অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া সম্প্রতি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি দাম্পত্য জীবনে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া পারিবারিক সহিংসতার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
পারিবারিক সহিংসতার শিকার ঢাবি শিক্ষার্থী এলমার মৃত্যু প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বুধবার রাতে শবনম ফারিয়া লিখেছিলেন, ‘মনে পড়ছে কীভাবে আমি দেবী সিনেমার পুরো প্রমোশন ভাঙা হাত নিয়ে করেছি। যখন কেউ জানতে চেয়েছে কী হয়েছে? বলেছিলাম সিঁড়ি থেকে পড়ে ব্যথা পেয়েছি!’
‘কাবিনের তিন মাস না যেতেই এতকিছু! নিশ্চয়ই সমস্যা আমারই! আমি এটা ভেবে দিনের পর দিন জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে, রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি! বারবার ভেবেছি কিছু হলে সবাই আমাকেই খারাপ বলবে!’
বৃহস্পতিবার শবনম ফারিয়া আরও লেখেন, ‘কারও ইমেজ নষ্ট করার জন্য বা কোনো ধরনের মনোযোগ নেয়া আমার ইচ্ছা না। আমার আগের পোস্টটি লেখার কারণ সমাজের দিকে আঙুল তোলা।’
শবনম ফারিয়ার স্ট্যাটাস নিয়ে কথা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, সংবাদও প্রকাশ হচ্ছে গণমাধ্যমে। শবনমের কথাগুলো পড়ে অনেকে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন তার সংসার ভাঙার জন্য তার প্রাক্তন স্বামীই দায়ী।
এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়ে সেই নিজের কথা বলতে চেয়েছেন শবনমের প্রাক্তন হারুনুর রশীদ অপু।
দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘প্রেম, বিয়ে কিংবা একটা সম্পর্কের মধ্যে হাজারটা চড়াই-উতরাই থাকে। আবেগ-রাগ, হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ মিলিয়েই একেকটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমার বিয়ের সম্পর্কটা টেকেনি, এটা নিয়ে আমার বিপরীতের মানুষ অনেক বয়ান, স্ট্যাটাস, মতবাদ দিলেও এত দিন পর্যন্ত আমি কিছুই বলিনি, হয়তো আর বলবও না। ভেবেছি বোবার শত্রু নাই!’
তবে পরিস্থিতি তাকে মনে করতে বাধ্য করছে যে, চুপ থেকে সম্মান দিয়ে যাওয়াও অনেকে সুযোগ নেয়।
অপু লেখেন, ‘চাওয়া-পাওয়ার হিসাব অনেক সময়ই মেলে না, তাই সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ারও একান্ত অনেক কারণ থাকে। কিছু কারণ একান্তই নিজস্ব, কিছু কারণ সামাজিক, আর্থিক বা বাইরের। মেজাজ গরম, ভালো-মন্দ, উগ্রতা একটা সম্পর্কে দুজনের মধ্যেই থাকে। কষ্টের মুহূর্তও দুদিকেই থাকে।
‘খারাপ সময়ে কেউ একলা আসমানে তাকায় থাকে না, দুজনই তাকায়। ব্যথা একদিকে হয় না, আলাদা হলে দুদিকেই ব্যথা থাকে। তবু সব সময়ই চেয়েছি যে, বিপরীতের মানুষটার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সবার কাছে স্বাভাবিকভাবেই উপস্থাপন করতে। অভিযোগের অনেক কথা থাকলেও আমার ক্ষেত্রে এক কথায় বললে- বনিবনা হয়নি, অথবা সময়ের টানে নিজেদের নিজেরা হারিয়ে ফেলেছিলাম- এগুলো বলেই সবাইকে উত্তর দিয়ে আসছিলাম এত দিন।
‘অভিযোগ দুইদিকেই থাকে, কেউই সন্নাসী লেভেলে থাকি না আমরা। দিনের পর দিন কারও আসমানসমান অভিযোগ থাকলে, আরেক দিকে পাহাড়সমান থাকারই কথা। অভিযোগের পুঁজি করে নিজেকে সাধু সাজিয়ে ভিকটিম হিসেবে প্রকাশ করা অনেকের অভ্যাস হতে পারে। তবে এই পথে এখনও যেতে পারিনি।’
শ্রদ্ধাশীলতাকে খুব বড় একটা বিষয় মনে করেন অপু। তিনি মনে করেন, একেকজনের পার্সপেক্টিভ থেকে যার যার কষ্ট বা দুঃখের আলাদা আলাদা ভার্সন থাকে। তাদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
ঘটনাটা শুরু কীভাবে, হলো কীভাবে, ভাঙলো কীভাবে- এটা দুই থেকেই জানা দরকার, তা না হলে একদিককে দোষী মনেই হতে পারে- মনে করেন অপু।
তিনি লেখেন, “রাগের মাথায় উত্তেজিত হয়ে যাওয়ার গল্প বলতে গেলে হয়তো প্রতিটি কাপলেরই লিঙ্গ নির্বিশেষে আজ ‘মি-টু স্ট্যাটাস’ দিতে হবে!”
নিজেকে ভিকটিমের মতো উপস্থাপন করে বিভ্রান্তিমূলক মতবাদ আসলেই দুঃখজনক উল্লেখ করে অপু লেখেন, ‘কেউ যদি সহজেই হাজার হাজার মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে, তারও উচিত সাবলীল এবং সৃষ্টিশীল গঠনমূলক কথায় নিজের ইমেজকে বিকাশ করা। ইনফ্লুয়েন্সার আসলে যে কী- এটা হয়তো অনেকেই বুঝতে চান না!’
নিজেকে সান্ত্বনা দেয়ার কথা জানিয়ে অপু লেখেন, ‘যাই হোক, গুজবের মতো একশ্রেণির মানুষ উহাই অনুসরণ করে যাবেন আর ইনবক্সে গালি দিয়ে যাবেন। কিন্তু যাচ্ছেতাই কমেন্ট/স্ট্যাটাস দিয়ে নিজেও রসিকতার পাত্র হয়ে লাভ নেই, আর অন্যকেও হাসির মাঝে ফেলে লাভ নেই। তবুও নিজেকে প্রায়ই এটা বলেই সান্ত্বনা দিই যে- হয়তো বিপরীতের মানুষটি অশান্তিতে আছে দেখেই এমন মনোভাব পোষণ করছে। নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে নিজেই অশান্তিতে থাকলে তখন অনেকেই চেষ্টা করেন বাকি মানুষটাকেও ছোট প্রমাণ করতে। প্রায় সময়ই আমরা অশান্তিতে থাকলে নিজেদের বেসামাল করে কথা বলেই ফেলি। অন্য কেউ ভালো থাকলে আবার টেনে নামানোর চেষ্টাও হয়তো করেন কেউ।’
অপু তার লেখায় জানান, এখন তিনি অনেক শান্তিতে আছেন, পরিবার নিয়ে সুস্থ আছেন এবং শান্তির ঘুমও হয় রাতে।