বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘শিমু’ একটা স্পিরিট, কখনোই নিরাশ হয় না: রুবাইয়াত

  •    
  • ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২২:৪২

‘আমি খুব খুশি হব যদি নারী শ্রমিকরা সিনেমাটা দেখতে আসেন। এ ছাড়াও ইয়াং অডিয়েন্সকে টার্গেট করে আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্রমোশন চলছে।’

বিদেশ ঘুরে শিমু আসছে বাংলাদেশে। ১১ মার্চ সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে দেশের প্রেক্ষাগৃহে। সিনেমাটির পরিচালক রুবাইয়াত হোসেন, বিদেশে ছিলেন দীর্ঘদিন। সম্প্রতি দেশে এসেছেন তিনি এবং কাজ করছেন সিনেমার মুক্তি নিয়ে।

সম্প্রতি তিনি শিমু এবং তার নতুন সিনেমা নিয়ে কথা বলেছেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। আলাপে সিনেমা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলছেন তিনি।

মার্চে শিমু সিনেমা মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অনেক সময় লেগে গেল।

সিনেমাটির প্রিমিয়ার হয়েছিল ২০১৯ সালে, টরেন্টো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। তারপরে অনেক দিন হয়ে গেল। এ বছরের জানুয়ারিতে মুক্তি দিতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু কোভিডের কারণে আবার পেছাল। এখন আর পেছাতে চাচ্ছি না।

৮ মার্চ নারী দিবস, ওই দিন সিনেমাটি এ দেশে প্রিমিয়ার করব আমরা। আর ১১ মার্চ শুক্রবার মুক্তি পাবে সিনেমাটি।

সিনেমাটির নাম আগে মেড ইন বাংলাদেশ ছিল, এখন সিনেমাটির নাম শিমু। কেন?

বাংলাদেশে আমরা যখন কাজ শুরু করি তখন শিমু নামে পারমিশন ও কাগজপত্র করা হয়েছিল। পরে যখন সিনেমাটি ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিবিউশনে যায়, তখন নামটা চেঞ্জ হয়ে যায়। তারপর যখন আবার বাংলাদেশের রিলিজ করতে আসলাম, তখন মনে করলাম শিমু নামটা দেশের দর্শকদের জন্য বেশি কানেকটিভ হবে। তাই আগের নামটাই রাখা হলো। তাছাড়া নামটা চেঞ্জ করতে চাইলে আমাদের এখানে অনেক পেপার ওয়ার্ক করতে হতো। এসব কারণেই শিমু নাম রাখা হয়েছে।

‘শিমু’ সিনেমার পরিচালক রুবাইয়াত হোসেন। ছবি: নিউজবাংলা

সিনেমাটি ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও দেখানোর কথা ছিল, কিন্তু পরে তা আর হলো না।

এটা দুর্ভাগ্যজনক। সেন্সর বোর্ড থেকে আমাদের কিছু কারেকশন দেয়া হয়েছিল। আমাদের ল্যাব যেহেতু ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে, কারেকশনগুলো করে ওইখান থেকে ডিসিপি করে পাঠানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। আমরা ফেস্টিভ্যালের ডেডলাইন অনুযায়ী ওটা করতে পারিনি।

সেন্সর বোর্ড যে কারেকশন দিয়েছে, সেগুলো নিয়ে আপনাদের কোনো আসুবিধা আছে কি?

আমরা তো আসলে সেন্সর বোর্ডকে মেনেই কাজ করি। আমাদেরকে যে কারেকশন দিয়েছে সেন্সর বোর্ড, সেগুলো আমরা ঠিক করেছি। আমরা চাই সিনেমাটা থিয়েটারে আসুক। আর খুব বড় কোনো কারেকশন তারা দেয়নি। গল্পের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না সে কারেকশনে। ওকে, ঠিক আছে।

দর্শকদের কাছে শিমুকে কীভাবে ব্যাখ্যা করতে চান?

