উন্নয়নকর্মী ও অভিনেত্রী রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা। তার পেশাগত কাজগুলো সম্পর্কে সাধারণ মানুষ না জানলেও তার সিনেমার খোঁজ রাখেন অনেকেই।
শনিবার বইমেলায় প্রকাশ পেয়েছে কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে বিদেশ ভ্রমণের স্মৃতি নিয়ে লেখা নতুন বই।
সম্প্রতি কাজল রেখা নামের একটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি। একের পর এক কাজ করছেন কলকাতার সিনেমা ও সিরিজে। এসব নিয়েই মিথিলার কথা হয়েছে নিউজবাংলার সঙ্গে।
আ রিভার ইন হেভেন নামের সিনেমায় যুক্ত হওয়ার পর কলকাতার সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, সিনেমাটি পুরুষের বন্ধ্যত্ব নিয়ে। বিষয়টি অনেক পুরোনো হলেও আপনি অনেক বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। আপনার বিস্ময় দেখে মনে হয়েছিল অনেক ইউনিক একটি গল্প পেয়েছেন।
এটা কিন্তু সত্যি, আমাদের সমাজে বন্ধ্যত্ব যে ছেলেদেরও থাকতে পারে, সেই জিনিসটা মানসিকভাবে মেনেই নেয় না কেউ। এটা পরিবার মেনে নেয় না, ছেলেরাও মেনে নিতে পারে না। এটায় পুরুষরা মনে করে যে এটা তাদের পৌরুষত্বে আঘাত করছে।
এ ছাড়া গল্পে আরও অনেক বিষয় আছে, যা মূলত আমাকে মুগ্ধ করেছে।
বর্তমান সমাজে সন্তান না নেয়ার ইচ্ছাটাও বাড়ছে। নিজেদের কাজ, ইচ্ছা মেটানো, অর্থিক সচ্ছলতা মিলিয়ে সন্তান নেয়ার চাহিদা কমছে। এতে সেই কাপলের ওপর পারিবারিক চাপ বাড়ছে, দ্বন্দ্ব-অশান্তিও তৈরি হচ্ছে। এমন বিষয়ে সিনেমা হলে আপনার এ বিস্ময় প্রাসঙ্গিক মনে হতো।
গল্পটা তো আমি লিখিনি, এটা রিঙ্গোদার লেখা। আপনি যে বিষয়টা বললেন, সেটা নেই, তবে এর ভেতর অনেক সোশিও পলিটিক্যাল ইস্যুজ আছে। গল্পে আরও অনেক লেয়ার আছে।
সেই কাপলের সন্তান হচ্ছে না এ জন্য যে তাদের মধ্যে ভালোবাসা নেই তা না। এর ভেতরে আরও অনেক সূক্ষ্ম বিষয় আছে, যেগুলো এখন বলতে পারছি না। সিনেমাটা দেখলে সবাই বুঝবেন।
উন্নয়নকর্মী ও অভিনেত্রী রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা। ছবি: সংগৃহীত
বিভিন্ন জায়গায় বলেছেন যে আপনি নতুন কিছু করতে চান। নতুন কিছু মানে কেমন? একটি সিনেমায় আপনাকে দেখা যাচ্ছে কালো পোশাক, গলায় মালা, মাথায় কোঁকড়া চুল, হাত উঁচিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছেন। এই কি আপনার কাছে নতুন কিছু?
