ঘটনা তো কম ঘটেনি তার ৫৬ বছরের জীবনে! প্রেম, বিচ্ছেদ, বান্ধবী, বলিউডের অলিখিত নিয়ন্ত্রক, দুর্ঘটনায় ফুটপাথের ঘুমন্ত মানুষের প্রাণ নেয়া, কৃষ্ণসার হরিণ শিকার। সব মিলিয়ে তার জীবনটাই যেন রুপালি পর্দা।
তারপরও ৫৬তম বছরটাই যেন সবচেয়ে ঘটনাবহুল বলিউড ভাইজান সালমান খানের জীবনে। ‘প্রিয় সখি’ ক্যাটরিনা কাইফ সাতপাক ঘুরে ফেললেন বয়সে ছোট ভিকি কুশলের সঙ্গে। জন্মদিনের ঠিক আগের দিন সাপের কামড়ে হাসপাতালের বিছানায় শয্যাশায়ী ‘ভাইজান’। ভগ্নীপতি আয়ুশ শর্মার দাবি, খানদানের বড় ছেলে নাকি ছাপোষা, মধ্যবিত্ত মানসিকতার! সত্যিই কি তিনি তাই?
সেলিম-সলমা খানের বড় ছেলে সালমান খান। দিওয়ার সিনেমার বিখ্যাত সংলাপ ‘মেরে পাস মা হ্যায়’-এর জ্বলন্ত সংস্করণ তিনি। এখনও মায়ের বাধ্য-অনুগত সন্তান সালমান।
সেলিম খান যখন দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন হেলেনকে, অনেক দিন পর্যন্ত তাকে মা বলে মেনে নিতে পারেননি। বলিউড বলে, বাবার এই আচরণই নাকি তাঁকে বিয়ে-বিমুখ করে তোলার জন্য অনেকটা দায়ী!
সুপারস্টার, বলিউড ভাইজান সালমান খান। ছবি: সংগৃহীত
মায়ের মতোই ভালো আঁকতে পারেন সালমান, গানও গান। পড়াশোনায় কতটা মনোযোগী ছিলেন? বলিউড বলছে, মুম্বাইয়ের বান্দ্রার সেন্ট স্ট্যানিসলাস হাইস্কুল থেকে ১২ ক্লাসের পড়াশোনা শেষ করেছেন সলমন। তার আগে তিনি কয়েক বছর গোয়ালিয়রের সিন্ধিয়া স্কুলে পড়াশোনা করেন।
সলমনের বাবা বিখ্যাত চিত্রনাট্যকার সেলিম-জাভেদ জুটির সেলিম। স্বাভাবিকভাবেই ছেলেও বলিউডমুখী। বিবি হো তো অ্যায়সি সিনেমায় সালমানের প্রথম অভিনয়, ১৯৮৮ সালে। রেখা-ফারুক শেখ অভিনীত বিবি হো তো অ্যায়সি তে ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। পরের বছরই তিনি সফলতম নায়ক! সুরজ বরজাতিয়ার ম্যায়নে পেয়ার কিয়া তে ‘প্রেম’। বিপরীতে ভাগ্যশ্রী।
তারও আগে সালমান খান সফল মডেল। সঙ্গিনী সঙ্গীতা বিজলানি। ভারতের প্রথম সারির পোশাক প্রস্তুতকারী সংস্থার হয়ে এক ফ্রেমে ধরা দিয়েছিলেন দুজনে। প্রেমেও পড়েছিলেন। বলি পাড়ায় রটনা, বিয়ের কার্ড পর্যন্ত নাকি ছাপা হয়ে গিয়েছিল তাদের!
