বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাসন রাজারে বাউলা কে বানাইলো রে...

  •    
  • ৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ১০:১০

সুনামগঞ্জের পরিচিতিও হয়ে উঠেছে ‘হাসন রাজার শহর’ হিসেবে। তবে নিজ শহরেই হাসন রাজার মৃত্যুবার্ষিকীতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নেই কোনো আয়োজন। এতে ক্ষুব্ধ সংস্কৃতিকর্মীরা।

নামের সঙ্গে যুক্ত ‘রাজা’। উত্তরাধিকার সূত্রে ছিলেন জমিদার। কিন্তু কর্মে ও চিন্তায় ছিলেন আপাদমস্তক এক বাউল।

তিনি হাসন রাজা। নিজের কাছেই যার জিজ্ঞাসা ছিল- বাউলা কে বানাইলোরে/ হাসন রাজারে বাউলা কে বানাইলো রে।

বাংলা গানের এই খেয়ালি রাজার ৯৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯২২ সালের ৬ ডিসেম্বর মৃত্যু হয় তার। আর জন্মেছিলেন ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জের লক্ষণশ্রীতে।

সুনামগঞ্জের তাই পরিচিতিও হয়ে উঠেছে ‘হাসন রাজার শহর’ হিসেবে। তবে নিজ শহরেই হাসন রাজার মৃত্যুবার্ষিকীতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নেই কোনো আয়োজন। এতে ক্ষুব্ধ সংস্কৃতিকর্মীরা।

গানে গানে প্রেম, বিরহ, জীবনদর্শন, আধ্যাতিকতার কথা বলে গেছেন হাসন রাজা। গানকে তিনি নিয়েছিলেন সাধনা হিসেবে। বাংলা গানের যে মরমী ধারা, যুগের পর যুগ ধরে সংগীতপিপাসুদের তৃষ্ণা মিটিয়ে চলছে আর জিজ্ঞাসু করে তুলছে, সেই ধারার অন্যতম সাধক পুরুষ হাসন রাজা। যদিও গানে গানে তিনি নিজের সম্পর্কে বলে গেছেন- ‘আমি কিছু নয় রে, আমি কিছু নয়’।

নিজেকে ‘কিছু নয়’ বলে যাওয়া হাসন রাজা মৃত্যুর ৯৯ বছর পরও প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তার করে বাংলার মাটিগন্ধা গান আর শেকড়ের সংস্কৃতিতে। জীবদ্দশায় প্রায় ২০০ গান লিখে গেছেন তিনি, যা আজও ঘুরে বেড়ায় লোকের মুখে মুখে। গীত হয় নানা শিল্পীর কণ্ঠে।

তবে হাসন রাজার সৃষ্টিকে সংরক্ষণ আর তার সংগীতের শুদ্ধ প্রচারের জন্যও এখন পর্যন্ত নেই তেমন কোনো উদ্যোগ। দীর্ঘদিন ধরে হাসন রাজার নামে একটি একাডেমি গঠনের দাবি জানানো হলেও তা থেকে গেছে উপেক্ষিতই।

সুনামগঞ্জ জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হাসন রাজাকে নিয়ে আমাদের চর্চা দিন দিন কমে যাচ্ছে আর সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ না নেয়া হলে আগামীতে এটি হারিয়ে যাবে। এ ছাড়া একটি হাসন রাজা একাডেমি যদি তৈরি করা হয় এবং সেখানে হাসন রাজার গানগুলো যদি শুদ্ধরূপে গাওয়ানো হয় তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও তার গানের সুর ও কথাগুলোর সঠিক ধারণা পাবে।

হাসন রাজার নামে একটি একাডেমি গড়ার উদ্যোগ স্বাধীনতার পরপরই নেয়া হয়েছিল জানিয়ে সাংস্কৃতিক কর্মী মলয় চক্রবর্তী রাজু বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই সময়েই হাসন রাজা একাডেমি তৈরির জন্য ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে অনেক দৌড়াদৌড়ি করার পর হাসন রাজা একাডেমি তৈরির জন্য মন্ত্রণালয় থেকে টাকা এলেও সেটিকে একটি মহল শিল্পকলা একাডেমি নামকরণ করে নেয়।

তিনি বলেন, ইউনিসকো হাসন রাজা চর্চার ওপর কিছু টাকা দিয়েছিল, সেই টাকা দিয়েই আমরা হাসন রাজার শতাধিক গান আবারও নতুন করে গাওয়া হয় এবং হাসন রাজার প্রপৌত্র সামারীন দেওয়ান হাসন জীবনী ও গানের দুটি বই লেখেন। তবে সরকারি উদ্যোগে হাসন রাজার সৃষ্টিকর্ম সংরক্ষণ ও প্রচারে তেমন উদ্যোগ নেই।

মলয় চক্রবর্তী আরও বলেন, সুনামগঞ্জে হাসন রাজার মৃত্যুবার্ষিকী পালন হয় না এটি দুঃখের বিষয়। তবে আমরা তার জন্মশতবার্ষিকী বড় করে আয়োজন করব।

হাসন রাজা জন্ম ও মৃত্যবার্ষিকী উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী বলেন, হাসন রাজার নামে সুনামগঞ্জ জেলার পরিচিতি গড়ে উঠলেও এখানে তার সৃষ্টিকর্ম সংরক্ষণ ও চর্চার কোনো উদ্যোগ নেই। তার জীবনী, ইতিহাস ও গানগুলো ধরে রাখতে হলেও হাসন রাজাকে নিয়ে চর্চা করার জন্য একটি একাডেমির দরকার।

সরকারিভাবে মৃত্যুবার্ষিকীতে কোনো আয়োজন নেই জানিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা আহমেদ মঞ্জুরুল চৌধুরী বলেন, ৬ ডিসেম্বর কোনো আয়োজন নেই, তবে সামনে একটি উৎসব আছে ১১-১২ জানুয়ারি। সেখানে আমরা তাকে স্মরণ করব।

রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ না থাকলে পারিবারিক উদ্যোগে সুনামগঞ্জে গড়ে তোলা হয়েছে হাসন রাজা স্মৃতি জাদুঘর। সেখানে সংরক্ষিত তার স্মৃতিগুলো দেখতে অনেকেই আসেন দূর-দূরান্ত থেকে।

আর তার গান তো ছড়িয়ে আছে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে। যার কথা ও সুর সংসারি মানুষের মধ্যেও আচমকা জাগিয়ে তুলে বাউলা মন। আপন মনেই গেয়ে ওঠে- ‘পরের জায়গা পরের জমি/ ঘর বানাইয়া আমি রই/ আমি তো সেই ঘরের মালিক নই।’

এ বিভাগের আরো খবর