গভীর রাতে প্রাইভেট কার আটকে পুলিশ দেখতে পেল আরোহীর আসনে বসা অভিনেত্রী, মডেল অর্চিতা স্পর্শিয়া। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন তার বন্ধু প্রাঙ্গণ দত্ত অর্ঘ।
পুলিশ বলছে গাড়িটি চলছিল ‘বিপজ্জনকভাবে’। বিচ্যুতি ছিল আরও। প্রাঙ্গণ স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন না। তিনি মদ পান করে চালকের আসনে ছিলেন। যদিও এর লাইসেন্স ছিল তার।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে বনানী থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যাওয়ার সময় ধানমন্ডি ৮/এ সড়কে গাড়িটি আটকে প্রাঙ্গণ ও স্পর্শিয়াকে নেয়া হয় থানায়। তবে সেখানে বেশিক্ষণ থাকতে হয়নি তাদের। মুচলেকা দিয়েই পার পান।
মুচলেকাপত্রে লেখা, ‘আমি প্রাঙ্গণ দত্ত অর্ঘ, আমার ব্যক্তিগত গাড়ি বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে আসার পথে ধানমন্ডির ইউনি মার্ট শপিং সেন্টারের সামনে কর্তব্যরত পুলিশের টহল গাড়ি চ্যালেঞ্জ করে, আমি তৎক্ষণাৎ গাড়িটি থামিয়ে দায়িত্বরত পুলিশ অফিসারের সঙ্গে কথা বলাকালে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে যাই এবং পুলিশের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করি।
‘পুলিশ আমাকে মদ্যপ অবস্থা কি না জানতে চাইলে আমি জানাই যে আমি অল্প মদ পান করেছি এবং আমার মদ পান করার লাইসেন্স আছে। পুলিশ লাইসেন্স প্রদর্শন করতে বললে আমি তৎক্ষণাৎ লাইসেন্স প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হওয়ায় অতিরিক্ত গতিতে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো এবং পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হওয়ায় থানার ঊর্ধ্বতন অফিসার আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলে আমাকে থানায় যেতে বললে আমি আমার গাড়িসহ থানায় এসে হাজির হই এবং এই মর্মে মুচলেকা প্রদান করি যে ভবিষ্যতে এমন কার্যকলাপ আর করব না।’
মুচলেকাপত্রে কোথাও অবশ্য স্পর্শিয়ার নাম নেই।
স্পর্শিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি মদ্যপ ছিলাম না, আর এটা যদি আমার রক্ত পরীক্ষা করেও প্রমাণ করতে হয়, তাতেও আমি রাজি।’
স্পর্শিয়ার দাবি, শুধু তিনি নন, তার বন্ধুও মদ্যপ ছিলেন না। আর তাদের গাড়ির গতি একেবারেই বেপরোয়া ছিল না। স্পর্শিয়ার ভাষ্যে, ‘গতি ছিল ৫০-এ।’
স্পর্শিয়া বলেন, ‘আমরা যখন ধানমন্ডির ৮/এ-তে টার্ন করছি, তখন পুলিশ আমাদের আটকায় এবং বলে, যেভাবে টার্ন করা হয়েছে তাতে নাকি পাশের সিএনজি পরিবহনের সঙ্গে লেগে যেতে পারত।’
এরপর অর্ঘের সঙ্গে কথা শুরু করে পুলিশ। অনেকক্ষণ কথা বলেও পুলিশ যখন তাদের ছাড়ছে না, তখন স্পর্শিয়া নিজেই গাড়ির চাবি খুলে পুলিশ সদস্যকে দিয়ে গাড়িসহ তাদের দুজনকে থানায় নিয়ে যেতে বলেন।
কিন্তু পুলিশ সদস্যরা তাদের থানায় নিয়ে না যেতে চাইলে তারা গাড়ির পেছনের অংশ খুলে সেখানেই বসে পড়েন এবং পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন।
একপর্যায়ে স্পর্শিয়া ও অর্ঘ থানায় যান। স্পর্শিয়া বলেন, ‘থানায় যাওয়ার পর আমাকে তারা চলে যেতে বলেন, কিন্তু আমার বন্ধু অর্ঘ যেহেতু তখন পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অন্য কক্ষে ছিল, তাই আমি চলে যাইনি। তারা অন্য কক্ষে বসে কথা বলে তার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়েছে।’
মদ্যপও ছিলেন না আবার গাড়ির গতিও বেশি ছিল না, তার পরও কেন মুচলেকা দিলেন? জানতে চাইলে স্পর্শিয়া বলেন, ‘এটা আমি পরিষ্কার জানি না। কারণ সেই সময় আমি অর্ঘের সঙ্গে ছিলাম না। তাদের মধ্যে কী কথা হয়েছে, সেটা আমার জানা নেই।’
স্পর্শিয়া জানান, তার কাছে প্রচুর ফোন আসছে। কিছু না করেও সবার প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়াটা তার কাছে হয়রানির মতো।
ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা গতকাল (বৃহস্পতিবার) লেট নাইটের ঘটনা। আমাদের এসআই মাইনুল ও মাহবুব ছিল ডিউটিতে। রাতে একটা গাড়ি রিকশাকে ধাক্কা দেয়ার উপক্রম হয়। পুলিশ ওই গাড়িটি থামালে গাড়িতে থাকা দুজন পুলিশের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করে। তাদের এমন আচরণের পর পুলিশ তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য থানায় নিয়ে আসে। পরবর্তী সময়ে তারা তাদের ভুল বুঝতে পারে। স্পর্শিয়ার সঙ্গে যিনি ছিলেন, তিনিই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। অর্ঘ নামের ওই ব্যক্তি মুচলেখা দিয়েছেন; তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’