শিমু একটা স্পিরিট, যে কিনা সব সময় ফাইট করছে ফর ডিগনিটি ফর জাস্টিস এবং ও এত বড় বড় কিছু ফোর্সের বিরুদ্ধেও ফাইট করে যেটা ওর থেকে অনেক বড়, কিন্তু তাও শিমু কখনোই নিরাশ হয় না। সিনেমাটা দেখলে বুঝবেন যে, যতক্ষণ না পর্যন্ত সফল হচ্ছে ততক্ষণ ও চেষ্টা করেই যাচ্ছে।

শিমু বাংলাদেশের শ্রমজীবী নারীদের একজন প্রতিনিধি। কারণ আমাদের দেশ যে আজকে অর্থনীতিতে এত ভালো করছে, সমৃদ্ধ হচ্ছে, এর পেছনে আমাদের নারী শ্রমিকদের ভূমিকা কোনোভাবেই ইগনোর করতে পারি না।

‘শিমু’ সিনেমার দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

আপনি তো নিজে শ্রমজীবী নারী নন। তাদের গল্প বলতে গিয়ে আপনার কী কী করতে হলো।

আমি শ্রমজীবী নারী না। আমার ফ্যাক্টরিতে কখনও কাজ করতে হয়নি। যে কারণে সিনেমাটি বানানোর সময় আমার অনেক গবেষণা করতে হয়েছে। গবেষণায় একটা পর্যায়ে গিয়ে আমি শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করি এবং তাদের কথা শুনতে থাকি। ওই রকমই একটা সময়ে ডালিয়া আক্তার নামে একজন নারী শ্রমিক ও নেত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয়। তখন ওকে বলি যে আপনি কি আমার সঙ্গে এই কাজটি করবেন? ও তখন রাজি হয়।

তখন আমরা স্ক্রিপটিং শুরু করি। আমাদের অভিনয়শিল্পীদের সেলাই মেশিন শেখানো, কথা বলা শেখানো হয়। এমনকি শিমু যখন ডেনমার্ক, ফ্রান্সে মুক্তি পেয়েছে, তখন ডালিয়া আমার সঙ্গে ছিল, প্রেসের সঙ্গে কথা বলেছে।

আমি শুধু গল্পটা বলছি কিন্তু এটা তার (ডালিয়া) গল্প এবং সে আমার সঙ্গেই আছে এবং এ দেশে মুক্তির সময়ও থাকবে আশা করি।

সিনেমাটি তো একটি শ্রেণির বলে ধারণা করছি। বিদেশের দর্শকরা কি গল্পের সঙ্গে রিলেট করতে পেরেছে?

আমি বলব যে রিলেট করতে পেরেছে। আমার মনে আছে, যখন নিউ ইয়র্কে স্ক্রিনিং হলো ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে, তখন একজন নারী প্রদর্শনী শেষে উঠে দাঁড়িয়ে বলল যে আমি শিমুর দ্বারা ইন্সপায়ার্ড। উনি ওনার নিজের স্ট্রাগলটাকে শিমুর মধ্যে দেখতে পেলেন। তিনি আফ্রিকান-আমেরিকান নারী ও পেশায় শিক্ষক।

এরপর যখন ফ্রান্সে মুক্তি পেল সিনেমাটি, তখন সেখানে শ্রমিকদের স্ট্রাইক চলছিল। শ্রমিকরা দলবেঁধে সিনেমাটি দেখেছে এবং শিমুর মাধ্যমে ইন্সপায়ার্ড হয়েছে।

আমার মনে হয় শ্রমজীবী নারী না হয়েও এ গল্পের সঙ্গে রিলেট করতে পারবে নারীরা। শিমু তার ব্যক্তিগত জীবনে যেসব বিষয় ফেস করে তার স্বামীর কাছ থেকে সেটা শ্রেণি নির্বিশেষে মেয়েরা ফেস করে।

তাই আমি মনে করি নানাভাবে গল্পটি রিলেট করা সম্ভব হবে।

‘শিমু’ সিনেমার দৃশ্যে রিকিতা নন্দিনী শিমু। ছবি: সংগৃহীত

সিনেমাটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শনের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে প্রদর্শিত হয়েছে। সিনেমাটি ভালোই ইনকাম করল মনে হচ্ছে।

ইনকাম তো ডিস্ট্রিবিউটর করে। আমাদের সিনেমাটির ওয়ার্ল্ড সেল এজেন্ট এবং ফ্রেঞ্জ ডিস্ট্রিবিউটর হলো পিরামিড ইন্টারন্যাশনাল। আমরা আসলে সিনেমাটি প্রি-সেল করেছিলাম। স্ক্রিপ্ট লেভেলে পিরামিড আমাদের থেকে একটা রাইটস নিয়ে নিয়েছিল। আমরা একটা ছোট অংশ পাই, তবে মূল ব্যবসাটা ডিস্ট্রিবিউটররাই করে।

