বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বইমেলায় টিকিট বিতর্ক উঠল কেন?

  •    
  • ৩০ জানুয়ারি, ২০২২ ২২:২৫

বইমেলায় টিকিট বিতর্ক কীভাবে উঠল তা অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা। এতে দেখা গেছে আলোচনা-সমালোচনার সূত্রপাত হয় গত শুক্রবার একটি জাতীয় দৈনিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুলের প্রকাশিত নিবন্ধ ঘিরে।

করোনা সংক্রমণের কারণে এবার দুই সপ্তাহ পিছিয়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। করোনার ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকায় মধ্য ফেব্রুয়ারিতেও মেলা শুরু হবে কিনা, তা নিয়ে রয়েছে শংকা।

তবে ফেসবুকে বইমেলার আয়োজনের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে মেলায় টিকিট বা প্রবেশমূল্য রাখা বা না রাখা নিয়ে বিতর্ক।

ফেসবুক ব্যবহারকারী অনেকের পোস্টে এবারের বইমেলায় টিকিট রাখা হচ্ছে, এমন দাবিও করা হচ্ছে। তবে একুশে বইমেলার তত্ত্বাবধানকারী কর্তৃপক্ষ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও আয়োজক বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ ধরনের কোনো আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়নি।

বইমেলায় টিকিট বিতর্ক কীভাবে উঠল তা অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা। এতে দেখা গেছে আলোচনা-সমালোচনার সূত্রপাত হয় গত শুক্রবার একটি জাতীয় দৈনিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুলের প্রকাশিত নিবন্ধ ঘিরে। ওই প্রবন্ধে মেলায় ‘কমপক্ষে ৫০ টাকা প্রবেশমূল্য’ নির্ধারণের প্রস্তাব করেন আসিফ নজরুল।

এরপরেই বিষয়টি নিয়ে তর্ক ছড়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনেকে বইমেলায় টিকিটের বিষয়টি চূড়ান্ত মনে করেও পোস্ট দিয়েছেন।

বইমেলায় প্রবেশমূল্য রাখার পক্ষে নন লেখক মাহবুব মোর্শেদ। তিনি ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘বই মেলা যারা কর্পোরেটদের পকেটে ঢোকাতে ইচ্ছুক তারাই বই মেলায় প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করতে চান। কয়েক বছর ধরে নানা কিসিমের স্পন্সরদের বর্গা দেওয়া হয়েছে মেলাটি। একটাই এখন বাকি, টিকেট কেটে লাভ আরও বাড়ানো। আমার কথা পরিষ্কার, বই মেলায় টিকেট চালু করা যাবে না।’

এ বিষয়ে মাহবুব মোর্শেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি কারও নাম উল্লেখ করছি না। একটি জাতীয় দৈনিকে দুই-একজন মন্তব্য করেছেন বইমেলায় প্রবেশে টিকিট বিষয়ে। আলোচনাটা সেখান থেকেই। তবে এবারই প্রথম না, বেশ কয়েক বছর হলো মেলার আগে আগে এমন একটি আলোচনা তোলেন কেউ কেউ।’

লেখক ও চলচ্চিত্র সমালোচক বিধান রিবেরু ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বইমেলায় টিকিট তো একেবারে নয়ই, এমনকি নিবন্ধনও সমর্থন করি না। এটা মেলা, বইমেলা। বাংলাদেশের মেলা সংস্কৃতিকে বিদেশের লিট-ফেস্ট বা ইভেন্টের সাথে গুলিয়ে ফেলা যাবে না।’

বিধান রিবেরু এ বিষয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাষা শহীদের স্মরণে এই বইমেলা, সব ধরনের মানুষ এখানে আসবে। এখানে এই চিন্তা মানেই প্রথমেই বাধা সৃষ্টি করা। বইমেলার প্রবেশের ক্ষেত্রে ন্যূনতম প্রতিবন্ধকতা থাকা উচিত নয়।’

তবে বইমেলায় প্রবেশমূল্য রাখার পক্ষেও মত দিচ্ছেন অনেকে। কবি ও প্রকাশক ব্রাত্য রাইসু একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘কেবল বই বিক্রি কইরা ও লেখক ঠকাইয়া সকল লাভ করতে চাওয়াটা গরিবি চিন্তা। মানুষকে আপনার মাল কিনতে পারার, মাল যাচাইয়ের ও ঘুরাঘুরির সুযোগ যে দিতেছেন সে থিকাও লাভ করতে হবে।

