নোয়াখালীর আঞ্চলিক গানের জনক অধ্যাপক মোহাম্মদ হাশেমের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী নানা আয়োজনে পালন করা হয়েছে।
মোহাম্মদ হাশেম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বুধবার দুপুরে জেলা শহর মাইজদীর দত্তের হাটে শিল্পীর বাসভবন হাসু ভিলায় দোয়া মাহফিল ও বিকেল ৫টায় শিল্পকলা একাডেমিতে শিল্পীর জীবন ও কর্ম নিয়ে ‘কথা ও গান’ শিরোনামে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মোহাম্মদ হাশেম ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মুস্তফা মনওয়ার সুজনের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী মানছুরুল হক খসরু।
নোয়াখালীর আঞ্চলিক গানের কবি ও অধ্যাপক মোহাম্মদ হাশেমের জীবনী নিয়ে বক্তব্য দেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমদাদ হোসেন কৌশর, অধ্যাপক মামুনুর রশিদ ও শিরিন আকতার এবং সংগীত প্রশিক্ষক ওস্তাদ কামাল উদ্দিন।
সংগীত পরিবেশন করেন শাহনাজ হোসেন কাজল, রায়হান কায়সার শাওন ও হাশেম সংগীত অ্যাকাডেমির শিক্ষক শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় শিল্পীরা।
অনুষ্ঠানে ‘মোহাম্মদ হাশেমের গানের প্রতিযোগিতা ২০২২’-এর ‘গ’ গ্রুপের বিজয়ীদের পুরস্কার ও সনদ প্রদান করা হয়।
অধ্যাপক মোহাম্মদ হাশেম চার দশক নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান নিয়ে গবেষণা করেছেন। লিখেছেন দেড় হাজারের বেশি গান। নিজেই গেয়েছেন বেতার-টেলিভিশনে।
নোয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষাকে সংগীতে রূপান্তর করে পেয়েছেন ব্যাপক পরিচিতি। শুধু নোয়াখালীর আঞ্চলিক গানই নয়, তিনি লিখেছেন পাঁচ শতাধিক পল্লিগীতিও।
শিল্পী অধ্যাপক মোহাম্মদ হাশেম ১৯৪৭ সালের ১০ জানুয়ারি নোয়াখালী সদর থানার চরমটুয়া ইউনিয়নের শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নিজ গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিয়াজ মোহাম্মদ হাইস্কুলে মাধ্যমিক পাস করে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সনদ পান। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই তিনি গানের জগতে পরিচিত হতে থাকেন। সংগীতেও তার উচ্চতর ডিগ্রি রয়েছে। লোকসংগীত-সম্রাট শিল্পী আবদুল আলীম তার সংগীত গুরু। ঢাকা মিউজিক কলেজে সংগীতে ডিগ্রি নেয়ার পর তিনি সেখানেই বাংলা বিভাগ ও সংগীতের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
নোয়াখালীর প্রধান সংগীতখ্যাত ‘আঙ্গো বাড়ি নোয়াখালী রয়্যাল ডিস্ট্রিক ভাই/হেনী মাইজদী চৌমুহনীর নাম কে হুনে নাই’-গানটি তাকে এনে দিয়েছিল খ্যাতি। এ গান আজও মানুষের মুখে মুখে।
তার জনপ্রিয় অন্যান্য গানের মধ্যে রয়েছে ‘আল্লায় দিসে বাইল্লার বাসা নোয়াখাইল্লা মাডি’; ‘নোয়াখালীর দক্ষিণে দি উইটসে নোয়া চর’; ‘রিকশাঅলা কুসকাই চালা ইস্টিশন যাইয়াম’; ‘আহারে ও কুলসুম কতুন আইলো ডুবাইআলা কইল্লো এ জুলুম’।
২০২০ সালের ২৩ মার্চ বার্ধক্যজনিত রোগে ঢাকার একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।