কে পিছিয়ে এসেছিল সাতপাক ঘোরা থেকে? জানা যায় না। তবে সালমানের ‘প্রেম রোগ’ তখন থেকেই। পাঁচ বছরের বড় সঙ্গীতা এখনও সালমানের খুব কাছের বন্ধু।
সুপারস্টার, বলিউড ভাইজান সালমান খান। ছবি: সংগৃহীত
সঙ্গীতা বিজলানি চলে গেলেও প্রেম কিন্তু ছাড়েনি পর্দার ‘প্রেম’কে! সালমানের জীবনে এসেছিলেন পাকিস্তানি নায়িকা সোমি আলি। বুলান্দ তাদের প্রথম অভিনীত সিনেমা। টানা আট বছর সম্পর্কে ছিলেন তারা। বলিউড বলে, একমাত্র সোমিই নাকি ‘পাত্রী’ হিসেবে পছন্দ ছিল সালমানের।
আর সোমির অভিযোগ, সালমানের এত বান্ধবী যে কাকে ছেড়ে কাকে সামলাবেন! প্রায়ই নাকি তিনি সোমির বদলে অন্য কারও সঙ্গে ব্যস্ত থাকতেন। যা নায়িকা মেনে নিতে পারেননি। অতএব বিচ্ছেদ।
সোমি চলে গেলেও সালমান একা হননি। তার জীবনে ততক্ষণে ফারিয়া আলম। তার কথা যদিও কোনো দিন অভিনেতা স্বীকার করেননি।
ইন্ডাস্ট্রিতে ঝড় তোলার মতো কোনো প্রেম যদি সালমান করে থাকেন, সেটি একমাত্র ঐশ্বরিয়া রাইয়ের সঙ্গে। সঞ্জয় লীলা বানসালির হাম দিল দে চুকে সানাম যারা দেখেছেন, তারা বুঝবেন সালমান-ঐশ্বরিয়ার রসায়নের কথা।
শুরুতে সারাক্ষণ আগলানো। পরে সেটাই সন্দেহ হয়ে দেখা দিয়েছিল তার মধ্যে। যা ঐশ্বর্য মেনে নিতে পারেননি। সালমানের হাত থেকে নিস্তার পেতে অভিনেতা বিবেক ওবেরয়ের মোহেও মজেছিলেন ঐশ্বরিয়া। বলিউডজুড়ে তাদের বিয়ের গুঞ্জন! পাগলপারা সলমন। বিবেককে খুনের হুমকি, ঐশ্বর্যকে মারধর- কী করেননি! বলিউড সাক্ষী, সালমান বলিউডের কোনো নায়িকার জন্য এত আকুল ছিলেন না। তবু আটকাতে পারেননি রাই সুন্দরীকে। ১৪ বছর হলো তিনি আছেন বচ্চন টাইটেলে।
সুপারস্টার, বলিউড ভাইজান সালমান খান। ছবি: সংগৃহীত
এর পরেই কি ভাইজান একটু এলোমেলো হয়ে উঠেছিলেন? মত্ত অবস্থায় আচমকা গাড়ি চালিয়ে ফুটপাথে। তারই বলি নিরীহ ফুটপাথবাসী। কৃষ্ণসার হরিণ শিকার, সব মিলিয়ে পরপর কেলেঙ্কারি! তার জেরে কারাগারেও থাকতে হয়েছে তাকে।
সেই সময়ে সালমানের পাশে ছায়ার মতো ছিলেন ক্যাটরিনা কাইফ। বিদেশিনী কন্যা যেন সালমানের ক্ষতবিক্ষত জীবনে প্রেমের প্রলেপ হয়ে এসেছিলেন। ক্যাটরিনা সলমনকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। বদলে বলিউডে শক্ত হয়েছে তার পায়ের তলার জমি।
সব দেখেশুনে ভাইজানের অনুরাগীরা ক্যাটকে ‘ভাবিজি’ বলে ডাকতে শুরু করেছিলেন। সবাই অপেক্ষায় ছিলেন, কবে চার হাত এক হবে? শুধু ক্যাটের জন্য ইউলিয়া ভান্তুরকে কেউ সলমনের পাশে দেখতে, মানতে রাজি হননি!
ক্যাটরিনাও সদ্য ছেড়েছেন সালমানের হাত। বয়সে ছোট ভিকি কুশল এখন তার জীবনসঙ্গী। প্রেমিকার বিয়েতে দেশ ছেড়েছেন ভাইজান। কিন্তু উপহার দিতে ভোলেননি। স্বামীর উপহারকে ছাপিয়ে গিয়েছে প্রাক্তনের উপহার। ৩ কোটি টাকা দামের গাড়ি উপহার দিয়েছেন তিনি।
জন্মদিনের এক দিন আগেই সর্পাঘাতে শয্যাশায়ী সালমান।
ক্ষণস্থায়ী প্রেম, কখনও প্রতিহিংসাপরায়ণ, পরক্ষণেই দানবীর! সালমানকে চেনা গণ্ডিতে বাঁধা দায়! মহামারিতে তিনি নিজে ইন্ডাস্ট্রির কলাকুশলীদের হাতে রেশন তুলে দিয়েছেন। ব্যাংকে পাঠিয়েছেন নির্দিষ্ট অর্থ।
সুপারস্টার, বলিউড ভাইজান সালমান খান। ছবি: সংগৃহীত
তিনি দাতা, এ খবর জেনে এক মহিলা ছেলের পড়াশোনার জন্য ল্যাপটপ চাইতে এসেছিলেন। নিজের ল্যাপটপ তার হাতে তুলে দেন ‘টাইগার’।
তার বাড়ি সবার সব সময়ে অবারিত দ্বার। পোশাক থেকে খাবার- সব সময়ই বাড়তি মজুত। সলমন নিজে ঈদ পালন করেন। আবার গণেশ বন্দনাতেও মাতেন।
অতিসম্প্রতি ভগ্নীপতি আয়ুশ মুখ খুলেছেন তার সম্বন্ধীর হয়ে। কেন চিরকুমার থাকলেন ৫৬-এর যুবক? আয়ুশের কথায়, বৈভবের মধ্যে থাকলেও সালমান নিতান্তই মধ্যবিত্ত, ছাপোষা। সেই মানসিকতার মেয়ের খোঁজ আজও তিনি পাননি। সবাই যে সালমানের বিত্তই চায়। মানুষ সলমনকে চান কজন!