‘বাংলার প্রকাশকরা এইটা বোঝেন না। কারণ সরকার তাদের কাছ থেকে লটকে লট বই কিনা লাইব্রেরি নামক বস্তা ভরাইতেছে! এই শুভঙ্করের ফাঁকি থিকা বাইর হইয়া বই সংক্রান্ত নানান ব্যবসার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন হে প্রকাশকগণ। দরকারে আমার থিকা পরামর্শ নেন। অবশ্যই অর্থের বিনিময়ে।’

টিকিটের বিষয়ে কোনো আলোচনা বা সিদ্ধান্ত নেই

বইমেলায় টিকিটের বিষয়ে সরকার বা বাংলা একাডেমির সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হয়েছিল, জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ও সময় প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদের কাছে।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমন কোনো আলোচনা আমাদের হয়নি। বিষয়টি আমাদের চোখেও পড়েনি। আসলে বইমেলার কবে থেকে শুরু করতে পারছি বা পারছি না- সেটাই এখনও ঠিক করা যাচ্ছে না, সেখানে এমন আলোচনার প্রশ্নই আসে না।’

শ্রাবণ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ও বাংলাদেশ লেখক পাঠক প্রকাশক ফোরাম পরিষদের সমন্বয়ক রবীন আহসানও জানিয়েছেন এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে তিনি বইমেলায় প্রবেশমূল্যের পক্ষে।

রবীন আহসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বইমেলায় প্রবেশে টিকিট রাখার পক্ষে। তা সর্বোচ্চ ২০ টাকা হতে পারে। তবে সবার কাছে নয়; শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বাদে অন্যান্য পেশা বা সাধারণ মানুষের কাছে এই টিকিট বিক্রি হবে।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের নানা দেশে বইমেলায় প্রবেশে টিকিট লাগে। আমাদেরও হতে পারে। এই টাকাটা বাংলা একাডেমি প্রকাশকদের ভর্তুকি দিতে পারে।’

বিষয়টি নিয়ে জানতে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদাকে ফোন দিলে সেটি ধরেন তার ব্যক্তিগত সহকারী আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‘১ তারিখের (ফেব্রুয়ারি) আগে স্যার বইমেলা নিয়ে মিডিয়ার কোনো বক্তব্য দেবেন না।’

তবে বাংলা একাডেমির নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক এক কর্মকতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত কয়েক দিনে এমন কোনো সিদ্ধান্ত বা বইমেলা নিয়েই কোনো মিটিং হয়নি।’

অন্যদিকে, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা ফয়সল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই সপ্তাহের জন্য বইমেলা স্থগিতের সিদ্ধান্তের পর মেলা নিয়ে নতুন আর কোনো আলোচনা হয়নি।’

বিষয়টি অধ্যাপক আসিফ নজরুলের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা।

নিজের অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, ‘বইমেলাতে সবার প্রবেশের অধিকার অবশ্যই থাকা উচিত, কিন্তু এটা করোনা পরিস্থিতি, বিশেষ পরিস্থিতে মানুষ বিশেষ ব্যবস্থা নেয়। বইমেলায় প্রবেশ করার সময় এখন যে আপনার মাস্ক পরতে হচ্ছে, স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হচ্ছে- ওটাতে টাকা লাগছে না?’

তিনি বলেন, ‘শুধু ৫০ টাকা বলা হয়েছে দুটি কারণে। একটা হচ্ছে, অহেতুক লোকের আগমন যাতে কম ঘটে। যে বইমেলাতে যাবে, যার বইয়ের প্রতি আকর্ষণ আছে তার জন্য ৫০ টাকা নট আ বিগ মানি বলে আমার মনে হয়েছে।

‘প্রকাশকরা করোনার সময় আর্থিক ক্ষতিতে পড়ে, ওই পরিমাণ বিক্রি হয় না, ডিজাস্টার অবস্থা হয়ে গেছে। এই টাকাটা (টিকিটের) এখান থেকে নিয়ে স্টলের ভাড়াটা যেন হাফ করে দেয়া হয় সেটাও বলেছি। এটা হচ্ছে দুই নম্বর কারণ। এটা বলেছি বাস্তববাদী চিন্তা করে। এখন আপনি ইমোশনালি চিন্তা করে বইমেলা করলেন, বইমেলায় এমনিতেই লোক কম আসল, বিক্রি কমলো, প্রকাশকরা একদম নির্জীব হয়ে গেল, তার কোনো মানে হয় না।’

এ বিভাগের আরো খবর