এটা গেটআপের বিষয়। চরিত্রটা তো অভিনয়ের মাধ্যমে পুরোটা দেখা যাবে। এটা বাহ্যিক, তার পরও যদি গেটআপের কথাই বলি, এ রকম আমি তো করিনি আগে। এ রকম চরিত্র হয়তো হয়েছে অনেক, কিন্তু মিথিলাকে এই চরিত্রে কেউ কখনও দেখেনি আগে, কল্পনাও করেনি।
আমি তো জানি আমাকে কী চরিত্র অফার করা হয় সব সময়। এ কারণে আমার জন্য এটা অনেক নতুন ধরনের চরিত্র। একেবারে তো আউট অফ ব্লু তো হতে পারে না, কারণ চরিত্র তো সমাজের ভেতর থেকেই উঠে আসে।
যে চরিত্রটা নিয়ে এত কথা, সে চরিত্রটার নাম মায়া। আর গল্পটা আমার কাছে কী, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
মায়া চরিত্রে অভিনেত্রী রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা। ছবি: সংগৃহীত
কলকাতায় জয়া আহসান নিয়মিত কাজ করছেন, মাঝখানে বাঁধন একটি কাজ করে আলোচনায় চলে আসেন। এখন আপনি করছেন। এই যে অভিনয়শিল্পী কলকাতায় গিয়ে কাজ করা, এটিকে কি আপনার বিশেষ কিছু মনে হয়? নাকি এমন মনে হয় যে, শিল্পী তো সবখানেই কাজ করতে পারে।
আমার কাছে সে রকমই মনে হয়। শিল্পী তো শিল্পীই। শিল্পীর জন্য কাজের জায়গা বিস্তৃত হওয়া উচিত। বাংলাদেশ, কলকাতা, বলিউড, লন্ডন সবখানেই শিল্পী কাজ করতে পারবে।
হ্যাঁ, একটা বিষয় হয় যে, বড় ইন্ডাস্ট্রি, বেশি মানুষ জানবে, চিনবে সেটা হতে পারে। যেমন, শুধু বাংলাদেশে কাজ করছিলাম, এখন দুই বাংলাতেই করছি, বড় ইন্ডাস্ট্রি। এ ছাড়া অভিনেত্রী হিসেবে আমার অন্য কোনো ভ্যালিু অ্যাড হয় বলে আমি মনে করি না।
আমি এটাকে প্রমোশন হিসেবে দেখি না। ধরেন আমি ম্যানেজার থেকে সিনিয়র ম্যানেজার হলাম, কলকাতায় কাজ করাটা ওই রকম কোনো প্রমোশন না। তবে এটা ঠিক যে, আরও বেশি মানুষ যদি আমার কাজ দেখতে পায়, সেটা ভালো লাগার একটি বিষয়।
উন্নয়নকর্মী ও অভিনেত্রী রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা। ছবি: সংগৃহীত
মনে হলো হঠাৎ করেই আপনি একগাদা সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হলেন! মানে আপনি কি এ সময়টা অনেক অবসরে আছেন? না কী আসলে বিষয়টা?
আমি যদি চাইতাম তাহলে কিন্তু অনেক আগেই সিনেমাটা করে ফেলতে পারতাম। কিন্তু তখন আমার বাচ্চা ছোট, একটা ফুলটাইম জব করছি, সবকিছুর মধ্যে না, সময় কিছু বের করতে পারলেও সেই সময়টা পরিবার ও বাচ্চাকে দেয়া খুব জরুরি ছিল।
এখনও আমি সিনেমার অফার পেলে অনেক চিন্তাভাবনা করি, কতটুকু সময় দিতে পারব।
একটা কাজ করার পরই আমি অনেক ভালো ভালো সিনেমার প্রস্তাব পেতে শুরু করেছি। তাই ভাবলাম আচ্ছা ঠিক আছে, অভিনয় তো… (অসম্পূর্ণ)
আমি আসলে জানি না, অভিনয় নিয়ে যে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা আছে বা আমি নিজেকে যে খুব ভালো আহামরি অভিনেত্রী মনে করি সেটাও না। অভিনেত্রী হিসেবে আমি খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষী না।
সিনেমা আসছে, এর মধ্যে যেটি ভালো লাগবে আপনি সেটি করবেন। যদি প্রস্তাব না আসে, নাম আসবে। বিষয়টি কি এমন?
হ্যাঁ, অনেকটা তাই। কারণ আমি ফুলটাইম জব করি। ওটা করার পর যদি সময় পাই তাহলে কাজ করতে পারব। সময় বের করতে না পারলে করব না।
উন্নয়নকর্মী ও অভিনেত্রী রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা। ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি মন্টু পাইলট সিরিজে কাজ করলেন। কাজটি নিয়ে জানতে চাই।
মন্টু পাইলট সিজন ওয়ানটা আমি দেখেছি। শুটিংয়ের কিছুদিন আগে দেখেছি, মানে হ্যাঁ বলার পরও অদেখা ছিল কাজটি।
দুই বাংলা থেকেই আমাকে অনেকে বলেছে, হ্যাঁ, তুমি মন্টু পাইলট করবে! মন্টু পাইলট এই সেই। আমি যখন দেখলাম মন্টু পাইলটটা, মানুষ যা বলেছে আমি তার কিছুই পাইনি সেখানে।
মন্টু পাইলট সিরিজের দ্বিতীয় সিজন শুটিংয়ের আগে। ছবি: সংগৃহীত
প্রচণ্ড ডার্ক একটা স্টোরি, প্রচণ্ড বিষাদের একটা স্টোরি, স্যাড একটা স্টোরি। আমি মনে হয় কেঁদেওছি একটা সময়। এ ধরনের গল্প হওয়া উচিত। যে গল্পগুলো বলাই হয় না, কখনও-কোথাও বলা হয় না।
সিজন টুও অনেক ডার্ক এবং স্যাড। অনেক সারপ্রাইজ আছে।