সাবেক ছাত্রনেতা ও অ্যাক্টিভিস্ট লাকী আক্তারের দ্বিতীয় একক গান ‘নয়া নয়া ফুল’ প্রকাশ পেয়েছে গত ৩০ ডিসেম্বর। গানটি বেশ সাড়া ফেলেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে সুর নকলের অভিযোগে কিছু সমালোচনাও রয়েছে।
বলা হচ্ছে ‘নয়া নয়া ফুল’ গানটি তানজানিয়ার সংগীতশিল্পী বি কিদুদ-এর গাওয়া ‘মুহোগো ওয়া জাংওম্বে’ গানের সুর থেকে নেয়া।
রাজনৈতিক কর্মীর পাশাপাশি সংগীত চর্চা এবং ‘নয়া নয়া ফুল’ গানের বিভিন্ন দিক নিয়ে নিউজবাংলার মুখোমুখি হয়েছেন লাকী।
নতুন প্রকাশিত গানে বিদেশি সুর অনুকরণের অভিযোগের বিষয়ে লাকী আক্তারের পরিষ্কার দাবি, এর কোনো ভিত্তি নেই।
তিনি বলেন, ‘আমি খুবই পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, আমি যখন এই গানটা লিখি বা কম্পোজ করি তখন কিন্তু এই গানটি (মুহোগো ওয়া জাংওম্বে) শুনিনি। আমি গানটা শুনেছি অনেক পরে। যখন শুনেছি তখনও কিন্তু মনে হয়নি, আমার গানটার সঙ্গে ওই গানের মিল পেয়েছি।
‘এখন ফোক মানে হচ্ছে- মাটির গান। মাটির সঙ্গে আপনি একটা মিল পাবেনই। আর পৃথিবীর ফোক গানগুলোর ক্ষেত্রে আপনি যে অঞ্চলেই যান না কেন- সুরের সঙ্গে ঐক্য বলতে পারেন, সুরের সঙ্গে সুরের আত্মীয়তা বলতে পারেন, সেটা আপনি পাবেনই।’
পৃথিবীর সব জায়গার ফোক গানের মাঝে একই ধরনের ধাঁচ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি ব্লুজের গান শোনেন, বাংলাদেশের ব্লুজ আর আমেরিকার ব্লুজের গান শুনলে আপনার কাছে মনে হবে হ্যাঁ আপনি মিলটা পাচ্ছেন। ফলে এই জায়গা থেকে আমার কাছে মনে হয়েছে, যারা সমালোচনা করছেন আমি তাদের খুবই সাধুবাদ জানাই, কারণ আমার গান নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।’
তবে এই সমালোচনার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলেও মনে করছেন লাকী।
তিনি বলেন, ‘একটা বিষয় বলতে চাই, আসলে আমার গান নাকি রাজনীতি- কোনটা আসলে তাদের বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে সেটা নিয়ে আমি নিশ্চিত নই। তবে আমি মনে করি যে সুরের সঙ্গে সুরের কোনো বিরোধ নাই, এই জায়গা অনেক ঐক্যের, সংহতির এবং ভালোবাসার। গানের সঙ্গে গানের তো মিল থাকেই। অজস্র গানের সঙ্গে অজস্র গানের মিল আছে, কিন্তু সেটার মানে আমার গানের মৌলিকত্ব হারায় না। এটা আমি খুব কনফিডেন্ট আমার জায়গা থেকে।’
আফ্রিকান গানটির সঙ্গে নিজেও গাওয়া গানের কোথাও কোথাও মিল থাকার বিষয়টি লাকীও অকপটে স্বীকার করছেন।
লাকী বলেন, ‘আমার কাছেও মনে হয়েছে এই গানটার সঙ্গে কিছু কিছু জায়গায় মিল আছে। তাল-লয়ে হয়ত মিল নেই, কিন্তু কিছু জায়গায় মিল আমি নিজেও পেয়েছি। তবে আমি এটুকু বলতে চাই- গান তো আসলে সপ্তসুরের খেলা। আপনি সেই সাত সুরের বাইরে তো যেতে পারবেন না। আর আগেই তো বললাম, ফোকের ধাঁচে-ধরনে এক ধরনের মিল থাকে। ওই জায়গাতে আমার কাছে মনে হয়েছে, একটা সুরের ঐক্য ঘটেছে আমার অবচেতনে। সেটা হতে পারে।’
‘নয়া নয়া ফুল’-এর মিউজিক ভিডিও প্রসঙ্গে লাকী বলেন, ‘ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের টিকইল গ্রামে। এ গ্রামটি আলপনা গ্রাম নামেও পরিচিত। মিউজিক ভিডিও তৈরিতে গ্রামটির সাধারণ মানুষরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা করেছেন।’
গানটির মিউজিক ভিডিওর ডিরেকশন ও সিনেমাটোগ্রাফিতে ছিলেন জাহিদুল ইসলাম সজীব।
যৌথভাবে ‘নয়া নয়া ফুল’-এর সংগীত আয়োজন করেছেন তরুণ সংগীত পরিচালক অভিজিৎ কুণ্ডু ও অভি চৌধুরী পার্থ। মিক্স-মাস্টারিং ও সাউন্ড ডিজাইনে ছিলেন রেজওয়ান সাজ্জাদ। বাঁশি বাজিয়েছেন অয়ন ইসলাম ওলি, সারেঙ্গীতে ছিলেন শৌনক দেবনাথ ঋক, অ্যাকুস্টিক গিটারে কাইয়ুম রেজা, বেজ গিটারে রেজোয়ান সাজ্জাদ এবং হারমনিয়ামে অভিজিৎ কুণ্ডু।
এ ছাড়া ব্যাঞ্জোতে ফতেহ আলী খান আকাশ, বাংলা ঢোলে ছিলেন সৌরব দাস গুপ্ত, কাহন এবং পার্কেশন বাজিয়েছেন অভি চৌধুরী পার্থ।
সংগীত নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও নিউজবাংলাকে জানান সাবেক ছাত্রনেতা লাকী আক্তার।
তিনি বলেন, ‘গানটা আমি নিয়মিত করে যেতে চাই। লিখতে চাই, সুর করতে চাই। মার্চ মাসে আমার একটি নতুন গান আসছে, সেটার নাম আর্তনাদ। আমি মনে করি এটা একেবারেই একটি রাজনৈতিক গান।’
এই বাইরে বেশ কিছু গানের অনুবাদ করছেন লাকী। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের গান, যেগুলো আমাদের অনুপ্রাণিত করে সেই রকম গানের অনুবাদ করছি। পাকিস্তানি কবি হাবিব জ্বালিবের গজল দাস্তুরের বাংলা অনুবাদ আমরা করেছি। আমাদের ওই গানটি আগামী পহেলা মে চলে আসবে।’
‘নয়া নয়া ফুল’ বাদেও গত বছরের জুলাইয়ে নিজের সুরে ‘গাছেদের কান্না’ শিরোনামে প্রকাশ পায় লাকীর আরও একটি গান।
এছাড়া, একই বছর যৌথ ভাবে লেখক ও সংগীত শিল্পী শতাব্দী ভবর সঙ্গে লাকীর ‘বিপ্লবের ফুল’ শিরোনামের আরও একটি গান প্রকাশ পায়। এটি ইতালির সবচেয়ে বিখ্যাত গানগুলোর একটি ‘বেলা চাও’ এর ভাবান্তর।