পারিবারিক সহিংতার শিকার ঢাবি শিক্ষার্থী এলমার মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখছেন অনেকে। তাদের লেখায় উঠে আসছে সমাজে নারীর অবস্থান ও নারীর প্রতি পুরুষের-স্বামীর-শ্বশুরবাড়ির মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি।
সংগীতশিল্পী ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক লোপা হোসাইন বুধবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দেন।
সেই স্ট্যাটাসের কিছু অংশ এ রকম- ‘সহ্য করতে না পেরে ডিভোর্স দিলে কত না গালি খেত এলমা মেয়েটা। সহ্য করতে করতে মরে গেল বলেই না এখন আমরা মায়াকান্না কাঁদছি...’
লোপার এ স্ট্যাটাসটি বুধবারেই নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। সেখানে তিনি তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া পারিবারিক সহিংসতার কথা বলেন।
তিনি লেখেন, ‘মৃত মেয়েটার ছবি দেখার পর বারবার আমি দেড়-দুই বছর পেছনে ফিরে যাচ্ছিলাম। মনে পড়ছে কীভাবে আমি দেবী সিনেমার পুরো প্রমোশন ভাঙা হাত নিয়ে করেছি। যখন কেউ জানতে চেয়েছে কী হয়েছে? বলেছিলাম সিঁড়ি থেকে পড়ে ব্যথা পেয়েছি!’
তিনি আরও লেখেন, ‘আমার সাহস ছিল না সবাইকে বলার যে কীভাবে ব্যথা পেয়েছি! কারণ আমি জানতাম এই মানুষটার সঙ্গেই থাকতে হবে, নইলে মানুষ কী বলবে! আমার মা সমাজে মুখ দেখাবে কীভাবে! আমার দুই বোন যে স্বপ্ন নিয়ে এত আয়োজনের প্ল্যান করছে তাদের কী জবাব দেব!
‘কাবিনের তিন মাস না যেতেই এতকিছু! নিশ্চয়ই সমস্যা আমারই! আমি এটা ভেবে দিনের পর দিন জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে, রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি! বারবার ভেবেছি কিছু হলে সবাই আমাকেই খারাপ বলবে! কিন্তু আমি খুব সৌভাগ্যবান যে আমার মা আমার সবচেয়ে বড় সাপোর্ট হয়ে দাঁড়িয়েছেন! সাহস দিয়েছেন! বুঝিয়েছেন, মানুষ কী বলে তার চেয়ে নিজের ভালো থাকা আরও অনেক জরুরি! জোর করে বিয়ে টিকিয়ে রাখার চেয়ে বেঁচে থাকা আরও জরুরি!!!’
এ স্ট্যাটাস দেয়ার পর বৃহস্পতিবার আরও একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন শবনম ফারিয়া। সেই লেখা তিনি শুরু করেছেন- ‘আমার মনে হয় বিষয়টা পরিষ্কার করে বলা দরকার’- লাইন দিয়ে।
এরপর তিনি শুরু করেন এভাবে- ‘কারও ইমেজ নষ্ট করার জন্য বা কোনো ধরনের মনোযোগ নেয়া আমার ইচ্ছা না। আমার আগের পোস্টটি লেখার কারণ সমাজের দিকে আঙুল তোলা।’
বিয়েকে একটা চমৎকার বিষয় উল্লেখ করে শবনম ফারিয়া লেখেন, ‘আমরা সব সময় বিয়ে বিচ্ছেদ নিরুৎসাহিত করি। এমনকি যখন আমার কোনো বন্ধু এসে ডিভোর্সের কথা বলে, আমি তাদের প্রথম যেটা বলি সেটা হলো- সময় নাও।’
শবনম ফারিয়া যুক্তি উপস্থাপন করে আরও লেখেন, ‘কেউ মারা গেলে আমাদের সমাজ কাঁদে! কিন্তু কারও যখন বিয়ে বিচ্ছেদ হয়, তার কারণ না জানার আগেই সমাজ এটিকে নারীর ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করে; মনে করে সে নারী যথেষ্ট আপস করতে পারেনি। তারা নারীর দোষগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। তারা নারীটির চরিত্রের শংসাপত্র দেয়, আর কী না করে! তখন আমরা সবাই হাসি।’
আগের দেয়া স্ট্যাটাসটিকে ইঙ্গিত করে ফারিয়া লেখেন, ‘গল্পটি ভাগ করা আমার জন্য সহজ ছিল না। আর আমার যদি কাউকে দোষারোপ করার উদ্দেশ্য থাকত, আমি তা অনেক আগেই করতে পারতাম।’
শেষে শবনম ফারিয়া লেখেন, “আমি এটাও দেখেছি কীভাবে লোকেরা কয়েন ওল্টানোর মতো আমার দিকে আঙুল তুলেছে! এই জন্যই আমরা এত পারিবারিক সহিংসতা দেখি!
‘এ সমাজ পুরুষকে মহিমান্বিত করে এবং নারীকে লজ্জা দিতে ভালোবাসে!
‘মরলে মানুষ দুঃখ পায়!
নিজেকে বাঁচানোর জন্য ডিভোর্স দিলে বলে, ‘তুমি খারাপ’।”