আমি মনে করি তারা ভালো ব্যবসা করেছে। তারা সিনেমাটা সাউথ আমেরিকা, নর্থ আমেরিকা, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে মুক্তি দিয়েছে এবং তারা এখনও বিভিন্ন জায়গায় সিনেমাটি দেখাচ্ছে।

দেশের কোথায় কোথায় শিমু মুক্তি পেতে পারে। কোথায় মুক্তি পেলে এবং কারা দেখতে আসলে আপনি খুশি হবেন।

প্রথমে আমরা ঢাকার থিয়েটারগুলোতে শুরু করছি। ঢাকা এবং ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকা যেমন সাভার-আশুলিয়ায় চেষ্টা করছি। সিনেপ্লেক্সের পাশাপাশি কিছু ইনডিভিজুয়াল থিয়েটারের দিতে চাই, কারণ আমি খুব খুশি হব যদি নারী শ্রমিকরা সিনেমাটা দেখতে আসেন।

এ ছাড়াও ইয়াং অডিয়েন্সকে টার্গেট করে আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্রমোশন চলছে।

‘শিমু’ সিনেমার দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

তরুণরা যদি সিনেমাটি দেখে, তাহলে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের কোনো বার্তা কি তারা পাবে?

শিমু যে চরিত্রটা, ওর বয়স মাত্র ২৩ বছর। সে একজন শ্রমিক, সে একজন ওয়াইফ, সে একজন নেতাও হচ্ছে মাত্র ২৩ বছর বয়সে।

২৩ বছর বয়সী একজন মিডল ক্লাস মেয়ে বা উচ্চবিত্ত কোনো মেয়ে যদি সিনেমাটা দেখে, তাহলে তারা বুঝতে পারবে শিমু চরিত্রটির জীবনটা কত ডিফরেন্ট। ওরা রিয়েলাইজ করতে পারবে তার বয়সী একটি শ্রমজীবী নারীর কত কী করতে হয়।

আপনার নতুন সিনেমা নিয়ে জানতে চাই।

নতুন সিনেমা দুইটা। শিমু যখন ফ্রান্সে মুক্তি দেয়া হয়েছিল, তখন সবাই বলছিল এর সিক্যুয়াল হবে কি না? শিমুর কি হয়?

যার জীবন থেকে গল্প নিয়ে শিমু সিনেমাটা করা যে এখন প্রবাসী নারী শ্রমিক। তাকে ফলো করে আমি আমার নতুন কাজটি গোছাচ্ছি। আমি প্রবাসী নারী শ্রমিকদের নিয়ে সিনেমা করতে চাই। সেটা এখন গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকরা লেবানন, সৌদি আরব, জর্ডানে কাজ করে। সেখানে তাদের জীবন কেমন, সেটা তুলে আনতে চাই।

দ্বিতীয়টা একটু এক্সপেরিমেন্টাল কাজ। হরর-সুপারন্যাচারাল-থ্রিলার সিনেমা। এটার নাম দ্য ডিফিকাল্ট ব্রাইড। এটা বার্লিনাল কো-প্রোডাকশনে গিয়েছিল। সেখানে চার-পাঁচ দিন ধরে মিটিং হয়েছে। যেখানে ডিস্ট্রিবিউটর-প্রডিউসার-ফাইন্যান্সারদের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি সব ঠিক থাকলে আগামী বছর এই সময়ে শুট করতে পারব।

দ্য ডিফিকাল্ট ব্রাইড সিনেমার পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত

হরর-সুপারন্যাচারল-থ্রিলার কাজ করছেন!

মনে হচ্ছিল ক্রিয়েটিভ সেলফের জন্য একটা অন্য কিছু করে আসা দরকার। যেটাতে আমি রিফ্রেস ফিল করব। এ জন্য দ্য ডিফিকাল্ট ব্রাইট গল্পটা লিখতে লিখতে হরর-সুপারন্যাচারাল-থ্রিলার ঘরানার দিকে চলে গেছে।

বার্লিনালে যে মিটিং হয়েছে সেখানে খুব ভালো রেসপন্স পেয়েছি। যেমন, ফ্রান্সের চারটা ডিস্ট্রিবিউটরের সঙ্গে আমাদের মিটিং হয়েছে, প্রত্যেকেই খুব আগ্রহী। আমরা সুইডেন থেকে ভালো রেসপন্স পেয়েছি। ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, এমনকি ইতালি থেকেও আমরা ভালো সাড়া পেয়েছি।

এ বিভাগের আরো খবর