অসাধারণ সব মুদ্রায় সবাইকে মুগ্ধ করেন নৃত্যশিল্পী। কিন্তু যিনি এসব মনোমুগ্ধকর মুদ্রার স্রষ্টা, তিনি থেকে যান অন্তরালে। নৃত্যকলায় আড়ালে পড়ে থাকা সেই গুণীনকে বলা হয় কোরিওগ্রাফার।
কোরিওগ্রাফারদের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সঙ্গে তুলনা করলেও ভুল হবে না। রূপালি পর্দায় অভিনয় শিল্পীদের দেখে মানুষ হাসে, কাঁদে। অথচ তাদের অভিনয় দক্ষতা বের করে আনেন ক্যামেরা পেছনের পরিচালক। নাচের ক্ষেত্রে কোরিওগ্রাফারের ভূমিকাও অনেকটা একই রকম।
কোরিওগ্রাফারের আরেক পরিচয় ‘ড্যান্স রাইটার’ বা ‘নৃত্য রচয়িতা’। তাদের মননে তৈরি হয় একেকটি নাচ, আর সেটি বাস্তবে রূপ নেয় নৃত্যশিল্পীদের মাধ্যমে। অন্তরালের সেই কোরিওগ্রাফারদের সম্মাননা জানাতে ৯ জানুয়ারি উদ্যাপন হয় আন্তর্জাতিক কোরিওগ্রাফার দিবস।
মানব ইতিহাসে ঠিক কবে থেকে নাচের শুরু, তার সঠিক কোনো হদিস নেই। প্রত্নতাত্ত্বিকরা বলছেন, হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে এই নৃত্যশিল্প।
গবেষণা বলছে, সভ্যতার শুরু থেকেই সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে নাচের ব্যবহারও করছে মানুষ। এমনকি মানব সভ্যতার বিকাশেও সামাজিক উদযাপনের অংশ হয়েছে নাচ।
আজ থেকে ৯ হাজার বছর আগে ভারতীয় উপমহাদেশে নাচের জন্ম হয় বলে মনে করছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। ভারতে পাওয়া ওই সময়ের গুহাচিত্র তেমন সাক্ষ্যই দিচ্ছে। ৫ হাজার ৩০০ বছরের পুরনো মিশরের সমাধি চিত্রেও নৃত্যকলার ছাপ পেয়েছেন গবেষকরা।
প্রাচীন গ্রিসে এমন এক আয়োজনের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে সপ্তাহ জুড়ে মদ্যপানের পাশাপাশি নাচেরও প্রচলন ছিল।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে নাচের মুদ্রার ধরন বদলেছে। নাচ, সংগীত এবং পারফরম্যান্সের যূথবদ্ধতায় দর্শক যখন বিমোহিত, তখন শিল্পীরাও কোরিওগ্রাফি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করলেন।
ঊনবিংশ শতকের দিকে ‘কোরিওগ্রাফি’ এবং ‘কোরিওগ্রাফার’ শব্দের ব্যবহার শুরু হয়। সময়ের চাহিদায় তৈরি হয় কোরিওগ্রাফির নতুন জগত। ‘কোরিওগ্রাফার’ শব্দের সুনির্দিষ্ট ব্যবহার ১৯৩৬ সালে।
ওই সময়ে ‘অন ইওর টুস’ শিরোনামে একটি ব্রডওয়ে শোর আয়োজন করেছিলেন জর্জ ব্যালানশাইন। তাকে কৃতিত্ব দিতেই শব্দটির প্রথম ব্যবহার। এর ঠিক ১৪ বছর পর ‘কোরিওগ্রাফি’ শব্দটিকে প্রথম আমেরিকান অভিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।