবির্ভূত হয়।’

তিনি বলেন, ‘প্রস্তরকাল শীর্ষক আমার এই প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া পাথর অথবা যেকোনো বিষয়ক কাজগুলোতে রয়েছে আমারই প্রতিচ্ছবি অথবা সেলফ প্রোর্ট্রেট।’

তিনি জানান, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত আঁকা শিল্পকর্মগুলো স্থান পেয়েছে এই প্রদর্শনীতে।

বিপাশা বলেন, ‘এ কাজগুলোর কিছু অংশ নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনের অ্যাপার্টমেন্টে করা, যখন কোভিড-১৯ আমেরিকা জুড়ে তার ভয়াবহ রূপ নিয়ে উপস্থিত। যখন জর্জ ফ্লয়েড প্রাণ হারান কোনো এক মানুষেরই রোষে এবং ব্ল্যাক লাইভস্ ম্যাটার শীর্ষক প্রতিবাদ বিপুল আকার ধারণ করে। মানবতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ যখন প্রকাশিত হয় রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিনের মতো। এমন প্রেক্ষাপটে সবকিছু ছাপিয়ে পাথর আমার কাছে হয়ে ওঠে সময়, শক্তি, আশা ও প্রতিবাদের ভাষার প্রতিটি অক্ষর।

‘সে অক্ষর দিয়ে পরবর্তী সময়গুলোতে আমি লিখে চলেছিলাম আমার দিনলিপি। সেখানে মিশে গেছে সক্রেটিস, প্লেটো, হোমারের অডিসি, ইউরিপিডিস, সফোক্লেস, জাঁ পল সাত্র, জন কীটস্, অটোম্যান এমপায়ার, মেডিচি ইত্যাদি নানান অনুষঙ্গ। মিশে গেছে আমার চারপাশে অস্তিত্ব জানান দেয়া প্রতিটি মানুষ, বস্তু, প্রকৃতি এবং কখনো নিরবতা। সবকিছুর সাথেই শিল্পভাষার চলেছে আমার কথোপকথন যখন আমি পরিবার থেকে বহুদূর- তবু একা নই।’

বিপাশার এই প্রদর্শনীটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন এবং সভাপতিত্ব করে শিল্পী শহিদ কবীর।

প্রদর্শনীটি চলবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১১ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

এ বিভাগের আরো খবর