তুমুল আলোচিত সিনেমা রেহানা মরিয়ম নূর কান চলচ্চিত্র উৎসবসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবের আসর মাতিয়ে দেশে মুক্তি পায় ১২ নভেম্বর।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রদর্শিত হয়েছে সিনেমাটি। তবে এখন আর প্রেক্ষাগৃহে নেই রেহানা মরিয়ম নূর।
আলোচিত সিনেমাটি কেমন ব্যবসা করেছে? প্রশ্নটি এখন অনেকের।
প্রথম সপ্তাহে রেহানা প্রদর্শিত হয় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও বগুড়ায়। দ্বিতীয় সপ্তাহে পাবনাতেও চলে সিনেমাটি। চতুর্থ সপ্তাহে সিনেমাটি প্রদর্শিত হয়েছে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে।
রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা সিটি, সীমান্ত সম্ভার, মহাখালী ও এসকেএস শাখায় প্রদর্শিত হয় রেহানা মরিয়ম নূর।
স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রেহানা মরিয়ম নূর সিনেমাটি প্রথম দুই সপ্তাহ ভালো চলেছে। তারপর শ্লো হয়ে গেছে। তবে করোনার পর অন্য যেসব বাংলা সিনেমা আমাদের এখানে মুক্তি পেয়েছে, সেগুলোর চেয়ে রেহানা মরিয়ম নূর –এর ব্যবসা ভালো ছিল।’
রাজধানীর শ্যামলী সিনেমা হলেও প্রদর্শিত হয়েছে সিনেমাটি। প্রেক্ষাগৃহটির ম্যানেজার আহসানুল হাসান অবশ্য ব্যবসা নিয়ে সন্তুষ্ট নন। সেখানে সিনেমাটি চলেছে দুই সপ্তাহ।
হাসান বলেন, ‘আমাদের এখানে সিনেমাটি ভালো ব্যবসা করেনি।’
নারায়ণগঞ্জে ৩৫ আসনের প্রেক্ষাগৃহ সিনেমাস্কোপ। এর পরিচালক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান নিজেও চলচ্চিত্র পরিচালক ও আর্কিটেক্ট। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে সিনেমাটি ভালোই চলেছে বলব।’
ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামের দুটি প্রেক্ষাগৃহ সুগন্ধা ও সিলভার স্ক্রিনে ২ সপ্তাহ করে চলেছে রেহানা মরিয়ম নূর।
সিলভার স্ক্রিনের ম্যানেজার মঈন জানান, বাংলা সিনেমার মধ্যে দেবীর পর রেহানা মরিয়ম নূর সিনেমাটি তাদের প্রেক্ষাগৃহে ভালো ব্যবসা করেছে।
সুগন্ধা সিনেমা হলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর শাহাদৎ হোসেনও সিনেমার ব্যবসায় সন্তুষ্ট। তিনিও ‘ভালো’ বলেছেন তার প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটির ব্যবসা।
বগুড়ার মধুবন সিনেমা হলের ডিরেক্টর এস এম ইউনুস রোহান। তিনি জানান, তাদের ওখানে ২ সপ্তাহ চলেছে রেহানা মরিয়ম নূর এবং তিনি সিনেমার ব্যবসায় ‘সন্তুষ্ট’।
রোহান বলেন, ‘সিনেমাটি নিয়ে আমাদের এখানকার দর্শকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল। ভালো-খারপ দুই ধরনের মন্তব্যই পেয়েছি, কিন্তু অনেকেই দেখতে এসেছেন। তাই সিনেমার যে ব্যবসা হয়েছে, সেটাকে আমি ভালোই বলব।’
পাবনাতে আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারেনি রেহানা মরিয়ম নূর। সেখানকার রূপকথা সিনেমা হলে এটি চলেছে এক সপ্তাহ।
রূপকথার ম্যানেজার রায়হান কবীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রেক্ষাগৃহে ভালো ভালো সিনেমা দেখাই। কোভিডের কারণে হল অনেকদিন বন্ধ ছিল এবং রেহানা মরিয়ম নূর সিনেমাটি দিয়েই আমরা প্রেক্ষাগৃহটি চালু করি। তাই অনেকেই জানত না যে হলটি খুলেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে সাউন্ড সিস্টেমটা এখনও খুব ভালো না। আমরা ৩:১ সিস্টেমের সাউন্ড দিতে পারি। এগুলো উন্নত করা হবে কিন্তু কিছুটা সময় লাগবে।’
ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সিনেমা হল মালিকদের অধিকাংশই সিনেমাটির ব্যবসা ভালো বললেও হতাশার সুর পাওয়া গেছে নির্বাহী প্রযোজক এহসানুল হক বাবুর কণ্ঠে।
হল মালিকদের মতো তিনিও সিনেমার ব্যবসার ক্ষেত্রে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করেননি। তবে জানিয়েছেন, বিনিয়োগ উঠে এলেই তিনি খুশি।
বাবু বলেন, ‘ব্যবসাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য না। যদি তাই হতো, তাইলে প্রতি বছর একটি করে সিনেমা নিয়ে আসতাম। আমাদের প্রথম সিনেমা ছিল তিন বছর আগে, দ্বিতীয় সিনেমা এ বছর। তৃতীয় সিনেমা হয়তো আবার তিন বছর পরে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক যে আমাদেরও খেয়ে পড়ে বাঁচতে হয়। তাই আমরা বিনিয়োগটা উঠে এলেই খুশি। আমরা সেটারই চেষ্টা করছি। আমরা বেশি করে চাই সিনেমাটি সবাই দেখুক।’
৩০ ডিসেম্বর থেকে রেহানা মরিয়ম নূর দেখা যাবে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে। সেখান থেকেও কিছু আয় হয়েছে নির্বাহী প্রযোজকের।
এ ব্যাপারে চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি বলেন, ‘রেহানা মরিয়ম নূর দেশের সিনেমা। এটি আমাদের জন্য সম্মান-গর্ব বয়ে এনেছে। তাই আমাদের একটা টার্গেট ছিল সিনেমাটি যেন দেশের ওয়েব প্ল্যাটফর্ম চরকিতে দেখাতে পারি। এ জন্য আমরা অ্যাগ্রেসিভ অ্যামাউন্ট পে করেছি।’
আবদুল্লাহ মোহম্মদ সাদ পরিচালিত সিনেমাটির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আজমেরী হক বাঁধন।